হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির আমির ও বর্তমান আহ্বায়ক জুনায়েদ বাবুনগরীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সহিংসতার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এ দুই মামলাসহ ওই ঘটনায় মোট তিনটি মামলা করা হলো। এসব মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলাল উদ্দিন, উপজেলা জামায়াতের আমিরসহ তিন হাজার ব্যক্তি।
তবে মামলাগুলো হাটহাজারী থানায় গত বৃহস্পতিবার করা হলেও আজ সোমবার জানা গেছে।
গত ২৬ মার্চের ঘটনায় বৃহস্পতিবার কেন মামলা করা হয়েছে, জানতে চাইলে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় এক দৈনিককে বলেন, জড়িত আসামিদের শনাক্ত, নাম-ঠিকানা যাচাই করতে সময় লেগেছে। নিরীহ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন, তাই যাচাই করে প্রকৃত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। এখানে অন্য কিছু ছিল না।
সূত্র জানায়, একটি মামলার বাদী চট্টগ্রাম পুলিশের জেলা বিশেষ শাখার (ডিএসবি) কনস্টেবল মো. সোলায়মান। এ মামলায় বাবুনগরী, হেফাজত নেতা মীর ইদ্রিস, নাছির উদ্দিন, জাকারিয়া নোমান, আহসান উল্লাহসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২৬ মার্চ দায়িত্ব পালনকালে হাটহাজারী জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর সামনে থেকে সোলায়মানকে ধরে নিয়ে মাদ্রাসায় আটকে রাখা হয়। তাকে সেখানে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
আরেক মামলার বাদী হাটহাজারী থানার পরিদর্শক আমির হোসেন। এ মামলায় জুনায়েদ বাবুনগরী, হেফাজত নেতা জাকারিয়া নোমানসহ উপজেলা জামায়াতের আমিরসহ ৭৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আসামি ২,৫০০ থেকে ৩ হাজার জন।
অন্যদিকে হাটহাজারী থানার এসআই হারুন অর রশিদ বাদী হয়ে তৃতীয় মামলাটি করেছেন। এ মামলায় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সহসভাপতি সৈয়দ ইকবাল, উপজেলা হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমরান শিকদারসহ ৫৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আসামি ২৫০-৩০০ জন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে হাটহাজারী সদর, ইছাপুর বাজারে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও রাস্তায় দেয়াল দিয়ে আসামিরা অস্থিরতা সৃষ্টি করে। আসামিরা ২৬ থেকে ২৮ মার্চ রাস্তায় দেয়াল নির্মাণ, থানা ও ভূমি অফিসে হামলা, অগ্নিসংযোগসহ পুলিশের ওপর হামলা করেন।
নতুন হওয়া তিন মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের আগের কমিটির যুগ্ম মহাসচিব নাছির উদ্দিন আজ দুপুরে ওই দৈনিককে বলেন, ‘কিছু বলার নেই। যা করার আইনগতভাবে মোকাবিলা করা হবে।’ বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলাল উদ্দিন ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন বলে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন তিনি।
বৃহস্পতিবারে করা মামলার খবর পুলিশ আজ সোমবার জানালেও এরইমধ্যে ঘটে গেছে অনেক ঘটনা।
গত রোববার (২৫ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে ফেসবুক লাইভে এসে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন সংগঠনটির আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
হেফাজতে ইসলামের আমির মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বড় অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো।
এদিকে, হাটহাজারী থেকে স্থানীয় হেফাজতনেতা ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রবিবার রাত নয়টার পর থেকে হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার আশেপাশে ও প্রবেশপথে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের দেখা গেছে। বিভিন্ন বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সেখানে রয়েছে।
স্থানীয় ধারণা করছেন, হাটহাজারী মাদ্রাসায় অভিযান চালানো হবে, এমন কথাবার্তা এলাকায় ছড়িয়েছে।
মাদ্রাসার বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি প্রসঙ্গে একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরীকে গ্রেপ্তারের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। তবে হেফাজতের কমিটি ভেঙে দেওয়ার কারণে গ্রেপ্তার অভিযান আর হচ্ছে না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তা আরও জানান, হাটহাজারী মাদ্রাসার চারদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আছেন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম চালানো হবে।
এদিকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ও মহানগর কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে সাড়ে ৩ ঘণ্টা পরই ৫ সদস্য বিশিষ্ট নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রোববার(২৫ এপ্রিল) মধ্যরাতে জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির করে এ কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়।
হেফাজতের নতুন আহ্বায়ক কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হলেন আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, আহ্বায়ক জুনায়েদ বাবুনগরী ও সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী, সদস্য আল্লামা সালাউদ্দিন নানুপুরী ও অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, হেফাজতে ইসলামের কমিটি ভেঙে দেওয়ার ফলে আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান বাতিল করা হলেও পরে নতুন করে কমিটি ঘোষণা হওয়ায় গত বৃহস্পতিবারে করা মামলা আবারও চাউর করে আজ। এতে স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যাচ্ছে, কৃত অপকর্মের জন্য নয়, রাজনৈতিক কারণেই মামলা হওয়া ও চাঙ্গা হওয়ার বিষয়টি নির্ভর।
ক্ষমতাসীন সরকারের মামলার ভয় দেখিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণের এটাই নতুন নয় বলে জানান তারা। তারা বলেন, এটা ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারের অন্যতম অস্ত্র। নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধার্থেই মামলা দেওয়া, চাঙ্গা করা আবার থামিয়ে রাখা হয়। এটা প্রচলিত বিচার ব্যবস্থাকে একদিকে যেমন বৃদ্ধাঙুলি প্রদর্শন করা হয় অন্যদিকে দেশের আইনের দুর্বলতাকে ইঙ্গিত করা হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৫৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ