ফোন অ্যাপের মাধ্যমে চোখ স্ক্যান করে মাত্র তিন মিনিটে ৯৫% নির্ভুলভাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা সম্ভব বলে দাবি করেছে জার্মানভিত্তিক সংস্থা সেমিক আরএফ। সংস্থাটি জানায়, এর মাধ্যমে তারা নতুন যুগের সূচনা করতে পারবে বলে আশাবাদী। এই পদ্ধতিতে স্মার্টফোনে তোলা চোখের ছবি ব্যবহার করে করোনাভাইরাসের লক্ষণ রয়েছে কিনা তা শনাক্ত করা যাবে।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওল্ফগ্যাং গ্রুবার জানিয়েছেন, সেমিক আরএফ’র স্ক্যানিং অ্যাপটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একত্রে সাথে তৈরি করা হয়েছে। অনুমোদনের পেলেই আগামী মাসের শেষের দিকে এটি চালু করা হবে। এই পদ্ধতিতে স্মার্টফোনে তোলা চোখের ছবি ব্যবহার করে করোনাভাইরাসের লক্ষণ রয়েছে কিনা তা শনাক্ত করা যাবে। এ ভাইরাসের লক্ষণটির নামকরণ করা হয়েছে “গোলাপী চোখ”।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গ্রুবার বলেন, “গোলাপী রঙের ২০ লাখেরও বেশি শেড থেকে কোভিড-১৯ ভাইরাসটিকে আলাদা করতে পেরেছি।”তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ৭০ হাজার জনেরও বেশি মানুষের শরীরে অ্যাপটি ব্যবহার করা হয়েছে। অ্যাপটি প্রতি সেকেন্ডে ১ কোটি স্ক্যান করতে পারে।
“আপনি আপনার ফোনে অ্যাপটি ব্যবহার করে উভয় চোখের ছবি তুলুন। তারপর মূল্যায়নের জন্য প্রেরণ করুন। পরীক্ষিত ব্যক্তির স্মার্টফোনের কিউআর কোড হিসেবে ফলাফল সংরক্ষণ করা হবে,” গ্রুবার যোগ করেন।
এদিকে, চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশে প্রথম এ ভাইরাসের জন্য নমুনা পরীক্ষা হয়। ৮ মার্চ শনাক্ত হয় প্রথম কোভিড-১৯ রোগী।
দেশে এ পর্যন্ত ৫০ লাখ ৩৭ হাজার ৮৩৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৫৭ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। তাতে শনাক্তের হার দাঁড়াচ্ছে ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে, ১৫ মাসে বাংলাদেশ যত লোকের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করাতে পেরেছে, তার চেয়ে বেশি মানুষকে মাত্র দুই মাসের মধ্যে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোর তাগিদ
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিসংখ্যান বিষয়ক আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, নমুনা পরীক্ষার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে ৫০তম। বাংলাদেশে প্রতি ১ মিলিয়ন জনসংখ্যার বিপরীতে এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩০ হাজার ৩৫৪ জনের।
এ তালিকায় এর উপরে থাকা ১৭টি দেশে শনাক্ত রোগী বাংলাদেশের তুলনায় কম হলেও, সেসব দেশে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে বেশি। তবে মার্চের শেষ দিকে সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়তে থাকায় দেশজুড়ে নমুনা পরীক্ষাও বাড়িয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত দুই সপ্তাহে দেশে ৪ লাখ ২০ হাজার ৮০৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। সে হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার ৫৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
রেকর্ড নমুনা পরীক্ষার এই সময়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের রেকর্ডও নিয়মিত ভাঙছে। সংক্রমণের উর্ধ্বমুখী প্রবণতা থাকায় এই ১৪ দিনের পাঁচ দিনই নমুনা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ২৩ শতাংশের বেশি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, “টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো উচিত। ঢাকা শহরে অ্যান্টিজেন টেস্ট ব্যাপকভাবে বাড়ানো উচিত, কেননা সংক্রমণ এখন অনেক। অ্যান্টিজেন টেস্ট সেখানেই সফল হয়, যেখানে সংক্রমণটা বেশি।
আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, “এমনভাবে টেস্ট করতে হবে, যেন শনাক্তের হার ১০ এর নিচে থাকে। তাহলে সেটা স্ট্যান্ডার্ড হবে। সেজন্য টেস্টও বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সংক্রমণ হয়েছে যাদের, তাদের শনাক্ত করে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা করা গেলে সংক্রমণ ছড়াবে না।”
নমুনা পরীক্ষার পাশাপাশি মহামারী নিয়ন্ত্রণের অন্যান্য প্রক্রিয়াতেও নজর দিতে বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, “টেস্ট বাড়াতে পারলে ভালো। টেস্ট করে আক্রান্তদের আলাদা করে আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা গেলে… ট্রেসিংও তো হচ্ছে না। আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিনও মানুষ মানছে না। এটা না মানলে তো হবে না।”
এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে সংক্রমণ কমানো সম্ভব হবে না বলে মনে করেন করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বলেন, “আমরা নমুনা পরীক্ষা করে যে তথ্যগুলো পাচ্ছি, সে অনুযায়ী কি কোনো ব্যবস্থা করা যাচ্ছে? যে মানুষগুলো মারা গেল, তারা কেন মারা গেল?
“নমুনা পরীক্ষা যদি বাড়ানো হয়, তাহলে তো সংক্রমণ ১০ শতাংশের নিচে আসবে না। আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন করতেই হবে। এখন যাদের করোনাভাইরাস হচ্ছে, সবাইকে কি আমরা আইসোলেট করতে পারছি? পারছি না তো।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে দৈনিক যে তথ্য আসছে, সে অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কিনা- সেটি বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করেন অধ্যাপক নজরুল। আমরা প্রতিদিনের নমুনা পরীক্ষা থেকে যে তথ্যগুলো পাচ্ছি, সেখান থেকে দেখতে হবে- সবাইকে আইসোলেশন করা হল কিনা, চিকিৎসা করা গেল কিনা। যারা মারা গেল, তারা কি চিকিৎসা পাওয়ার পরে মারা গেল? নাকি এমনি এমনি মারা গেল? চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেল কি না, অক্সিজেনের সঙ্কটে মারা গেল কি না- এগুলো নিয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭৩৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ