ঈদ উপলক্ষে কর্মহীন মানুষদের সহায়তা (ভিজিএফ) কর্মসূচির আওতায় সরকারের বরাদ্দ দে’য়া টাকা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ খোকাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এছাড়াও নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে আছে চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ খোকার বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার ও ইউনিয়ন ট্যাগ অফিসার বাদী হয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিশ্বাস ভঙ্গ ক’রে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে মামলা দায়েরের কথা রয়েছে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।
উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইমতিয়াজ কবির গ্রেফতারে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে তাকে তার নিজ কার্যালয় থেকে আটক করা হয়।
ভিজিএফ’র টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ছয় হাজার ১৭৮ পরিবারের মধ্যে ৪৫০ টাকা ক’রে ২৭ লাখ ৮০ হাজার ১০০ টাকা এবং করোনাকালীন সরকারের বিশেষ সহায়তার অংশ হিসেবে ৬২৫ পরিবারের জন্য ৪০০ টাকা করে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। এর মধ্যে ৩ হাজার ২৮ পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা (১৩ লাখ ৬২ হাজার ৬০০ টাকা) বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ খোকার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরে জান্নাত রুমি জানান, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আগে থেকে কিছু অনিয়মের অভিযোগ ছিল। সম্প্রতি ঈদ উপলক্ষে ওই ইউনিয়নের কর্মহীন পরিবারগুলোর জন্য বরাদ্দ করা টাকা বিতরণের শেষ দিন ছিল গতকাল (বৃহস্পতিবার)। কিন্তু শেষ দিনে চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোর মধ্যে ৩ হাজার ২৮ পরিবারের টাকা বিতরণে ব্যর্থ হয়েছেন।
সূত্র মতে, চেয়ারম্যান ওই টাকা উত্তোলন করলেও তা বিতরণ না করে নিজ একাউন্টে রেখেছেন। সরকারি টাকা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ইউএনও।
অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যানের বক্তব্য কী ছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, তিনি (চেয়ারম্যান) কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। সরকারি বরাদ্দের টাকা বিতরণ না করে তিনি তো নিজ একাউন্টে রাখতে পারেন না। এজন্য তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বয়স্ক ও বিধবা ভাতার কার্ড নিয়ে অনিয়ম
এর আগে গত শনিবার (৮ মে) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিভিন্ন বরাদ্দ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেন ওই ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মমতাজ পারভীন।
মমতাজ পারভীন অভিযোগ ক’রে বলেন, ‘চেয়ারম্যান বয়স্ক ও বিধবা ভাতার কার্ড করে দে’য়ার কথা বলে ইউপি সদস্যদের কাছ থেকে তালিকা নেন এবং তার লোকজন দিয়ে তালিকা অনুযায়ী হতদরিদ্রদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন।’
‘দরিদ্রদের মধ্যে যারা টাকা দিতে পারেনি তাদেরকে বাদ দিয়ে তুলনামূলক সচ্ছলদের টাকার বিনিময়ে তিনি কার্ড করে দিয়েছেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ চেয়ারম্যানের কাছে তুলে ধরলে তিনি আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন এবং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাড়িয়ে দিতেন।’
গ্রামবাসীর অভিযোগ
এদিকে, চেয়ারম্যানকে আটকের খবর পেয়ে ভুক্তভোগীরা ইউনিয়ন পরিষদে ছুটে এসে চেয়ারম্যানের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখান।
গুনাইগাছ গ্রামের হতদরিদ্র রোমেলা বেওয়া (৫৬) জানান, ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফ’র টাকা দেওয়ার কথা বলে জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি নিয়েও কিছুই দেননি চেয়ারম্যান।
একই গ্রামের আখের আলী (৬৮) অভিযোগ করে বলেন, দাবিকৃত ঘুষের টাকা চেয়ারম্যানকে দিতে না পারায় তাকে বয়স্কভাতার কার্ড করে দেননি চেয়ারম্যান।
উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইমতিয়াজ কবির বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এজন্য তাকে আটক করা হয়েছে। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
এসডব্লিউ/এসএস/১২০৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ