অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত করোনাভাইরাসের টিকা রফতানি বন্ধ করেছে ভারত। তবে একটি সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন রফতানি দেশটি বন্ধ করেনি। পর্যায়ক্রমে এই টিকা রফতানি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে ওই সূত্রটি। তবে কবে থেকে এই টিকা সরবরাহ শুরু হবে সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ নতুন করে বেড়ে যাওয়ায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড ভ্যাকসিন রফতানি সাময়িকভাবে স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। বৃহস্পতিবার ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ২৫ মার্চ থেকে প্রতিষ্ঠানটির আর কোনও টিকা রফতানি করা হবে না।
তবে একই দিন ভারতের একটি সরকারি সূত্র রয়টার্সকে বলেছেন, ‘অভ্যন্তরীণ টিকাদান চালু রাখার জন্য টিকা রফতানি স্থগিত করা হয়েছে, আসন্ন সপ্তাহ ও মাসগুলোতে পর্যায়ক্রমে সহযোগী দেশগুলোকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহ অব্যাহত রাখবে ভারত। ওই সূত্রটি জানায়, এই অবস্থানের কোনও বদল হয়নি। আমরা অন্য বহু দেশের মতো ভ্যাকসিন রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করিনি।
টিকার ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গ্যাভির নেতৃত্বে কোভ্যাক্স নামের এই আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কাজ করছে। রয়টার্স জানিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদক সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইনডিয়া এ পর্যন্ত ৭৬টি দেশে মোট ৬ কোটি ৫০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ১ কোটি ৭৭ লাখ ডোজ পেয়েছে কোভ্যাক্স। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে কোনো টিকার চালান বিদেশে পাঠানো হয়নি।
কোভ্যাক্সের টিকা ক্রয় ও বিতরণে যুক্ত থাকা জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফ রয়টার্সের প্রশ্নের উত্তরে এক ইমেইলে জানিয়েছে, মার্চ ও এপ্রিলে স্বল্প আয়ের দেশগুলোর জন্য যে টিকার চালান সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে পাঠানোর কথা ছিল, তার রপ্তানির অনুমোদন না মেলায় সরবরাহ বিলম্বিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।“যত দ্রুত সম্ভব টিকার সরবরাহ যাতে পাওয়া যায়, সেজন্য ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে কোভ্যাক্স,” বলেছে ইউনিসেফ।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ফের বাড়তে থাকায় ভারত সরকার টিকা রপ্তানি আপাতত স্থগিত রাখার এ পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের একজন কর্মকর্তা বলছে, এটা সাময়িক পদক্ষেপ। অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কর্মকর্তারা বলেছেন, এপ্রিল পর্যন্ত টিকা সরবরাহ সীমিত থাকতে পারে, তবে মে নাগাদ আরও অন্তত একটি টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেতে পারে; তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে। তবে এ বিষয়ে ভারত সরকারের বা সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি এখনও আসেনি। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্য, ব্রাজিলসহ বেশ কয়েকটি দেশেও সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকা সরবরাহ বিলম্বিত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
এদিকে ভারত থেকে টিকা রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেলে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম ডোজের টিকা দেয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে- এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। করোনাভাইরাসের টিকা রপ্তানি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে- এমন খবরের পর এই আশঙ্কার কথা জানানো হল।
এবিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, টিকা রপ্তানির কথা তারা শুনেছেন। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু জানানো হয়নি। তিনি বলেন, ভারত যদি রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ে এবং তার ফলে আর কোন টিকা যদি না আসে তাহলে নতুন করে টিকা দেয়াটা কঠিন হয়ে পড়বে।
ভারতের টিকা যদি না পাওয়া যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে ৩০ লাখ বাকি ছিল, এই মাসে ৫০ লাখ বাকি, মোট ৮০ লাখ। এগুলো না পেলে নতুন কাউকে এন্ট্রি কীভাবে করাবেন? রপ্তানি বন্ধ করা হলে সর্বনাশের আর কিছু বাকি থাকবে না,” বলেন ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন। তবে বাংলাদেশের এখনো দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়ার মতো সক্ষমতা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। এক পর্যায়ে উৎপত্তিস্থল চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশে এর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তবে আশার কথা হচ্ছে, এরইমধ্যে করোনার একাধিক টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে।
ওয়ার্ল্ডোমিটারস-এর তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা তিন কোটি সাত লাখ চার হাজার ২৯২। মৃত্যু হয়েছে পাঁচ লাখ ৫৮ হাজার ৪২২ জনের। আক্রান্তের হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ব্রাজিল। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ২২ লাখ ২৭ হাজার ১৭৯। এর মধ্যে তিন লাখ এক হাজার ৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ১৩। এর মধ্যে এক লাখ ৬০ হাজার ৭২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৮০ হাজার ৮০৮। এর মধ্যে আট হাজার ৭৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। উৎপত্তিস্থল চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৯০ হাজার ১২৫। এর মধ্যে চার হাজার ৬৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ