মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও বিদ্রোহী কারেন গোষ্ঠীর মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় সীমান্তবর্তী কয়েক হাজার গ্রামবাসী পালিয়ে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিতে চায়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও বিদ্রোহী কারেন গোষ্ঠীর মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় সীমান্তবর্তী কয়েক হাজার গ্রামবাসী পালিয়ে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।
গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামরিক জান্তা দেশটির ক্ষমতা দখলের পর কারেনদের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাত শুরু হলে অনেকেই প্রতিবেশী দেশটিতে আশ্রয় নেয়। পরিস্থিতির অবনতি হলে অপেক্ষায় থাকা এসব কারেন আদিবাসীরাও সেখানে তাদের সাথে যোগ দেবে।
মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী থাইল্যান্ডের মায়ে হং সন প্রদেশের ইয়ে থু হতা উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেওয়া কারেন গ্রামের এক বাসিন্দা চু ওয়াহ রয়টার্সকে বলেন, “মানুষ বলাবলি করছে, বর্মীরা গ্রামে এসে আমাদের গুলি করে মারবে, তাই আমরা পালিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছি।”
মিয়ানমার-থাইল্যান্ডের সীমানা বরাবর সালভিন নদী পার হয়ে চলতি সপ্তাহে পরিবারসহ থাই ভূখণ্ডে প্রবেশ করে শিবিরে আশ্রয় নেন বলে জানান চু ওয়াহ।
মিয়ানমারের কারেন পিস সাপোর্টারস নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, কয়েক হাজার গ্রামবাসী সালভিন নদীর মিয়ানমারের তীরে আশ্রয় নিয়েছে এবং দুপক্ষের লড়াই যদি আরও রক্তক্ষয়ী রূপ নেয় তাহলে তারা পালিয়ে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নেবে।
কারেন গোষ্ঠীর ফেইসবুক পেজে বলা হয়, “আসন্ন দিনগুলোতে, সালভিন নদীর তীরে অবস্থানরত আট হাজারের বেশি কারেন আদিবাসীকে সীমান্ত পার হয়ে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিতে হতে পারে। আমরা আশা করছি, যুদ্ধ থেকে প্রাণ বাঁচাতে তাদের সাহায্য করবে থাই সেনারা।” তবে থাইল্যান্ডের তরফে সহায়তার কোনও আশ্বাস নেই।
থাই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ সপ্তাতে মিয়ানমারের প্রায় ২০০ গ্রামবাসী সীমান্ত অতিক্রম করে তাদের ভূখণ্ডে আশ্রয় নিয়েছে। থাইল্যান্ড সীমান্তে নজরদারি জোরদার করেছে এবং সীমান্ত অতিক্রমে কড়াকড়ি আরোপ করেছে।
গত মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের আগে সংঘটিত এক হামলায় সালভিন নদীর পশ্চিম তীরে মিয়ানমারের একটি সেনা ইউনিটকে গুঁড়িয়ে দেয় কারেন বিদ্রোহীরা। তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সংঘাতে ১৩ সেনা ও তিনজন বিদ্রোহী নিহত হয়েছে। এর জবাবে থাই সীমান্ত এলাকায় বিমান হামলা চালায় মিয়ানমার সামরিক বাহিনী।
রয়টার্স জানিয়েছে, নিরাপত্তার খাতিরে কয়েকশ থাই গ্রামবাসীও সীমান্তের নিকটবর্তী এলাকা ছেড়ে ঘরবাড়ি নিয়ে দেশের ভেতরের দিকে সরে গেছে।
চলমান সংকট নিরসনে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় গত ২৪ এপ্রিল জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের সাথে আসিয়ান নেতাদের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে জোটের পক্ষ থেকে দেওয়া পাঁচ দফায়— বিবাদমান সব পক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে সহিংসতার পথ ত্যাগ করবে ও চূড়ান্ত সংযম পালন করবে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে গঠনমূলক সংলাপ ও আসিয়ানের সেক্রেটারি জেনারেলের সহায়তায় জোটের চেয়ারম্যানের বিশেষ দূত সংলাপে মধ্যস্থতা করবেন, আসিয়ান মিয়ানমারে মানবিক সহায়তা প্রদান করবে এবং আসিয়ানের বিশেষ দূত ও প্রতিনিধিদল বিবাদমান পক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলার জন্য মিয়ানমার সফর করবে বলে জানানো হয়। কিন্তু মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীরা এ সমঝোতা প্রত্যাখ্যান করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এক সপ্তাহে সংঘাত বন্ধে কোনো পক্ষ পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো বিভিন্ন বিদ্রোহী উপজাতির সাথে সংঘাত বেড়েছে সামরিক বাহিনীর। আসিয়ানের প্রস্তাবনায় মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফেরানোর কোনো রূপরেখা নেই। মূলত বৈঠকে তারা জান্তাপ্রধানের কাছে নতি স্বীকার করে। সংকট নিরসনে আসিয়ান পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এজন্যই সাধারণ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে অন্যত্র আশ্রয় খুঁজছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০৮
-State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ