মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মধ্যে ‘কোয়াড্রিলেটারেল সিকিউরিটি ডায়ালগ’ সংক্ষেপে কোয়াড গঠন করা হয়েছে। চীনকে ঠেকাতে জাপানের উদ্যোগে গঠিত কোয়াড একটি অনানুষ্ঠানিক কৌশলগত সংলাপ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাম্প্রতিককালে তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে যোগদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশকে টানা হচ্ছে বলে চীনের অভিযোগ। আর সেখান থেকেই গতকাল সোমবার চীনের রাষ্ট্রদূত যুক্তরাষ্ট্র-জোটে বাংলাদেশ ভিড়লে ভালো হবে না বলে হুমকি দেয়। তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, যে জোটের কথা বলা হয়েছে, তার পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে এখনও ‘অ্যাপ্রোচই’ করেনি। তবে কি চীন মনগড়াভাবে ফাও ফাও বকে গেল?
সম্প্রতি চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি বাংলাদেশে এক ঝটিকা সফরে আসেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলেন, এই অঞ্চলের বাইরের কোনো শক্তি যাতে আমাদের অঞ্চলে সামরিক জোট করে হেজিমনি সৃষ্টি করতে না পারে, এর জন্য চীন ও বাংলাদেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
তবে চীনের অনুরোধের জবাবে বাংলাদেশ কী বলেছে, জানতে চাইলে চীনের রাষ্ট্রদূত প্রশ্নটির উত্তর এড়িয়ে যান।
গতকাল সোমবার(১০ মে) কূটনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ-ডিকাব আয়োজিত ‘ডিকাব টক’-এ ভার্চুয়ালি অংশ নেন চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। এসময় তিনি বলেন, চীন সব সময় মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে কোয়াড হচ্ছে চীনবিরোধী একটি ছোট গ্রুপ। আমি খুব স্পষ্ট করেই বলতে চাই, অর্থনৈতিক প্রস্তাবের কথা বললেও এতে নিরাপত্তার উপাদান আছে।
‘এই প্রেক্ষাপটে বলব, এ ধরনের ছোট গোষ্ঠী বা ক্লাবে যুক্ত হওয়ার ভাবনাটা ভালো না। বাংলাদেশ এতে যুক্ত হলে তা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যথেষ্ট ‘খারাপ’ করবে,’ বলেন তিনি।
বাংলাদেশের নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সোমবার বলেন, কোয়াডে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়া ঠিক হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার কৌশলগত জোট কোয়াডকে চীনবিরোধী একটি ছোট গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে বেইজিং। তাই চীন মনে করে, এতে যেকোনোভাবে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ককে ‘যথেষ্ট খারাপ’ করবে।
তিনি বলেন, ‘এই চার সদস্য বিশিষ্ট ক্লাবে যোগ দিলে এটি বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে না। কারণ এর ফলে চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন উল্লেখ করেন যে কোয়াডের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে এখনও কোন প্রস্তাবই দেয়া হয়নি।
আজ মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, কোয়াড নিয়ে চীন আগ বাড়িয়ে কথা বলেছে।
মন্ত্রী বলেন, যে প্রতিষ্ঠানের কথা রাষ্ট্রদূত বলেছেন, সে প্রতিষ্ঠানের লোকজন আমাদের এখনও কিছুই বলেনি। সেজন্য আমার মনে হয়, তিনি (রাষ্ট্রদূত) একটু আগ বাড়িয়ে কথাটা বলে ফেলেছেন। এ নিয়ে আমাদের বিশেষ কোনো বক্তব্য নেই।
মন্ত্রী বলেন, কোয়াড নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এছাড়া বাংলাদেশ স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ হিসেবে সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি বলেন, চীনারা কখনও কারও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায় না। এটি খুব দুঃখজনক, আমরা কি করবো না করবো এটি অন্যরা বড় করে বলতে পারে না। যে কোনো দেশ তাদের মতামত দিতে পারে, আমরা তা শ্রদ্ধার সঙ্গে শুনবো। তবে আমরা কি করবো না করবো, জনগণের কথা বিবেচনা করে সে বিষয়টি আমরা নির্ধারণ করবো এবং সিদ্ধান্ত নেব।
তিনি বলেন, উনারা (চীন) যাই বলতে পারেন এবং ন্যাচার্যালি উনি (চীনা রাষ্ট্রদূত) একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তারা হয়তো এটা (কোয়াড) চায় না। তিনি তার বক্তব্য বলবেন।
তিনি আরও বলেন, “এতদিন ধরে দেখেছেন যে বহুলোক বহু সময় বহু কিছু বলেছেন, কিন্তু আমাদের দেশের স্বার্থ এবং মঙ্গলের ব্যাপারে যা যা করার আমরা তাই করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের মঙ্গলের জন্য তাই করেছেন।”
“উই মেইনটেইন এ নন-অ্যালাইন (জোট নিরপেক্ষ) এবং একটি ব্যালান্সড ফরেন পলিসি (ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্র নীতি)।”
আবদুল মোমেন আরও বলেন, বাংলাদেশ তার নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ীই এগুবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪২৪
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ