সংবিধান, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও সংশ্লিষ্ট আইনে শাস্তির বিধান থাকলেও দেশে থেমে নেই হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি’র নির্যাতনে তাদের হেফাজতে থাকা সানাউল হক বিশ্বাস (৪৪) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার(২৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে মারা গেছেন। পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের নির্যাতনেই তিনি মারা গেছেন। এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।
নিহত সানাউল হক বিশ্বাস হচ্ছেন জেলার ভোলাহাট উপজেলার চাঁনশিকারী গ্রামের মৃত মুর্শেদ আলী বিশ্বাসের ছেলে।
সানাউল হক বিশ্বাসের ছোট ভাই মাসুদ রানা বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, তার ভাইয়ের নামে কোন মামলা ছিল না এবং তিনি মাদক ব্যবসায়ীও ছিলেন না। তবে তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে তাকে পারিবারিকভাবে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। এমন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে ডিবি পুলিশ তার ভাই সানাউল হক বিশ্বাসকে আটক করে ব্যাপক নির্যাতন করে।
এ সময় তিনি পানি চাইলে তাকে পানি না দিয়ে উল্টো তাকে দেখিয়ে ডিবি পুলিশ পানি সেবন করে। পরে তাকে আবারও মারধর করা হলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হলে সেখান থেকে তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিয়ে আসা হয় এবং রাত ৩টার দিকে সানাউল হক মারা গেছেন বলে তারা জানতে পারেন।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে ভোলাহাট থানার ওসি বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য স্থানীয় কয়েকজন আ.লীগ নেতাকে ম্যানেজ করে মাঠে নামিয়েছেন এবং ম্যানেজকৃত নেতারা নিহত সানাউল হক বিশ্বাসের পরিবারকে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার জন্য চাপ দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে ভোলাহাট উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আ.লীগ নেতা গরীবুল্লাহ দবির জানান, যা হবার হয়ে গেছে বিষয়টি মিটিয়ে যতদ্রুত সম্ভব লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এর আগে একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট লাশের সরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন। লাশের হাঁটুতে আগাতের চিহ্ন দেখা গেছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক জানান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম খান জাতীয় এক দৈনিককে বলেন, ১৩ এপ্রিল সানাউল হক বিশ্বাসের বাড়ি থেকে ১৬০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। এ ঘটনায় ভোলাহাট থানায় মামলা হয়। সানাউল পলাতক ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ির পাশে একটি আমবাগানে মাদক সেবন করছিলেন তিনি। গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করলে তিনি দৌড়ে পালাতে গিয়ে পড়ে যান। এতে তিনি বুকে ও হাঁটুতে ব্যথা পান এবং অসুস্থ হয়ে পড়েন। গোয়েন্দা পুলিশ তাকে সেখান থেকে ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত পৌনে একটার দিকে তিনি মারা যান।
নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে মাহবুবুল আলম খান বলেন, পুলিশ তাকে নির্যাতনের সময় পেল কোথায়? তাকে গ্রেপ্তার করার সময় সেখানে অনেক লোকজন ছিল। সেখান থেকেই তাকে ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা খারাপ হলে তাকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন একটি প্র্যাকটিসে (অভ্যাস) পরিণত হয়েছে। এখন থেকেই যদি এগুলো শক্ত হাতে মোকাবিলা করা না যায়, তাহলে এসব বন্ধ করা খুব কঠিন হবে।
তারা বলেন, ‘অপরাধীরা অপরাধ করবেই। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তো অপরাধীর মতো আচরণ করতে পারে না। তাদের চাকরিতে প্রবেশের আগে যে প্রশিক্ষণ তা আরও যুগোপযোগী, মানবতা উপযোগী এবং কর্তব্যনিষ্ঠ উপযোগী হওয়া উচিত।’
তারা বলেন, ‘আসলে আমাদের দেশে পুলিশের হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি প্রযুক্তিনির্ভর নয়। এর কারণ হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা যে, মারধর-নির্যাতন না করলে কেউ তথ্য দেয় না, দোষ স্বীকার করে না। পুলিশের ক্ষমতা জাহির করার জন্য, এক ধরনের ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে এই চর্চা ও মানসিকতা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।’
আরও বলেন, ‘পুলিশে সংস্কার, তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক কাজে পুলিশকে ব্যবহার না করা, প্রতিটি থানার অন্দরসহ এসব ঘটনায় সুরতহাল, পোস্টমর্টেমের বিষয়টি সিসিটিভির আওতায় আনা হলে এ ধরনের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আসবে।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৪১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ