চলতি বছর জুন মাসে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ২০২২ সালের জুন মাসে ২৫,৫৬৬ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে, যা ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৪,৯৪২ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে এবং ২৪,৪০৬ মেগাওয়াট স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, সৌরবিদ্যুৎ, বিল (জলাভূমি), চর, পাহাড়ি ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে আলোকিত করেছে, কারণ সরকার সবাইকে বিদ্যুতের আওতায় আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, ‘দুর্গম পাহাড়ি এলাকা ও চর এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। যে সব এলাকায় গ্রিড সুবিধা নেই সেখানে জায়গায় জায়গায় সাবমেরিন ক্যাবল বসানো হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য। কিছু এলাকা খুব প্রত্যন্ত ছিল, তাই সে সব এলাকার মানুষকে সোলার বিদ্যুৎ দেয়া হয়েছে। এভাবেই বাংলাদেশের শতভাগ জনগনকে বিদ্যুতের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।’
বিদ্যূৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অফিস সুত্রে জানা যায, ২০০৯ সালে জনসংখ্যার মাত্র ৪৭ শতাংশ বিদ্যুতের আওতায় ছিল। মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ২২০ কিলোওয়াট থেকে ৫৬০ কিলোওয়াট-এ উন্নীত হয়েছে এবং বিদ্যুতের বিতরণ ক্ষতি ৫.৮৫% কমেছে।
তিনি বলেন, দেশে ৪৯২টি উপজেলা রয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ৪৬২টি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।
পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান-২০১৬ অনুযায়ী দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনের পথে হেঁটে চলেছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, আরইবি প্রত্যন্ত অঞ্চলের ১,০৫৯টি গ্রামকে বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে এসেছে। ফলে এ সব প্রত্যন্ত গ্রামের দুই লাখ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। এছাড়া ৯০টি স্থানে নদী পারাপারের লাইন এবং মোট ১৮২ কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবল লাইন বসাতে হয়েছে।
তবে এখন প্রশ্ন এই বিদ্যুৎ স্বাবলম্বিতা কোথায় গেল! কেন নেপাল থেকে বিদ্যুৎ নিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। যে নেপালের কাছে অর্থনীতিতে বাংলাদেশ ছিল আইডল—২০১৬ সালে এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট করে নেপালের অন্যতম প্রধান দৈনিক রিপাবলিকা। সেখানে বলা হয়, ‘এক দশক আগেও অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশ ছিল নেপালের চেয়েও খারাপ। আর এখন নেপালকে অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ। এক দশক ধরে বাংলাদেশের গড় জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি। দেশটি এখন স্বল্প আয়ের দেশের গণ্ডি পেরিয়ে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে। অথচ নেপাল এখনো সেই ১০ বছর আগের ঘরেই পড়ে আছে। একজন নেপালি গড়ে একজন বাংলাদেশির তুলনায় অর্ধেক আয় করে। বাংলাদেশের টাকা নেপালের মুদ্রার তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। এক দশক আগেও কর্মকর্তারা অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য একে অপরের দেশে সফর করতেন। আর এখন এই কাজটি কেবল নেপাল করে যাচ্ছে। নেপালের সরকারি কর্মকর্তারা বাংলাদেশে যাচ্ছেন শিক্ষাসফরে।’
এদিকে সম্প্রতি গোটা বিশ্ব যখন শ্রীলঙ্কা নিয়ে উদ্বিগ্ন, তখন নেপালের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ও গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়ে ওঠে। করোনায় পর্যটন খাতে ধস, বাণিজ্য ঘাটতি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে আগে থেকেই নাজুক পরিস্থিতি ছিল নেপালের অর্থনীতিতে।
ঋণ পরিশোধ ও আমদানি ব্যয় মেটাতে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেকটাই কমে যায়। বেড়ে যায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। সামাজিক অস্থিরতাও বাড়ছে নেপালে। সংকট মোকাবিলায় বিলাসবহুল পণ্য আমদানি সীমিত করে নেয় দেশটির সরকার।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছিলেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ শ্রীলঙ্কার মতো বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যেতে পারে নেপাল। তবে এবার সেই নেপালের কাছ থেকেই বিদ্যুৎ নিচ্ছে কথিত আইডল বাংলাদেশ।
নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারী বলেছেন, নেপাল এই মুহূর্তে বাংলাদেশকে ৪০-৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। তবে তাদের বিদ্যুৎ খাতে একটি মেগা প্রকল্প শেষ হওয়ার পরে এর পরিমাণ আরো বাড়বে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আজ মঙ্গলবার সকালে গণভবনে সাক্ষাৎকালে নেপালের রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন।
সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
করিম নেপালের রাষ্ট্রদূতকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘প্রকল্পটি সম্পন্ন করার পর নেপাল বাংলাদেশকে আরো বেশি বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হবে।’
ঘনশ্যাম ভান্ডারী বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা বন্দরকে তাদের রফতানির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে তার দেশের গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন। কারণ এ বন্দরটি বুড়িমারী বন্দরের চেয়ে নেপালের কাছাকাছি।
নেপাল বাংলাদেশকে বিশেষ দৃষ্টিতে দেখে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার দেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরো জোরদার করতে চায়।
শিক্ষা খাতে বাংলাদেশের সহযোগিতার প্রশংসা করে নেপালের রাষ্ট্রদূত বলেন, অনেক নেপালি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য এখানে পড়াশোনা করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে অভিনন্দন জানান এবং বাংলাদেশে এই দায়িত্ব পালনকালে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে নেপালের সহায়তার কথা স্মরণ করেন, যা তিনি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বিশেষ করে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও ভারতের মধ্যে কানেকটিভিটির ওপর জোর দেন।
তিনি বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
শেখ হাসিনা ‘মুজিববর্ষ’ কর্মসূচিতে নেপালের রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশে সফরের কথা স্মরণ করেন যা দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতি বাড়িয়েছিল
এ সময় অ্যাম্বাসেডর এ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস উপস্থিত ছিলেন।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯২০
আপনার মতামত জানানঃ