
বাংলাদেশে কি পরিমাণ অক্সিজেন প্রতিদিন উৎপাদন হয়, সরকারি-বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালগুলোতে এর চাহিদা কতো, বর্তমানে অক্সিজেনের মজুত কতটুকু রয়েছে- এসব বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বর্তমানে দেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রতিদিন ১৫০ টন লিকুইড অক্সিজেন উৎপাদন হচ্ছে।
এছাড়া শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের জন্য প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ টন গ্যাস অক্সিজেন উৎপাদনসহ মোট ৪০০ টন অক্সিজেন দেশেই হয়। পৃথকভাবে (কতটুকু লিকুইড ও কতটুকু গ্যাস অক্সিজেন) বলা সম্ভব না হলেও বর্তমানে করোনা চিকিৎসায় প্রতিদিন ১২৫ থেকে ১৫০ টন অক্সিজেন প্রয়োজন হয়।
তিনি বলেন, হাসপাতালে শুধু লিকুইড অক্সিজেন দিয়েই কাজ চলে না। সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন তো মাত্র কয়েক দিন আগে হলো। এর আগেও কিন্তু হাসপাতালে কিছুসংখ্যক লিকুইড আর বাকিগুলো গ্যাস অক্সিজেন ব্যবহার হতো। বাংলাদেশে গ্যাস অক্সিজেনের অভাব নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে যারা লিকুইড অক্সিজেন তৈরি করে তাদের কাছ থেকে সব অক্সিজেন নিয়ে হাসপাতালগুলোতে সরবরাহের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অনেক বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানও ৪০ টন অক্সিজেন নেয়। তাদের সেই অক্সিজেনও আমরা রিজার্ভ করে ফেলেছি। আমরা আমদানিই করতাম ৪০ থেকে ৫০ টন।
রোগী যদি অতিরিক্ত হয় তাহলে দেশে অক্সিজেন সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, কমপক্ষে অর্ধশতাধিক হাসপাতালে গ্যাস সিলিন্ডারে চিকিৎসা প্রদানের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। লিকুইড অক্সিজেন ব্যবহারের বদলে তাদের গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করতে বলেছি। এছাড়া ছোট ছোট অক্সিজেন প্ল্যান্টও আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। সব দেশের চাহিদা রয়েছে তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অক্সিজেন প্ল্যান্ট বিভিন্ন হাসপাতালে স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে। সব হিসাব-নিকাশ করে দেখা গেছে, অক্সিজেন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু রোগী যদি সাত হাজারের স্থলে দু-তিন গুণ বেশি হয় তাহলে সঙ্কট দেখা দেবে, যা ইউরোপ-আমেরিকা ও বর্তমানে ভারতে হচ্ছে। তাই রোগীর সংখ্যা কমাতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ফরিদ হোসেন মিয়া বলেন, কোথাও অক্সিজেনের ঘাটতি নেই, সরবরাহ নিয়ে কোনো অভিযোগও আসেনি। রোগীর চাপ কমায় অক্সিজেনের চাহিদাও কমেছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতের চিন্তা মাথায় রেখে খুব শিগগির শিল্প অক্সিজেন তৈরির কারখানার সঙ্গে বসে কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দেশে তরল অক্সিজেন উৎপাদনের ঘাটতি থাকলেও গ্যাসীয় অক্সিজেনের ঘাটতি নেই। ভারত থেকে তরল অক্সিজেন আমদানি করা হতো। এটি হাসপাতালের বড় ট্যাংক থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। আর গ্যাসীয় অক্সিজেন সিলিন্ডারে সরবরাহ করা হয়। বিশেষ পরিস্থিতিতে সিলিন্ডারে করে সংকট মেটানো যাবে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, সংক্রমণ কমার ধরন পুরোপুরি সঠিক চিত্র দেয় না। কঠোর বিধিনিষেধের কারণে এটি দেখা গেছে। মানুষ এখন আবার রাস্তায় নামছে। সামনে সংক্রমণ আগের চেয়ে দ্বিগুণ হতে পারে। আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া দরকার।
শিল্প প্রতিষ্ঠানে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ
দেশে করোনা সংক্রমণ চলাকালীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে অক্সিজেনের ব্যবহার ও সরবরাহ বন্ধ রেখে শুধু হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছে বিস্ফোরক অধিদপ্তর। দেশের পাঁচটি অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ এক চিঠিতে শিল্পে ব্যবহারের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে বিকল্প হিসেবে সিঙ্গাপুর থেকে অক্সিজেন আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে, যা সময় সাপেক্ষ।
চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসজনিত রোগের সংক্রমণ সম্প্রতি দ্রুত বাড়ছে। দেশের হাসপাতাল/ক্লিনিকে করোনা ভাইরাসে মারাত্মক আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন হ্রাসের কারণে দ্রুত মেডিক্যাল গ্রেডের অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। এ পরিস্থিতিতে হাসপাতাল/ক্লিনিকে চাহিদা অনুসারে মেডিক্যাল অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে মেডিক্যাল অক্সিজেন উৎপাদন বাড়ানো এবং হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্নভাবে অক্সিজেন সরবরাহ বজায় রাখা প্রয়োজন। তাই দেশে করোনা সংক্রমণ চলাকালীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে অক্সিজেন ব্যবহার বন্ধ রেখে শুধু হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের নির্দেশনা দেওয়া হলো।
দেশের পাঁচটি অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো- লিন্ডে বাংলাদেশ, স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেড, ইসলাম অক্সিজেন লিমিটেড, ডিআর ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও মেসার্স বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাস লিমিটেড।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৮৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ