মানবাধিকার সংগঠন ও অধিকারভিত্তিক অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপগুলোর পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ইসলাম ধর্মকে কটাক্ষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগে রতন রায়-(৩৯) নামে এক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মামলা সূত্র ও পুলিশ জানায়, রতন রায় উপজেলার অরুয়াইল বাজারের একজন কাপড় ব্যবসায়ী। শুক্রবার (৭মে) রতন রায় তার ভেরিফাইড ফেসবুক আইডি থেকে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কটাক্ষ করে একটি স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসটি দেখে মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি পুলিশেরও নজরে আসে।
পুলিশ বিকেলে অরুয়াইল বাজার সংলগ্ন নিজ বাড়ি থেকে রতনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রতন দাবি করেন, তিনি এই স্ট্যাটাস দেননি। তার আইডি হ্যাক করে অপর কেউ হয়তোবা এই স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসের বিষয়ে তিনি কিছুই জানে না। স্ট্যাটাসটি দেখার পর ডিভাইস থেকে ওই স্ট্যাটাসটি ডিলেট করে দিয়েছেন।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতেই সরাইল থানার এস.আই মো. মিজানুর রহমান বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রতনের বিরূদ্ধে একটি মামলা করেছেন।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সরাইল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ কবির হোসেন বলেন, রতনের ভেরিফাইড আইডি থেকেই স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে। আইডি হ্যাক হয়ে থাকলে তিনি আবার ডিলেট করবেন কিভাবে? তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধরে নেয়া হয়েছে এ কাজটি রতনই করেছেন। তবে টেকনোলজি ব্যবহার করে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বিষয়টি সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এদিকে দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার সম্পাদক সুশান্ত দাশ গুপ্তের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। বেআইনিভাবে আসামির দেওয়া জবানবন্দির মূলকপি চুরি করে দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে প্রকাশের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়। বৃহস্পতিবার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির শাকিল মিয়া সংশ্লিষ্ট আদালতের আদেশপ্রাপ্ত হয়ে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় এ মামলা করেন।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, গত ২০ এপ্রিল হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় গ্রেপ্তার সোনাই মিয়া নামে এক ব্যক্তি ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে ২৯ এপ্রিল দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকা ও হবিগঞ্জ নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট বিডি-এর ফেসবুক পেইজে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির মূল নথি হুবহু প্রকাশিত হয়। যা আইনের দৃষ্টিতে দণ্ডনীয় অপরাধ। পরে আদালতের আদেশ পেয়ে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পত্রিকাটির সম্পাদককে আসামি করে মামলাটি করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুক আলী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা বলেন, সংবিধানে নাগরিকদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার দিয়েছে। যেখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে।
“সবার মধ্যে একটা ভীতি যে এইটা বললে কী হবে! এবং আমরাও বলি যে এতকিছু বলো না তোমার বিপদ হবে। এটা স্বাধীন দেশে আমরা কেন করবো? এটা কিন্তু বেশ স্বার্থকভাবে সরকার করে ফেলেছে। সেল্ফ সেন্সরশিপ একটা ভীতি প্রদর্শন, ভীতি মানুষের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া।”
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ