খুলনার আদালত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক রুহুল আমিনের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন। আজ সোমবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে মহানগর দায়রা জজ শহিদুল ইসলাম এ জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রুহুল আমিনের আইনজীবী আক্তার জাহান রুকু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মহানগর দায়রা জজ শহিদুল ইসলাম ১০ হাজার টাকার বন্ডে আইনজীবীর জিম্মায় রুহুল আমিনের জামিন মঞ্জুর করেন।’
আইনজীবী আক্তার জাহান বলেন, ভার্চ্যুয়াল কোর্টে জামিন আবেদন করলে আদালত রুহুল আমিনের জামিন মঞ্জুর করেছেন। তার জামিনের কপি কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ সোমবার অথবা আগামীকাল মঙ্গলবার তিনি কারগার থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলনা মহানগরীর গোয়ালখালির কার্টুনিস্ট কিশোরের বাড়ি থেকে রুহুল আমিনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময়ে একই বাড়ি থেকে শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নিয়াজ মুর্শিদ দোলনকেও তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।
পরের দিন ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার দিকে নিয়াজ মুর্শিদ দোলনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও রুহুল আমিনের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন খুলনা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক মো. নাহিদ হাসান।
মামলায় তার বিরুদ্ধে ফেসবুক ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি তথা সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ণ করাসহ বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে অপপ্রচার এবং জনগণের মধ্যে শত্রুতা, অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়।
এদিকে, রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তারের পর থেকে তার মুক্তির দাবিতে খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদ বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছিল।
সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ তুলেছিলেন, ফেসবুক স্ট্যাটাস বা রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে যা অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সবই অজুহাতমাত্র। মূলত রুহুল আমিন কয়েক বছর ধরে সারা দেশের পাটকল ও চিনিকলের শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করে যেভাবে আন্দোলনকে তুঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন, সেটাই সরকারের মাথাব্যথার মূল কারণ।
রুহুল আমিন শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী ছিলেন। সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পর শ্রমিকদের নিয়ে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছিলেন তিনি। সর্বশেষ কাশিমপুর কারাগারে মারা যাওয়া লেখক মুশতাক আহমেদকে নিয়ে ফেসবুকে কয়েকটি পোস্ট করেছিলেন রুহুল আমিন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে দেশের মধ্যে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়।
লেখক মুশতাক আহমেদ মারা যাওয়ার ঘটনায় গত ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তার নিজের ফেসবুক ওয়ালে কিছু মন্তব্য করেন রুহুল আমিন। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার দিকে তার ভাড়া বাসা থেকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে আসে। পরে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে আদালতের কাছে সোপর্দ করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। রিমান্ড শেষে জামিন আবেদন করলে আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। দীর্ঘ ৫৩ দিন কারাভোগের পর অবশেষে তিনি আজ জামিন পান।
তবে বিশ্লেষকদের অভিযোগ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি যেমন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার হয়ে থাকে, এই আইনে গ্রেপ্তার ও জামিনেও সরকারের রাজনীতি স্পষ্ট হয়ে আসে। সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে দেশে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে ভিন্নভাবে সামাল দেওয়ার উদ্দেশ্যেই আচমকা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার রুহুল আমিনকে জামিন দেওয়া হয়েছে।
তারা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে মানুষের বাক্স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। কিছু বলতে গেলেই সরকার ও পুলিশের নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। সরকারের সমালোচনা করায় ওই আইনে লেখক মুশতাক আহমেদ ও কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দীর্ঘ ১০ মাসের মতো কারাগারে থাকার পর কারাগারেই মারা গেছেন মুশতাক আহমেদ। নানা ঘটনার জন্ম দিয়ে কিশোর মুক্তি পেলেও সরকারী বাহিনীর নির্যাতন অত্যাচারে তার অবস্থাও ভালো নয়। আবার এটা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নতুন করে একই আইনে মামলার শিকার হয়েছেন রুহুল আমিন। এখন তার জামিন নিয়েও রাজনীতি করছে সরকার।
তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিলুপ্তসহ এই আইনে গ্রেপ্তার অন্যান্যদের মুক্তির দাবি করেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৪৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ