নেত্রকোনা মদন উপজেলায় প্রতিবেশীর ধর্ষণে জন্ম নেওয়া ৬ মাস বয়সী শিশুকে মেরে ফেলতে ধর্ষিতার বাড়িতে আসামিদের আক্রমণ করার অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরীর বসতঘরে দফায় দফায় হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে আসামিদের বিরুদ্ধে। বর্তমানে ওই নারী শিশুসন্তানসহ অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
রোববার (১৬ মে) রাতে উপজেলার মাঘান ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আসামিদের ভয়ে থানায় অভিযোগ করতে সাহস পাচ্ছে না ভুক্তভোগীর পরিবার।
জানা গেছে, ঘাটুয়া গ্রামের নয়ন তালুকদারের ছেলে রবি মিয়ার (২২) ধর্ষণে প্রতিবেশী লালচান মিয়ায় মেয়ে( ১৬) অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। অন্তঃসত্বা ওই কিশোরীর সন্তান প্রসব হওয়ার পর থেকে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় রবি মিয়াসহ ৪ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগীর বাবা লালচান মিয়া। পরে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ভুক্তভোগীর দুই ভগ্নিপতী তাদের বাড়ি ঘাটুয়া গ্রামে বেড়াতে আসলে তাদেরকে অভিযুক্ত রবি মিয়ার ছোট ভাই আরিফ, আল আমীনসহ কয়েকজন ১৬ মে রাতে গাল মন্দ করে। এক পর্যায়ে নয়ন তালুকদার, তার ছেলে আরিফসহ কয়েকজন ধারালো অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ভুক্তভোগীর বসত ঘরে অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় ধর্ষণের জন্ম শিশুটিকে খুন করার চেষ্টা করে আসামিরা।
ভুক্তভোগী কিশোরী বলেন, ’বিয়ের প্রলোভন দিয়ে রবি মিয়া আমাকে জোরপূর্বক একাধিকবার ধর্ষণ করে। এতে আমি অন্তঃসত্ত্বা হলে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। আমরা গরীব মানুষ। বিচারের আশায় মামলা করেছি। কিন্তু আসামি ও তাদের গোষ্ঠী প্রভাবশালী হওয়ায় টাকার বিনিময়ে সত্য ঘটনাকে মিথ্যা করার চেষ্টা চালাচ্ছে। মামলা করার পর থেকেই আসামিরা আমাদের পরিবারকে দফায় দফায় নির্যাতন করছে। টাকার বিনিময়ে ডাক্তারি ফরেনসিক ও ডিএনএ রিপোর্ট পরিবর্তন করেছে। রবিবার রাতে আমার সন্তানকে খুন করার জন্য আসামি নয়ন, তার ছেলে আরিফসহ কয়েকজন হামলা চালায়। তখন আমাদের বসত ঘর কুপিয়ে ভাঙচুর করে। আমরা ঘরের দরজা বন্ধ করে ডাক চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন এসে আমাদের রক্ষা করে।’
তিনি বলেন, বর্তমানে আমি তাদের ভয়ে নিজ বাড়ি ছেড়ে আমার ফুফুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। আসামিদের ভয়ে থানায় অভিযোগ করতে সাহস পাচ্ছি না। আজকে আমার বাবা থানায় অভিযোগ করবে। আমার জন্ম হওয়ার শিশুটির কী হবে? আমি কি এর ন্যয় বিচার পাব?”
এ বিষয়ে মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) ফেরদৌস আলম জানান, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, রবি মিয়ার সঙ্গে ওই কিশোরীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিনি ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের ফলে ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। পরে কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে ২০২০ সালের ৮ আগস্ট মদন থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্ত রবি মিয়াকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর মদন হাসপাতালে এক ছেলেসন্তান জন্ম দেয় ওই কিশোরী। আদালতের নির্দেশে কিশোরী, তার প্রসব হওয়া সন্তান ও অভিযুক্ত রবি মিয়ার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। এতে অভিযুক্ত রবি মিয়ার ফরেনসিক ডিএনএর সঙ্গে প্রসব হওয়া সন্তানের ডিএনএর মিল পাওয়া যায়নি বলে ডাক্তারি সার্টিফিকেটে উল্লেখ রয়েছে।
‘শিশুটির জৈবপিতা রবি মিয়া না’ উল্লেখ করে ২০২১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ধর্ষণ মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মদন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জসিম উদ্দিন। এতে অভিযুক্ত রবি মিয়া জেল থেকে ছাড়া পান। মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বাদী নারাজি দেয়ায় মামলাটি পুনরায় তদন্ত শুরু করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআই ইন্সপেক্টর ধনরাজ দাস বলেন, ‘ধর্ষণ মামলাটি তদন্ত করতে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। মামলাটি এখন তদন্তাধীন। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধর্ষণের শিকার কিশোরী ধর্ষণে জন্ম নেওয়া সন্তান নিয়ে একদিকে যেমন সামাজিকভাবে অনিরাপত্তাসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় ভুগছে, তার ওপর আসামিদের এহেন আক্রমণে ধর্ষিতাসহ তার পরিবার আরও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো উচিত বলে মনে করেন তারা।
তারা মনে করেন, ধর্ষিতার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ নিজেদের বাড়িতে নিরাপদে বসবাসের বিষয়টি প্রশাসনের নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে আসামিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে বলে দাবি জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬০১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ