মহামারি করোনা কারণে অর্থনীতি থেকে শুরু করে সব দিক থেকেই বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব।ঘুরে দাঁড়াতে চাইলেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, তৃতীয় ঢেউ এসে হানা দিচ্ছে।বাংলাদেশও এখন করোনার দ্বিতীয় আঘাতের শিকার হয়েছে।কিন্তু এরমধ্যেই আশা জাগাচ্ছে দেশের অর্থনীতি।প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে রেকর্ড গড়েছে, যা স্বাধীন বাংলাদেশে নতুন ইতিহাস।
প্রবাসীরা নিজ পরিবারের জন্য ঈদের কেনাকাটায় প্রতি বছরই রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও এবার ঈদুল ফিতরের আগে চলতি মে মাসের প্রথম ৯ দিনে দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে।
এ সময়ে প্রবাসীরা ৯১ কোটি ৯০ লাখ ডলার বা প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন। মঙ্গলবার (১১ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, সাধারণ সময়ের চেয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ঈদের আগে বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠান। তাদের নিজ নিজ পরিবার যাতে উৎসব ও স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদ উদযাপন করতে পারেন, এজন্যই এ সময়ে তারা বাড়তি রেমিট্যান্স পাঠান। এবারও তারা রেকর্ড রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।
করোনা সংকট কেটে যাওয়ার পরও অবৈধ পথে রেমিট্যান্স আসা বন্ধে উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, দেশে থাকা পরিবার যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদ উদযাপন করতে পারে সে জন্য এই সময়ে প্রবাসীরা বাড়তি রেমিটেন্স পাঠান।এবারও রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছে।
এর আগে গত ৩ মে দিনশেষে প্রথমবারের মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ রিজার্ভ দিয়ে আগামী ১২ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৪৪ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন বা চার হাজার ৪০২ কোটি ডলার।
২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার, ১৫ ডিসেম্বর ৪২ মিলিয়ন এবং ২৮ অক্টোবর রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল।
সদ্য শেষ হওয়া এপ্রিল মাসে ২০৬ কোটি ৭০ লাখ (২ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত বছরের (২০২০ সাল) এপ্রিলের চেয়ে ৮৯ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি। গত বছরের এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ৬০ হাজার।
দেশের ইতিহাসে এক মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহে এতো বেশি প্রবৃদ্ধি এর আগে কখনই হয়নি। চলতি অর্থবছরের মার্চে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯১ কোটি ৯৫ লাখ ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ১৭৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।
এদিকে রেমিট্যান্সের প্রবাহ চাঙ্গা থাকায় ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সবশেষ ৩ মে পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। যা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) দেশে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২ হাজার ৬৭ কোটি (২০ বিলিয়ন) ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে সিংহভাগ রেমিট্যান্স আসছে ১০টি দেশ থেকে। গত ১০ মাসে মোট আহরিত রেমিট্যান্সের প্রায় ৮৯ শতাংশই পাঠিয়েছেন এসব দেশের প্রবাসীরা।
দেশগুলো হলো- বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, ওমান, কাতার, ইতালি ও সিঙ্গাপুর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। অর্থবছর হিসাবে যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ ছিল। তারও আগে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণের রেকর্ড হয়। ওই সময় ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।
২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে সরকার প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে আরও ২ টাকা যোগ করে মোট ১০২ টাকা দেওয়া হচ্ছে সুবিধাভোগীদের।
এছাড়া ঈদ ও উৎসবে বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সরকারের প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি ১ শতাংশ দেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। এতে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন প্রবাসীরা।
সরকারের দেয়া প্রণোদনাসহ কয়েকটি কারণে এটা বেড়েছে বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড . এ কে আবদুল মোমেন।
তিনি বলেন, সরকারিভাবে টাকা বেশি আসার কারণ অফিশিয়ালি আজকে অবশ্যই সরকারি প্রণোদনা দিয়েছিল বলে।
প্রণোদনার হার দুই শতাংশ থেকে বাড়িয়ে চার শতাংশ করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর কথা জানিয়ে প্রবাসীকল্যাণ সচিব ড. আহমেদ মনিছুর সালেহীন বলেন, সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহে ধস নামার সম্ভাবনা নেই।
তিনি বলেন, মূল জিসিনটা হচ্ছে যে, মানুষ লিগ্যাল চ্যানেলে টাকা পাঠাবে এটাকে উৎসাহিত করা। আমাদের লোকজন যে পর্যায়ে কাজ করেন তারা ওইভাবে কর্মহীন হননি। তারা তাদের পুঁজির শেষটুকু পাঠিয়েছেন, এজন্য আমি মনে করি, এই কথাটা ঠিক নয়।
তবে, চলমান প্রণোদনা রেখেই নতুন কর্মী পাঠানোসহ জরুরি খাতে অর্থ ব্যয়ের পরামর্শ দেন অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ। প্রণোদনা বাড়িয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ ধরে রাখা সঠিক পদক্ষেপ নয় দাবি করে খাদ্য নিরাপত্তাসহ জরুরি খাতে অর্থ ব্যয়ের তাগিদ দেন তিনি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২৩৩৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ