এখন স্মার্টফোন আমাদের জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। আর স্মার্টফোন মানে যে চিত্র আমাদের মাথায় ভেসে ওঠে তাতে সবার আগে যেটি আসে, তা হলো অ্যাপ। তবে শুধু স্মার্টফোন নয়, স্মার্ট ওয়াচ, স্মার্ট টিভির মতো ডিভাইসগুলোর জন্যও এখন হাজার হাজার অ্যাপ হাজির হয়েছে। এদিকে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা ১৬৭টি ভুয়া অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস অ্যাপের সন্ধান পেয়েছেন, যেগুলো ব্যবহার করে হ্যাকাররা ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। আর্থিক লেনদেন, ব্যাংকিং অথবা ক্রিপ্টোকারেন্সি সেবার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত এসব অ্যাপ ব্যবহার করত সাধারণ মানুষ।
বেশকিছু অ্যাপের সন্ধান পেয়েছেন, যেগুলো প্রায় একই রকমের। হ্যাকাররা ডেটিং সাইটের মাধ্যমে তাদের টার্গেট নির্ধারণ করত এবং ব্যবহারকারীদের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকিং অ্যাপ ডাউনলোড করার জন্য প্রভাবিত করত। আর এসব অ্যাপের আড়ালে থাকত টাকা চুরির পদ্ধতি।
কিছু অ্যাপে কাস্টমার সাপোর্ট চ্যাট অপশনও রয়েছে। বিশ্লেষকরা যখন এ চ্যাট অপশনের মাধ্যমে সাপোর্ট টিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন, তখন তারা প্রায় একই ধরনের রিপ্লাই পেয়েছিলেন। সেই সঙ্গে গবেষকরা ১৬৭টি ভুয়া লেনদেন ও ক্রিপ্টোকারেন্সি অ্যাপ সমৃদ্ধ সার্ভারের সন্ধানও পেয়েছেন। এ থেকে বোঝা যায় যে এ ধরনের কর্মকাণ্ড যেকোনো একটি গ্রুপ পরিচালনা করছে।
সফোসের সিনিয়র থ্রেট রিসার্চার জগদেশ চান্দ্রাইয়াহ বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানের অ্যাপের আড়ালে এসব ভুয়া অ্যাপ লুকানো থাকে। অন্যদিকে ডেটিং সাইটে ব্যবহারকারীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ মেসেজ আদান-প্রদানের মাধ্যমে তাদের ভুয়া অ্যাপ ইনস্টল করার জন্য প্রভাবিত করা হয়। এসব পদ্ধতির কারণে এ ভুয়া অ্যাপের কার্যক্রমকেও স্বাভাবিক মনে হয়েছে।
হ্যাকাররা ব্যবহারকারীদের লেনদেন ও অর্থ আয়ের লোভ দেখিয়ে ভুয়া ব্যাংকিং অ্যাপ ও ক্রিপ্টোকারেন্সি অ্যাপ ইনস্টল করতে বলত। ভুক্তভোগীরা যদি তাদের সেসব অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিতে চাইত অথবা অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিতে চাইত, তখন হ্যাকাররা সেসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিত।
ভুয়া অ্যাপ চেনার উপায়
আমাদের জেনে রাখা দরকার ভুয়া অ্যাপ ডাউনলোড করলে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যা অনেক সময় খুব নেতিবাচক একটা প্রভাব ফেলে আমাদের জীবনে। তাই জানতে হবে কিভাবে ভুয়া অ্যাপ চিহ্নিত করা যায়। সে পদ্ধতিগুলো জানা থাকলে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
ফোনে কোনো অ্যাপের দরকার হলে অফিসিয়াল অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। অফিসিয়াল অ্যাপ স্টোরগুলোতেও অনেক সময় ক্ষতিকারক অ্যাপ খুঁজে পাওয়া গেলেও কর্তৃপক্ষ সেগুলো খুব তাড়াতাড়ি সরিয়ে ফেলেন, ফলে আপনি ও আপনার ফোন সেখানে নিরাপদ।
অ্যাপ-এর বিবরণ জানতে হবে কোনো অ্যাপে প্রচুর বানান বা ব্যাকরণগত ভুল খুঁজে পেয়েছেন? তাহলে বুঝতে হবে এটি ভুয়া। কারণ, অ্যাপের মৌলিক বিবরণে এ ধরনের ভুল থাকা মানেই হলো সেই অ্যাপটি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
অ্যাপ ইনস্টলের আগে সাথে থাকা রিভিউগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করুন। যদি কোনো অ্যাপ ভুয়া হয়ে থাকে তবে নির্দিষ্ট কিছু রিভিউ এ কেউ না কেউ তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করবেনই।
তাই কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করার আগে অ্যাপটির বিষয়ে অন্যরা কি বলেছে তা দেখে নিতে ভুলবেন না। এতে আপনি নিশ্চিত থাকবেন একটি নিরাপদ অ্যাপ ব্যাবহারের ক্ষেত্রে। ডাউনলোডের সংখ্যাকেও বিবেচনা করুন। কোনো অ্যাপ আসল নাকি ভুয়া তা যাচাই করার এটি খুবই ভালো ওই অ্যাপটি এখন পর্যন্ত কতবার ডাউনলোড হয়েছে। যদি ডাউনলোডের সংখ্যা অনেক বেশি হয় তাহলে বুঝতে হবে এটি ভুয়া হওয়ার সম্ভবনা কম।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ