ইসলামী সংগঠন আনসার ইন্টারন্যাশনালকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে জার্মান সরকার। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুধবার (৫মে) জানিয়েছেন, সংগঠনটি সারা বিশ্বে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন করেছে।
টুইটারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হোর্স্ট সিহোফার বলেন, আপনি যদি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধ লড়াই করতে চান তাহলে এর অর্থের উৎস আপনাকে বন্ধ করতে হবে। মন্ত্রী বলেন, আনসার ও এর একটি অঙ্গসংগঠন ‘বৈশ্বিকভাবে সালাফি মতবাদ প্রচার করে এবং মানবিক সাহায্যের ছদ্মবেশে সারা বিশ্বে সন্ত্রাসবাসে অর্থায়ন করে। তিনি বলেন, জার্মানি থেকে শিশুদের আনসার ইন্টারন্যাশনালের বিদেশে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাগুলোতে প্রেরণ করা হতো এবং সেখানে সালাফিদের চরমপন্থী বিষয়বস্তুতে দিক্ষিত করে তাদের জার্মানিতে ফিরিয়ে আনা হত।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সন্ত্রাসবাদী কালো তালিকাভুক্ত ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে অর্থায়নের অভিযোগে পুলিশ ২০১৯ সালে আনসারের পাশাপাশি ওয়ার্ল্ডওয়াইড রেসিসট্যান্স-হেল্প নামের একটি সংগঠনে তল্লাশি চালিয়েছিল।
ডয়চে ভেলে জানায়, সংগঠনটির বিরুদ্ধে সিরিয়ার আল-নুসরা ফ্রন্ট, ফিলিস্তিনের হামাস ও সোমালিয়ার সন্ত্রাসী সংগঠন আল-শাবাবকে অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে। আনসারের ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে, যুদ্ধ ও সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য হাসপাতাল, এতিমখানা ও স্কুল ভবন নির্মানে তারা মানবিক সহায়তা প্রদান করে।
আনসার ইন্টারন্যাশনাল ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করার আগে বুধবার সকালে জার্মানির রাইনলান্ড-পালাটিনেট, বাডেন-ভ্যুর্টেনবার্গ, বাভারিয়ান, বার্লিন, ব্রান্ডেনবুর্গ, হামবুর্গ, নর্থ রাইন-ভেস্টফালিয়া, লোয়ার সাক্সনি, শ্লেসভিগ-হোলস্টাই এবং হেসে রাজ্যে অভিযান চালায় পুলিশ৷ অভিযানের সময় ৯০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়্৷
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আনসার ইন্টারন্যাশনাল ও তার সহায়তায় নানাভাবে কর্মরত আনিস বেন-হাতিরা ফাউন্ডেশন, দ্য সোমালি কমিটি ফর ইনফর্মেশন অ্যান্ড অ্যাডভাইস ইন ডার্মশ্টাড, উম্মা শপ এবং বেটার ওয়ার্ল্ড অ্যাপিল-এর কর্মীরা রয়েছেন৷
এর আগে ২০২০ সালে লেবাননের হেজবোল্লাহ গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করেছিলো জার্মানি। তখন জার্মানির হেজবোল্লাহর কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করে এই গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা দেবার সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছিলো ইরান৷
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্বাস মুসাভি বিবৃতিতে বলেছিলেন, পশ্চিম এশিয়ার বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা না করে এবং শুধু ইসরায়েলের জায়নিস্ট প্রচারণা যন্ত্র ও অ্যামেরিকার বিভ্রান্ত প্রশাসনের লক্ষ্যকে গুরুত্ব দিয়ে ইউরোপের কিছু দেশ নিজস্ব অবস্থান স্থির করছে বলে মনে হচ্ছে৷ জার্মানির সরকার হেজবোল্লাহর বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসী পদ্ধতিতে সশস্ত্র সংগ্রামে মদত’ দেবার যে অভিযোগ এনেছে, মুসাভি সেই অবস্থানেরও সমালোচনা করেন৷
তিনি বলেন, এই গোষ্ঠী লেবাননের সরকার ও সংসদের ‘আনুষ্ঠানিক ও আইনসঙ্গত’ সদস্য এবং ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা’ রক্ষা করার অন্যতম শক্তি৷ তাই এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে লেবানন রাষ্ট্র ও সরকারের প্রতি চরম অসম্মান দেখানো হয়েছে বলে ইরান দাবি করছিলো৷
ইউরোপে হেজবোল্লাহ গোষ্ঠী সম্পর্কে এখনো কোনো সাধারণ নীতি গ্রহণ করা হয়নি৷ এই গোষ্ঠীর সামরিক শাখাকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর তালিকায় স্থান দিয়েছে বটে, তবে হেজবোল্লাহর রাজনৈতিক শাখা সম্পর্কে কোনো একক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি৷ ইইউ ত্যাগ করার আগে ব্রিটেন হেজবোল্লাহকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় স্থান দেয়৷ নেদারল্যান্ডসও এই গোষ্ঠীর সব কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করেছে৷
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪৪৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ