নেপালের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হওয়ায় নেপালের পার্লামেন্ট ভেঙে দিলেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবি ভাণ্ডারি। সেই সঙ্গে সে দেশে সাধারণ নির্বাচনের সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছেন তিনি। ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, আগামী নভেম্বরে নেপালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এক বিবৃতিতে বিদ্যা দেবী ভান্ডারি উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি কিংবা বিরোধী নেতা শের বাহাদুর দেউবা— কেউই পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারেননি। এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য ২১ মে পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। সে সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। আগামী ১২ নভেম্বর প্রথম ধাপের এবং ১৯ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান কে পি শর্মা ওলির মন্ত্রিসভার সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রেসিডেন্টের দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পরামর্শে প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবি ভান্ডারি দেশটির সংবিধানের ৭৬ (৭) ধারা অনুযায়ী প্রতিনিধি পরিষদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন এবং আগামী ১২ ও ১৯ নভেম্বর মধ্যবর্তী নির্বাচনের আহ্বান জানান।’
নেপালের সংবিধানের ৭৬ (৭) ধারা অনুযায়ী, দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন আহ্বান করে থাকেন। ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী আস্থা ভোট অর্জনে বা নতুন কাউকে দায়িত্ব দিতে ব্যর্থ হলে এটি করা হয়ে থাকে।
ওলি পার্লামেন্ট বিলুপ্তি ঘোষণার পরামর্শ দেওয়ার ব্যাপারে শুক্রবার রাতে তার মন্ত্রিপরিষদের জরুরি বৈঠক আহ্বান করেন এবং পরে তিনি প্রেসিডেন্টকে এটি ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দেন।
নেপালে রাজনৈতিক সংকটের শুরু গত বছরে। গত ২০ ডিসেম্বর দেশটির প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি হঠাৎ করে দেশটির নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ভেঙে দিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ঘোষণা দেন।
কাঠমান্ডু পোস্টের খবরে বলা হয়, এরপর দেশটির সুপ্রিম কোর্ট এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। আদালত বলেন, এই সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক।
সম্প্রতি সংসদের আস্থাভোটে পরাজিত হয়েছিলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। তারপর থেকেই নেপালে রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলছে। পরবর্তী সরকার গঠন নিয়ে কৌশল সাজাচ্ছিল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। এই পরিস্থিতিতে নতুন সরকার গড়তে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন নেপালি কংগ্রেসের নেতা শের বাহাদুর দেউবা। কিন্তু নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ‘প্রচণ্ড’ ওরফে পুষ্পকমল দহলের সমর্থন পেলেও জনতা সমাজবাদী পার্টির সমর্থন পেতে ব্যর্থ হন তিনি। যার কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ হন তিনি।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, নেপালের কেয়ারটেকার প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি কয়েকদিন আগে পার্লামেন্টে আস্থাভোটে পরাজিত হন। এরপর বিরোধী নেতা শের বাহাদুর দেউবাকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করে শুক্রবারের মধ্যে সরকার গঠনের সময় দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী। তবে প্রেসিডেন্টের দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শের বাহাদুর দেউবার নেতৃত্বে নেপালি কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়।
নেপালের রাজনীতিতে অস্থিরতা চলছে বেশ কিছুদিন ধরেই। সম্প্রতি বিরোধী দলনেতা শের বাহাদুর দেউজাকে পিছনে ফেলে নেপালের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন ওলি। কিন্তু কোভিড মোকাবিলা, দেশের অর্থনীতি সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যর্থতার জন্য তার উপর চাপ বাড়ছিল। নানা ক্ষেত্রেই অসন্তোষের শিকার হচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছিল তাতে সরকার ভেঙে পড়ার সম্ভাবনাই তৈরি হয়েছিল।
কেপি শর্মা ওলিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বহাল রাখা হলে আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল নেপালের সমস্ত রাজনৈতিক দল। ওলির নিজস্ব দল কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপালও একই সুপারিশ করেছিল। তারপরেই গত রাতে আসে রাষ্ট্রপতির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
৩৯ মাস আগে নেপালের প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণ করেছিলেন কেপি শর্মা ওলি। পাঁচ বছর তার পদের মেয়াদ ছিল। কিন্তু নিজের দলের মধ্যেই তার ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ বেড়েছে।
ফলে প্রেসিডেন্টে দফতর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। তবে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা কে পি শর্মা ওলিকেই কেয়ারটেকার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালনের নির্দেশ দেন বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী।
এদিকে নেপালে প্রতিদিনই করোনা মহামারির অবনতি হচ্ছে। পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ফলে করোনা মহামারির মধ্যেই দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। আগামী নভেম্বর মাসের ১২ থেকে ১৮ তারিখের মধ্যে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৩০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ