২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ অর্ধেক কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রয়টার্স জানায়, বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের আয়োজিত জলবায়ু সম্মেলনে ভার্চুয়াল লিডার্স সামিটে এ ঘোষণা দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। বাইডেন প্রশাসন আশা করছে, নতুন এই লক্ষ্য নির্ধারণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কার্বন নিঃসরণকারী অন্যান্য বড় দেশগুলোও তাদের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে নেবে।
২০৫০ সালের মধ্যে মার্কিন অর্থনীতিকে পুরোপুরি কার্বন মুক্ত করতে চান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে যুক্তরাষ্ট্রে লাখ লাখ ভালো পারিশ্রমিকের কাজের সুযোগ তৈরি হবে বলে দাবি করছেন তিনি। তবে রিপাবলিকানদের দাবি এই পরিকল্পনায় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
কোন কোন খাত থেকে কার্বন নিঃসরনের পরিমাণ কমানো হবে তা বাইডেনের ঘোষণায় না থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন, গাড়ি নির্মাণ খাত এগিয়ে থাকবে। এই বছরের শেষ নাগাদ বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
হোয়াইট হাউস বলেছে, তারা জলবায়ু সংকটকে জরুরি বিবেচনায় এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল হ্রাসের ক্ষতিপূরণ হিসেবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য ‘উচ্চাভিলাষী তবে অর্জনযোগ্য লক্ষ্য’ গ্রহণ করেছে।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, বর্তমান বা প্রত্যাশিত জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০২৪ সাল নাগাদ জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার বিষয়ে তিন গুণ অর্থায়ন করবে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নে কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করা হবে।
বাইডেন প্রশাসন ২০০৫ সালের তুলনায় ৫০–৫২ শতাংশ কার্বন হ্রাসের নতুন লক্ষ্য নিয়ে তার জলবায়ু আর্থিক পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। ভার্চ্যুয়াল এই সম্মেলনে বিশ্বের ৪০টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানেরা যোগ দেন।
বাইডেনের এই সিদ্ধান্তকে ‘গেম চেঞ্জিং’ আখ্যা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরনের মাত্রা ৪৬ শতাংশ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জাপান। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও ৪০-৫০ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, চীনের পর যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ। তাদের ২০৩০ সালের মধ্যে ৮০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিলে দিতে হবে, তবেই তা ন্যায্য পাওনা হবে।
চীন এই সম্মলনে অংশ নিয়েছে। অর্থনৈতিক নানা বিষয়, দক্ষিণ চীন সাগরে আধিপত্য বিস্তার এবং চীনের নানা মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্কের অনেকটাই অবনতি হয়েছে সাম্প্রতিক কালে। তবে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির এই দুই দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একমত হতে পেরেছে।
একশনএইড ইউএসএসের নির্বাহী পরিচালক নিরাঞ্জলি আমেরাসিংহে বলেন, দরিদ্র দেশগুলোতে কার্বন নির্গমন কমানোতে আর্থিক ও অন্যান্য সাহায্য দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতা আছে। এসব দেশের সম্মুখসারির সম্প্রদায়গুলো যেন জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলা করে টিকে থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, পৃথিবীর তাপমাত্রা অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে। কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ঠিক করার কাজটি নিয়ে যত সময়ক্ষেপণ হবে, মতানৈক্য থাকবে, তত বেশি মোকাবেলা করতে হবে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি। সেই ঝুঁকি এড়ানোর পথ একটাই, সেটা হল শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোকে এক টেবিলে বসিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে অবশ্যই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৫০০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ