কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার ভাওরখোলা ইউনিয়নের (ইউপি) আলোচিত চেয়ারম্যান ফারুক সরকার আব্বাসীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার(৩১ মার্চ) বিকালে তাকে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আব্বাসী মেঘনার ভাওরখোলা গ্রামে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নাজমা বেগম (৫০) নামে এক নারীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি। এছাড়া ওই হত্যাকাণ্ডের দিন তার বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় তাকে প্রধান আসামি করে আরেকটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। ওই অস্ত্র মামলায় জেলা ও মেঘনা থানা পুলিশের সদস্যরা ঢাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে ছয়টি হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শাহরিয়ার মোহাম্মদ মিয়াজী বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল দুটি মামলায় ওই চেয়ারম্যান উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের আগাম জামিনে রয়েছেন। তবে বাদীপক্ষ ওই জামিন বাতিলের জন্য আপিল করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই চেয়ারম্যানের অস্ত্র মামলার আগাম জামিন আপিল বিভাগ স্থগিত করেছেন বলে আমরা জেনেছি। এরপর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য গত দুদিন আমরা তাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখি। বুধবার নিশ্চিত হই, অস্ত্র মামলায় তাকে উচ্চ আদালতের দেওয়া আগাম জামিনটি স্থগিত করা হয়েছে। এরপর অভিযান চালিয়ে তাকে বুধবার বিকেলে ঢাকার হাজারীবাগ থানার পূর্ব রায়েরবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মেঘনা থানার ওসি আবদুল মজিদ বলেন, ফারুক সরকার আব্বাসীর উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন আপিল বিভাগ স্থগিত করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বুধবার জেলা পুলিশের একাধিক দল যৌথ অভিযান চালিয়ে আব্বাসীকে গ্রেপ্তার করে।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর আব্বাসীকে কুমিল্লা আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গত ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে আব্বাসীর সঙ্গে বিরোধ চলছিল উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম সিরাজের। এর জের ধরে ১৯ ফেব্রুয়ারি ভাওরখোলা গ্রামে আব্বাসীর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী সিরাজ ও তার ভাই আবদুস সালামের ঘরে হামলা চালিয়ে ছয়জনকে কুপিয়ে আহত করে। এর মধ্যে মারা যান সালামের স্ত্রী নাজমা বেগম। এ ঘটনার পরদিন ফারুক আব্বাসীকে প্রধান আসামি করে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১৫-২০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের দেবর সিরাজুল ইসলাম।
এ ছাড়া আব্বাসীর বিরুদ্ধে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে নায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যার পর এলাকায় এসেই ভয়ংকর হয়ে ওঠেন ফারুক আব্বাসী। এরই মধ্যে সোনারগাঁয়ে একটি ট্রিপল মার্ডারের ঘটনা ঘটান তিনি। এ ছাড়া ঢাকায় আরেকটি হত্যাকাণ্ডে তার নাম রয়েছে। জমি দখল, বাড়ি নির্মাণে চাঁদাবাজি, মেয়েদের বিয়ে থেকে চাঁদা আদায়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি সবই করেন তিনি। তিনি ইউনিয়ন পরিষদেও যান না, বাড়িতে বসেই সব কাজ সারেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, এলাকায় চাঁদাবাজি করে আব্বাসী বাহিনী। স্থানীয় কৃষকদের জমিতে জোর করে মাছ চাষের (মাছের প্রজেক্ট) অভিযোগ রয়েছে আব্বাসীর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ২০১৯ সালে স্থানীয় কৃষকেরা মেঘনা-হোমনা আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
আব্বাসীর ক্ষমতার উৎস কোথায়, তা নিয়ে স্পষ্ট করে কেউ কিছু বলছেন না। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিকুল আলম বলেন, ফারুক আব্বাসী গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তবে তিনি দলের কোনো পদে নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ক্ষমতাসীন সরকারের ছত্রছায়াতেই আব্বাসী অপরাধে ফুলেফেপে উঠেছে। তার বিরুদ্ধে তাই অতটা একটা ব্যবস্থা নিতেও দেখা যায় না। ক্ষমতাসীন দলের প্রশ্রয়ে লাগামহীন অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে, প্রশাসনের নাকের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে চলছে। তারা বলেন, এবারও আব্বাসী প্রভাব দেখিয়ে ছাড়া পাবে, আবার আগের মত নিজের কর্মকাণ্ড চালাবে। প্রভাবশালীদের শাস্তি হয় না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১১৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ