অমর একুশে বইমেলা ২০২১-এর সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন থেকে বইমেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায় এবং শেষ হবে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে। আজ বুধবার (৩১ মার্চ) থেকেই এই সময়সূচি কার্যকর হবে। দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
বাংলা একাডেমির তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক (জনসংযোগ) অপরেশ কুমার ব্যানার্জি এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে গত সোমবার (২৯ মার্চ) করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনার ভিত্তিতে অমর একুশে বইমেলার সময় এক ঘণ্টা কমানো হয়। ফলে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলছিল।
প্রতিবছর পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে একুশে বইমেলা হয়ে এলেও এবার মহামারীর কারণে তা পিছিয়ে গত ১৮ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে। তখন থেকে প্রতিদিন বিকেল ৩টায় শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলছিল। আর ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা রাখা হচ্ছিল বইপ্রেমিদের জন্য।
এদিকে বইমেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের খরা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, ক্রেতা-দর্শনার্থীর অভাবে বইমেলা খাঁ খাঁ করছে। এ কারণে মেলায় অংশ নেয়া স্টলের বিক্রয়কর্মীরা অলস সময় পার করছেন। একে অন্যের সঙ্গে খোশগল্প করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটাতে হচ্ছে তাদের।
বইয়ের বিক্রি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রতিটি স্টলের কর্মীরা। তাদের দাবি, পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, এবার স্টলের খরচ তোলায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য দুরূহ হয়ে দাঁড়াবে।
মেলার এ চিত্র সম্পর্কে আলোর ভূবন স্টলের মেহেদী হাসান বলেন, ‘এবারের মেলার বিক্রি পরিস্থিতি খুবই খারাপ। দর্শনার্থীই আসছে না, তাহলে বিক্রি হবে কিভাবে! তিনি আরও বলেন, ‘আমি আট বছর ধরে বইমেলায় অংশগ্রহণ করছি। এর আগে কখনো বিক্রি পরিস্থিতি এতো খারাপ ছিল না। বিক্রি খারাপ হওয়ার পেছনে করোনাভাইরাসের প্রভাব যেমন আছে, তেমন মেলা পেছানোও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা হলে বিক্রি পরিস্থিতি এর থেকে ভালো হতো বলে আমাদের ধারণা।’
করোনার কারণে এবার বেশিরভাগ মানুষই মেলায় আসতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এমনকি কবি-লেখকদের আনাগোনাও ছিল কম।
কবি আরাফাত রহমান বলেন, ‘বইমেলাতে এসে কোনোভাবেই মনে হচ্ছে না এটা বইমেলা! মনে হচ্ছে এটা বিকাশমেলা। কারণ, করপোরেট ব্রান্ড বিকাশের বিজ্ঞাপনে বই-এর বিজ্ঞাপন হারিয়েছে।’
এবারের মেলা সম্পর্কে জানতে চাইলে লেখক মাহতাব হোসেন বলেন, ‘মেলায় এবার একটি স্টল থেকে অন্য স্টলের মধ্যে বেশ দূরত্ব রাখা হয়েছে। চাইলে সচেতনভাবে সাস্থ্যবিধি মেনে বই কেনার সুযোগ রয়েছে। তবে বেচাকেনা একেবারেই কম। তাই সরকারিভাবে প্রকাশকদের স্বার্থ দেখা উচিত। সরকারি গ্রন্থাগার ও স্কুল কলেজে সরকারিভাবে বই কেনা উচিত। তাহলে লেখকেদের সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশকরাও উপকৃত হবেন।’
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উত্তর-পশ্চিম দিকে বইয়ের স্টলে বসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ১২ বছর ধরে বইমেলায় অংশগ্রহণ করছি, এতো খারাপ পরিস্থিতি আগে কখনো দেখিনি। শুধু আমাদের না, সবারই একই অবস্থা। প্রতিটি স্টলে তাকিয়ে দেখেন ক্রেতা-দর্শনার্থী নেই। স্টলের লোকজন অলস সময় পার করছে। এমনকি মেলার দর্শনার্থী গুনে দেখেন, স্টলগুলোতে যে পরিমাণ কর্মী আছে দর্শনার্থী তার অর্ধেকও নেই।’
মেলায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা আসিফ আহমেদ বলেন, ‘মেলার দর্শনার্থীর চিত্র দেখে আমি নিজেই হতাশ। করোনার মধ্যে কম মানুষ আসবে ধারণা করেছিলাম, কিন্তু এতো কম আসবে কল্পনাও করতে পারিনি। মেলায় যে মানুষ দেখছি তার বেশিরভাগই বিভিন্ন স্টলের কর্মী।’
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৯৪৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ