করোনাভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবিলায় চট্টগ্রামে উন্মুক্ত স্থানগুলোতে সভা-সমাবেশ, ওরশ, মিলাদ মাহফিল, মহোৎসব ও অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।
রোববার (২১ মার্চ) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় এ নির্দেশনা দেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মমিনুর রহমান। তিনি বলেন, পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে সভা-সমাবেশ, ওরশ, মিলাদ মাহফিল, মহোৎসব ও অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপন আপাতত বন্ধ থাকবে। এ নির্দেশ না মানলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ডিসি মমিনুর রহমান জানান, স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে করোনা সংক্রমণ আবারও বেড়ে গেছে। মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করোনার ঝুঁকি মোকাবিলায় এখন থেকে ক্লাব, কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল, হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোতে সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানে ১০০ জনের বেশি অতিথি সমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠান চলাকালে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি ও কমপক্ষে ৩ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এ ব্যাপারে কমিউনিটি সেন্টার ও হোটেল-রেস্টুরেন্ট মালিকদের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে।
এদিকে যারা করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করতে হবে। আগামী ৮ এপ্রিল থেকে দেশে করোনাভাইরাসের টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। রোববার (২১ মার্চ) দুপুর ১২টায় কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএসএমডি) নতুন ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, করোনার টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। করোনা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক অনলাইনে যুক্ত হয়ে বলেন, জনগণ সরকারকে সহযোগিতা না করলে দেশ করোনামুক্ত হবে না। তাই দেশ করোনামুক্ত করতে সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
সাম্প্রতিক সময়ে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ইদানীং সময়ের করোনা বেড়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। কারণ মানুষজন বেড়াতে যাচ্ছেন। কক্সবাজার, বান্দরবান যাচ্ছেন। বিয়ে, পিকনিক ও ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে। গত ১৫ দিনে কক্সবাজার প্রায় ২৫ লাখ মানুষ ভ্রমণের জন্য গেছেন। এদের কেউই স্বাস্থ্যবিধি মানেনি, মাস্ক ব্যবহার পরেনি। এসব কারণে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কোভিড-১৯ মহামারির থাবায় বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে প্রাণহানির ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ১২ কোটি ২৭ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। সেই সাথে মৃতের সংখ্যা ২৭ লাখ ৯ হাজার ছাড়িয়েছে।
রবিবার (২১ মার্চ) সকাল ১১টার দিকে জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় (জেএইচইউ) থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ২৭ লাখ ৯ হাজার ৪২৩ জনে। এছাড়া, ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ২৭ লাখ ৪৫ হাজার ২৬৯ জনে। চীনের উহানে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। গত বছরের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে মহামারি ঘোষণা করে। এর আগে একই বছরের ২০ জানুয়ারি জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও। করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত ২ কোটি ৯৭ লাখ ৮২ হাজার ৭৫৫ জন করোনায় আক্রান্ত এবং ৫ লাখ ৪১ হাজার ৯০৯ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল আক্রান্ত ও মৃত্যুর দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগী এক কোটি ১৯ লাখ ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৯২ হাজার ৭৫২ জনের। পৃথিবীর দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারত করোনায় আক্রান্ত দেশের তালিকায় তৃতীয় এবং মৃত্যু নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। দেশটিতে মোট আক্রান্ত এক কোটি ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ছাড়িয়েছে এবং মারা গেছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫৫৮ জন।
বাংলাদেশ পরিস্থিতি
দেশে ২৪ ঘণ্টায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে শনাক্ত কমলেও মৃত্যু বেড়েছে বলে শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোন সংক্রান্ত নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় এই ভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে আট হাজার ৬৬৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া, গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৮৬৮ জনের শরীরে নতুন করে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। যার ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৭০৬ জনে পৌঁছেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০০৯
আপনার মতামত জানানঃ