দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জাতীয় পর্যায়ে গণটিকাদান কর্মসূচির আওতায় প্রয়োগ করা হচ্ছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন। ভারতের সিরাম ইনস্টিউটে তৈরি কোভিশিল্ড নামের এই ভ্যাকসিনের দুই ডোজ গ্রহণের পরে গ্রহীতাদের মাঝে তৈরি হচ্ছে শতভাগ অ্যান্টিবডি। তবে ভ্যাকসিন নেওয়া পুরুষদের চেয়ে নারীদের শরীরে বেশি অ্যান্টিবডি পাওয়া যাচ্ছে।
সর্বমোট ৫০০ জন ভ্যাকসিন গ্রহীতার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের পরে অ্যালাইজা পদ্ধতিতে এই অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয় রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরে মানবশরীরে কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য এই গবেষণাটি করেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক। ৩৬০ জন পুরুষ ও ১৪০ জন নারীর প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ প্রক্রিয়ার মধ্যে এই গবেষণাটি করা হয়।
ডা. আশরাফুল হক বলেন, ‘ভ্যাকসিন গ্রহণের আগে আমরা প্রথমে ৫০০ জনের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করি। পরবর্তীতে প্রথম ডোজ দেওয়ার পর ফের সেই ৫০০ জনের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়। আবার দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও তাদের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়।’
তিনি বলেন, তিনবারের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সবার মাঝেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে যা মানুষকে করোনা থেকে সুরক্ষা দেবে। তবে কেউ আক্রান্ত হবেন না এমনটা কোনো বৈজ্ঞানিক সূত্র দিয়ে বলার সুযোগ নেই। কিন্তু সংক্রমণের মাত্রা অনেকটা কম হবে।
তিনি আরও বলেন, ভ্যাকসিন গ্রহণের পর একটা নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলে মানুষের মাঝে এই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এমন অবস্থায় যদি কারও মাঝে সংক্রমণ শনাক্তও হয়ে থাকে, তবে সেটির মাত্রা কম হবে। অর্থাৎ মৃত্যুঝুঁকি কিন্তু অনেকেরই কমে আসবে।
এদিকে দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর থেকে মঙ্গলবার (২৫ মে) পর্যন্ত টিকা দেওয়া হয়েছে মোট ৯৯ লাখ ৪ হাজার ৩১ ডোজ। এর পুরোটাই দেওয়া হয়েছে অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকার ফর্মুলায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ড টিকা। এখনও পর্যন্ত দেশে কোভিশিল্ড টিকা এসেছে এক কোটি দুই লাখ ডোজ। সেই অনুযায়ী কোভিশিল্ডের অবশিষ্ট মজুত আছে আর মাত্র দুই লাখ ৯৫ হাজার ৯৬৯ ডোজ।
মঙ্গলবার (২৫ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো টিকাদান বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানান যায়। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, এ পর্যন্ত টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার একজন। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪০ লাখ ৮৪ হাজার ৩০ জন। এর মধ্যে মঙ্গলবার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৩৩ হাজার ৬৫৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাঠানো তথ্য থেকে আরও জানা যায়, প্রথম ডোজ গ্রহীতা ৫৮ লাখ ২০ হাজার একজনের মধ্যে ১৪ লাখের বেশি মানুষের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে সংকট। এদের সবাইকেই অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। কেননা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনও দুই কোম্পানির দুই ডোজের টিকা গ্রহণের কোনও সিদ্ধান্ত দেয়নি।
উল্লেখ্য, দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয়ভাবে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলে। টিকা সংকট দেখা দেওয়ায় ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ ঘোষণা করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এরপর ২ মে’র পর থেকে টিকার জন্য নিবন্ধন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৫৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ