চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এক সপ্তাহের জন্য বিশেষ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ তার কার্যালয়ে প্রেস বিফিংয়ে এ ঘোষণা দেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী হার লক্ষ করা যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে করোনা সংক্রমণের হার ৫০ শতাংশের বেশি। পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনাক্রমে আজ দিবাগত রাত ১২টা থেকে লকডাউন দেওয়া হয়েছে।
লকডাউনের সময় সব দোকানপাট ও যানচলাচল বন্ধ থাকবে। রাজশাহী ও নওগাঁ থেকে কোনো যানবাহন চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবেশ করতে পারবে না, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকেও কোনো যানবাহন জেলার বাইরে যাবে না। রোগী ও অন্য জরুরি সেবাদানকারীর ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না।
জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ গণমাধ্যমকে বলেন, আমের বাজার বসবে। তবে সেটা ছড়িয়ে–ছিটিয়ে বসবে। আম পরিবহনের ক্ষেত্রে বাগান থেকে আম ট্রাকে করে পরিবহন করা যাবে, সেই সঙ্গে কুরিয়ারের মাধ্যমে আম পরিবহন করা যাবে। কলকারখানা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। শ্রমিকদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া করতে হবে।
জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলে বিধ্বংসী রূপ নিয়েছে মহামারি করোনা। রোববার (২৩ মে) বিকেল থেকে সোমবার (২৪ মে) বেলা ১১টা পর্যন্ত শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই মারা গেছে ১০ জন। এর মধ্যে ছয়জনেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের। তারা সবাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, মৃতদের মধ্যে আইসিইউতে চারজন, ১৬নং ওয়ার্ডে তিনজন, ২৯নং ওয়ার্ডে একজন, ২২নং ওয়ার্ডে দুজন মারা গেছেন। মৃতদের ছয়জনেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা। এছাড়া সোমবার দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট ও আইসিউতে ১৬৮ জন করোনা রোগী ভর্তি আছেন বলেও জানান তিনি।
ডা. সাইফুল ফেরদৌস আরও জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। আক্রান্তদের জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার কিছু অংশে করোনা ব্যাপক আকার নিয়েছে। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
সংক্রমণ বাড়ার কারণ কী?
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাটি ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ার কারণে সেখানে সংক্রমণ বেড়ে থাকতে পারে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যেহেতু সংক্রমণের হার অনেক বেশি, তাই এটা একটা কারণ হতে পারে, বলেন তিনি। তবে সেখানে সংক্রমণ বাড়ার মূল কারণ জানতে তারা তদন্ত শুরু করেছেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ সন্দেহ করছেন, জেলাটি থেকে ধান কাটার প্রচুর শ্রমিক দেশের অন্য জেলাগুলোতে গেছে এবং ঈদের আগে আবার ফিরেছে। এটা একটা কারণ হতে পারে।
এছাড়া, জেলাটিতে অনেক মানুষ রয়েছে যারা নির্মাণ কাজের শ্রমিক হিসেবে কাজ করে এবং তারা দেশের অন্য জেলায় যাতায়াত করে থাকে। সেই সাথে ঈদে ঢাকা থেকে অনেক মানুষ গ্রামে ফিরে যাওয়ার কারণেও সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানান হাফিজ।
ভারতীয় ভেরিয়ান্টটি এই সংক্রমণের উর্ধ্বমুখীতার পেছনে দায়ী হওয়ার আশঙ্কা আছে কিনা এমন প্রশ্নে জেলা প্রশাসক হাফিজ জানান, সন্দেহ তো আছেই। তবে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
২৪ ঘণ্টায় ২৫ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৪৪১
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৪০১ জনে। এ সময় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৪১ জন। এতে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭ লাখ ৯০ হাজার ৫২১ জনে।
সোমবার (২৪ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্ত হয়েছেন ৮৩৪ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৩১ হাজার ৫৩১ জন।
২৪ ঘণ্টায় ১৮ হাজার ৩৩৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা করা হয়েছে ১৭ হাজার ৬৮৩টি। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। দেশে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫৮ লাখ ৩৮ হাজার ২৯৫টি। মোট পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২৫ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৬ জন। এছাড়া চট্টগ্রামে ৬, রাজশাহীতে ৩, খুলনায় ৭ এবং রংপুরে ৩ জন মারা গেছেন।
২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ২১ জন পুরুষ এবং ৪ জন নারী। এদের দুই জন হাসপাতালে মারা গেছেন। এ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মোট মারা যাওয়া ১২ হাজার ৪০১ জনের মধ্যে পুরুষ ৮ হাজার ৯৬৯ জন এবং নারী ৩ হাজার ৪৩২ জন।
বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ১৩ জনেরই বয়স ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছরের ৭ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ৪ জন এবং ২১ থেকে ৩০ বছরের ১ জন। রোববার (২৩ মে) তার আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত আরও ২৮ জনের মৃত্যু হয়। এ সময়ে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন ১ হাজার ৩৫৪ জন ও করোনামুক্ত হন ৮৯৯ জন।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭৩০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ