পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাল্লা দিনদিন বেড়েই চলেছে। এসব অভিযোগের মধ্যে ঘুষ, হয়রানি, নারী নির্যাতন, চাঁদা দাবি বা আদায় ছাড়াও পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে জীবননাশের হুমকির অভিযোগও রয়েছে। এবার জানা গেল চাহিদা মতো ঘুষের টাকা দিতে না পারার অভিযোগে টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক থেকে শতাধিক ধান কাটা শ্রমিকসহ তাদের বহনকারী দুটি ট্রাক আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে ট্রাক দুটি আটক করা হয়। পুলিশকে প্রত্যাশা অনুযায়ী উৎকোচ না দেওয়ায় তারা ট্রাকটি আটক করেন বলে অভিযোগ করেছেন চালকরা।
সংবাদ মাধ্যম যুগান্তরের মাধ্যমে জানা যায়, ধানকাটা শ্রমিকদের আটকে রাখার কারণে খোলা আকাশের নিচে দুর্ভোগে রাত কাটিয়েছেন শ্রমিকরা। এ ছাড়াও ধান কাটা শ্রমিকদের অনুমতিপত্র জব্দ করার অভিযোগও রয়েছে এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির বিরুদ্ধে।
ধান কাটার শ্রমিকরা জানান, কৃষি অফিসারের অনুমতি নিয়ে পাবনা থেকে দুটি ট্রাকে মুন্সিগঞ্জ ও হবিগঞ্জের উদ্দেশ্যে তারা যাত্রা শুরু করেন। তাদের মধ্যে অনেকেই রোজা রেখেছিলেন। এলেঙ্গা পর্যন্ত আসলে পুলিশ তাদের ট্রাক দুটি দাঁড় করায়। পুলিশ টাকা দাবি করলে টাকা দিতে না পারায় তাদের ট্রাক জব্দ করে এলেঙ্গা ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। রাত থেকে না-খেয়ে শতাধিক শ্রমিক খুব কষ্ট করছে।
অনেকেই আবার সাহরিও খেতে পারেননি। পুলিশ বাস ব্যবস্থা করে দিতে চাইলেও শনিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা করে দিতে পারেনি।
শ্রমিক ইদ্রিস আলী বলেন,পাবনা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত আসলে পুলিশ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে না পারায় ট্রাক দুটি আটকে দেয়। এতে আমাদের রাতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে। না খেয়ে রাত থেকে কষ্ট করতে হচ্ছে। পায়খানা প্রসাবের জায়গা না থাকায় কষ্ট আরও কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। আমরা এখন কি করবো কিছুই বুঝতি পারছি না।
রমজান নামের অপর শ্রমিক বলেন, কাজ না থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছিলাম। তাই আমাদের উপজেলা কৃষি অফিসার ও চেয়ারম্যানের প্রত্যায়ণপত্র নিয়ে ধান কাটতে হবিগঞ্জের দিকে যাচ্ছিলাম। পুলিশ আমাদের আটকে দেওয়ায় খুব কষ্ট হচ্ছে। রাত থেকে না খেয়ে আছি। আমাদের অনুমতিপত্র পুলিশ জব্দ করে রেখেছে।’
ট্রাকচালক উজ্জ্বল মিয়া বলেন, শুক্রবার বিকালে পাবনা থেকে রওনা দিয়েছি। রাত ১২টার দিকে এলেঙ্গা আসলে পুলিশের এক কর্মকর্তা টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তারা ট্রাকের সব শ্রমিক নামিয়ে দিতে বলেন। শ্রমিকদের বাসে যেতে বলেন। পরে অপর এক পুলিশ কর্মকর্তা এসে শ্রমিকসহ ট্রাক ফাঁড়িতে নিয়ে যান। গাড়ির কাগজপত্র পুলিশ জব্দ করেছে। শুক্রবার দুপুরে খেয়েছিলাম। তারপর থেকে আমরা না খেয়ে খুব কষ্টে সময় পার করছি।’
পাবনা সদর কৃষি অফিসার হাসান রশিদ হোসাইনী বলেন, তাদের অনুমতিপত্র দেওয়া আছে। তাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করেছি। পুলিশ হয়তোবা আইনগতভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু মাবনিক দৃষ্টিতে কাজটি তেমন ভালো হয়নি। আরেকটি বাস ব্যবস্থা করে পুলিশ তাদের গন্তব্যে পৌছাতে সহযোগিতা করতে পারতেন।
তবে শ্রমিকদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার রহমতুল্লাহ। তিনি বলেন, শ্রমিকরা ট্রাকে করে যাচ্ছিল। কিন্তু ট্রাক চলাচল নিষিদ্ধ। পরে তাদেরকে বাসের ব্যবস্থা করে পাঠানো হয়।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইয়াসির আরাফাত বলেন, শ্রমিকরা দুটি ট্রাকে একটি ৪৮ জন, আরেকটি ৭২ জন শ্রমিক স্বাস্থ্যবিধি না মেনে তাদের গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। তাদের বাস ব্যবস্থা করে দিতে চাইলে তারা রাজি হয়নি। বাস ব্যবস্থা করে তাদের গন্তব্যে পাঠানো হবে।
এদিকে করোনায় দায়িত্ব পালনের সময় মাঠপর্যায়ের কর্মরত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে হয়রানি ও অসহযোগিতার অভিযোগ নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। শনিবার (১৭ এপ্রিল) পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ বিভাগ থেকে এ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। ব্যাখ্যায় পুলিশের দায়িত্ব পালনে জনগণের সহায়তা চাওয়া হয়।
এতে বলা হয়, করোনা সংক্রমণ রোধে চলাচল নিয়ন্ত্রণে সরকারি আদেশ বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে হয়রানি ও অসহযোগিতার কিছু অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এসব তথ্য ও সংবাদ উঠে এসেছে গণমাধ্যমেও। বিষয়টি পুলিশ সদর দফতরের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।
এতে বলা হয়, করোনার এই অতিমারিতে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশ সর্বতোভাবে দেশের মানুষের পাশে থেকেছে। অতিমারির শুরুতে যখন প্রচণ্ড ভয় ও বিভীষিকা গ্রাস করেছে সারা পৃথিবীকে, সুরক্ষা সামগ্রীর অভাবে অনেকেই যখন দায়িত্বপালনে অস্বীকৃতি জানিয়েছে; তখন বাংলাদেশ পুলিশের দুই লক্ষাধিক সদস্য জীবনের পরোয়া না করে ভালোবেসে মানুষের পাশে থেকেছে। করোনায় মৃতের জানাজা ও দাফন এবং খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ, চিকিৎসক ও জরুরি সেবাকর্মীদের যাতায়াতে সহায়তা, শিল্প উৎপাদন, কৃষি পণ্যের পরিবহন ও বিপণনে সহায়তা ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের অকুন্ঠ ভালোবাসা পেয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সদর দফতর বাহিনীর প্রশংসামূলক একডজন ব্যাখ্যা দিলেও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নানা রকম অপরাধকর্মে জড়িয়ে পুলিশ ইতিমধ্যে এক নেতিবাচক চরিত্রে দাঁড়িয়ে গেছে। তারা চাকরিই করে যেন বিভিন্ন কৌশলে নিজেদের ফায়দা আদায়ের সুযোগ তৈরীর জন্য। যার ফলে জনগণের ভোগান্তিসহ নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। পুলিশের সদর দফতর থেকে তাদের বাহিনীর পক্ষ নিয়ে সুর তুললেও বাস্তবচিত্র ভিন্ন। যারা ভোগান্তি ও হয়রানিতে শিকার হয় তারাই জানে পুলিশের আসল চরিত্র কোথায়।
এসডব্লিউ/ডিজে/কেএইচ/১৬০৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ