জার্মানিতে প্রতিবছর সাড়ে চার কোটির বেশি বাচ্চা মোরগ কেটে বা গ্যাস দিয়ে মেরে ফেলা হয়৷ কারণ, সেগুলো ডিম উৎপাদন করতে পারে না৷ তাছাড়া অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক না হওয়ায় অনেক দেশেই জন্মের পরপরই মোরগ ছানাগুলোকে মেরে ফেলা হয়৷ এবার গণহারে বাচ্চা মোরগ ছানা হত্যা বন্ধ করতে আইন পাস হলো জার্মানিতে৷
বৃহস্পতিবার জার্মান সংসদ বুন্ডেসটাগ ঘোষণা করেছে, জার্মানিতে গণহারে মুরগির পুরুষ বাচ্চা মেরে ফেলা নিষিদ্ধ আইন আগামী ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে৷ মুরগি চাষ প্রক্রিয়া অমানবিক, অনৈতিক বলে দীর্ঘদিন ধরেই নানা সমালোচনা হচ্ছিল৷ পুরুষ মুরগি ডিম দেয় না, মাংসের জন্যও সেরা পছন্দ নয়, ফলে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক না হওয়ায় মুরগির খামারগুলোতে পুরুষ বাচ্চাগুলোকে জন্মের পরপরই হত্যা করা হয়ে থাকে৷
গণহারে মুরগির পুরুষ বাচ্চা হত্যা নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন জার্মানির কৃষিমন্ত্রী ইউলিয়া ক্ল্যোকনার৷ বাচ্চা মোরগ হত্যা করাকে ‘অমানবিক’ ও গ্রহণযোগ্য নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন৷ কৃষকদের অর্থনৈতিক স্বার্থে প্রাণী সুরক্ষাকে গুরুত্ব না দেয়ার বিষয়ে ২০১৯ সালে জার্মান প্রশাসনিক আদালত এক রায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে৷
মুরগির পুরুষ ছানার জন্ম রোধ করতে জার্মান কৃষকদের এখন প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে, যাতে ভ্রুণেই লিঙ্গ শনাক্ত করা সম্ভব হয়৷ প্রতি বছর শুধু জার্মানিতেই মুরগির প্রায় সাড়ে চার কোটি পুরুষ বাচ্চাকে হত্যা করা হয়৷ প্রাণী সুরক্ষা কর্মকর্তারা একে ‘চিক শ্রেডিং’ বা মুরগির ছানা জবাইবলে অভিহিত করেছেন৷
গবেষণায় অব্যবহৃত লাখ লাখ প্রাণী হত্যা
প্রতিবছর জার্মানিতেই লাখ লাখ প্রাণী গবেষণার জন্য জন্ম দেয়া হয় এবং পরবর্তীতে সেগুলো ব্যবহার না করেই আবার মেরে ফেলা হয়। ২০২০ সালের এক সরকারি প্রতিবেদনে জানা গিয়েছেলো এই তথ্য।
দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে জার্মানিতে ৩৯ লাখ প্রাণী হত্যা করা হয়েছে। গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি এক কোটি ছাব্বিশ লাখ। এছাড়াও ২৮ লাখ প্রাণী গবেষণাগারে হত্যা করা হয়েছিল।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে জার্মানিতে গবেষণার কাজে সবচেয়ে বেশি প্রাণী উৎপাদন করা হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেগুলোর অধিকাংশই ছিল ছোট ইঁদুর। এছাড়া ২ লাখ ৫৫ হাজার বড় ইঁদুর, ১ লাখ ৪০ হাজার মাছ, ৩ হাজার ৫শ’ বানর, ৩ হাজার ৩শ’ কুকুর এবং ৭১৮টি বিড়ালও ছিল।
এসব প্রাণীর ৫০ শতাংশ বিভিন্ন গবেষণামূলক পরীক্ষা-নিরীক্ষায়, ২৭ শতাংশ নতুন ঔষধ পরীক্ষায় এবং ১৫ শতাংশ সুনির্দিষ্ট কোনো রোগ নিয়ে গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে। জার্মান প্রাণী আইন সংরক্ষণ সংগঠন সবুজ দলের প্রাণী সুরক্ষা নীতির প্রধান রেনেটা ক্যুনাস্ট দাবি করেছেন, গবেষণায় ব্যবহৃত প্রাণী হত্যার সংখ্যা প্রকাশের মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র আড়াল করতে চেয়েছে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সরকার।
উল্লেখ্য, জার্মানিতে প্রসাধন শিল্পে প্রাণী নিয়ে গবেষণা ১৯৯৮ সালে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নে ২০০৪ সাল থেকে এ ধরনের গবেষণা নিষিদ্ধ।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭৪৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ