![](https://statewatch.net/wp-content/uploads/2020/11/সেটেলমেন্ট-আদালত-300x171.jpg)
দেশের পরিত্যক্ত বাড়ি-সংক্রান্ত মামলার বিচারের জন্য রাজধানীতে পৃথক দুটি সেটেলমেন্ট আদালত রয়েছে। তবে সরকারি অনুমোদন না থাকায় আদালত দুটি কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি পাচ্ছেন না ১০ মাস ধরে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা দুটি সেটেলমেন্ট আদালতকে প্রতি এক বছরের জন্য অনুমোদন দেয় সরকার। গত বছরের শেষ দিকে আদালতের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর থেকে অনুমোদন না পাওয়ায় আদালত দুটির বিচারকাজে স্থবিরতা চলছে। এতে বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।
জানা গেছে, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেকে বাড়িঘর ফেলে পাকিস্তান চলে গেছে। তখন সরকার এসব বাড়িকে পরিত্যক্ত হিসেবে চিহ্নিত করে। ১৯৮৬ সালে এসব বাড়ির বিষয়ে গেজেট জারি করা হয়। এর মধ্যে সরকারের দখলে থাকা বাড়িগুলো ‘ক’ তফসিলভুক্ত এবং ব্যক্তির দখলে চলে যাওয়া বাড়িগুলো ‘খ’ তফসিলভুক্ত। এসব বাড়ির বিষয়ে করা মামলার বিচারের জন্য ১৯৮৬ সালে দুটি আদালত গঠন করে সরকার। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ৫নং টিনশেডে (১২ তলা ভবনের পাশে) আদালত দুটির অবস্থান। এর মধ্যে ‘প্রথম কোর্ট অব সেটেলমেন্ট’ শুধু ঢাকার পরিত্যক্ত বাড়ি এবং ‘দ্বিতীয় কোর্ট অব সেটেলমেন্ট’ ঢাকা ছাড়া সারাদেশের পরিত্যক্ত বাড়িগুলোর মামলার বিচার করে। প্রথম আদালতে ২৬৮টি এবং দ্বিতীয় আদালতে ১৬১টি মামলা বিচারাধীন।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১ জুন থেকে ৩১ মে পর্যন্ত এক বছরের জন্য আদালতের অনুমোদন দেওয়া হয়। তিন সদস্যের আদালতের চেয়ারম্যান হন একজন জেলা জজ। সদস্য (বিচার) হন একজন অতিরিক্ত জেলা জজ এবং সদস্য (প্রশাসন) হন একজন উপসচিব। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের ভিত্তিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে বিচারক ও প্রশাসনিক সদস্যের জন্য আলাদাভাবে অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এ বছর এখন পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া যায়নি। ফলে গত ফেব্রুয়ারি থেকে আদালতের বিচার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকারের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা সমকালকে জানিয়েছেন, বন্ধ থাকা আদালত দুটি চালু করতে অনুমোদনের চেষ্টা চলছে। শিগগির এই অনুমোদন হয়ে যাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তারা।
নানা সমস্যায় জর্জরিত :নানা সমস্যায় জর্জরিত প্রথম ও দ্বিতীয় সেটেলমেন্ট আদালত। নেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও জনবল। দীর্ঘদিন বিচারকাজ বন্ধ থাকায় নেই আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের আনাগোনা।
সেগুনবাগিচায় অবস্থিত আধাপাকা টিনের ঘরে চলে আসছে আদালত দুটির বিচার কার্যক্রম। এক নম্বর সেটেলমেন্ট আদালতের চেয়ারম্যান জেলা ও দায়রা জজ রাশেদুজ্জামান রাজা। দুই নম্বর আদালতের চেয়ারম্যান জেলা ও দায়রা জজ মো. জুয়েল রানা।
৩৪ বছরের পুরোনো আধাপাকা জরাজীর্ণ বাড়িটি দিনে দিনে দুর্বল হয়ে পড়ছে। বৃষ্টি হলেই বসে কাজ করা দায়। এমন অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিতে কোনো কর্মকর্তা এখানে বদলি হলেও কাজে যোগ দিতে চান না।
সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, একজন চেয়ারম্যান ও দু’জন সদস্য নিয়ে গঠিত প্রথম সেটেলমেন্ট আদালত। একইভাবে গঠিত দুই নম্বর আদালত। তিনজনের মধ্যে যে কোনো একজন অনুপস্থিত থাকলে আদালত বসার সুযোগ নেই। ফলে বিচারপ্রার্থীদের অবস্থা গুরুচরণ।
জানা গেছে, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও সেটেলমেন্ট আদালতের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। সরেজমিন দেখা গেছে, টিনশেড ভবনে স্থাপিত এক ও দুই নম্বর সেটেলমেন্ট আদালতের এজলাস কক্ষ বন্ধ। ময়লা ও আবর্জনার স্তূপ কক্ষগুলোতে। ফলে বিচার কার্যক্রম দারুণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী এই আদালতে ১৪ জন জনবল থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে আছে মাত্র ৯ জন। নেই প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পেশকার, প্রসেস সার্ভার, স্টেনোগ্রাফার, কম্পিউটার অপারেটর, চালক ও পিয়ন। এই দুটি আদালতে সরকারি আইনজীবীদের পৃথক দুটি প্যানেল থাকার কথা থাকলেও তা নেই। চেয়ারম্যান ও সদস্য ছাড়া অন্য কক্ষগুলোতে ঝুলছে তালা।
প্রথম সেটেলমেন্ট আদালতের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে একজন কর্মকর্তা জানান, বিচারের জন্য টিনশেড ভবন কোনোভাবেই মানানসই নয়। তাছাড়া অনেক দিনের পুরোনো ভবন। বৃষ্টি হলেই পানি চুইয়ে পড়ে। বৃষ্টির পানিতে মামলার নথি-ফাইলপত্র ও রেকর্ড সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
খবর : সমকাল
আপনার মতামত জানানঃ
![Donate](https://statewatch.net/wp-content/uploads/2021/06/xcard.jpg.pagespeed.ic.qcUrAxHADa.jpg)
আপনার মতামত জানানঃ