কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে গঠিত জি৭ জোটের মধ্যে একমাত্র জাপানেই সমকামীদের বিয়ের অনুমোদন নেই। মানসিক দুর্ভোগের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে জাপানের বিভিন্ন জেলা আদালতে বেশ কয়েকটি মামলা করে একদল সমকামী দম্পতি। ওই সব মামলার প্রথম রায় ঘোষণা করল দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় সাপ্পোরো শহরের একটি আদালত। রায়ে সমকামীদের বিয়ের পক্ষে মত দেয়া হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রটার্সের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
জাপানের সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে, বিয়ে উভয় লিঙ্গের মধ্যে হতে হবে। তবে সংবিধানের এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে সাপ্পোরোর ওই আদালত। তাদের ভাষ্য, দম্পতিদের সমতার কথাও সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে।
সাপ্পোরোর আদালতের এ রায় লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার, কুইয়ারদের (এলজিবিটিকিউ) অধিকার নিয়ে কাজ করা কর্মীদের প্রতীকী জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জাপানে যে ব্যবস্থা চালু আছে তাতে সমলিঙ্গে বিয়ে হলে সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হন বিবাহিতরা। তাদের জীবনসঙ্গীর কোনো বাচ্চা থাকলে তারাও সম্পত্তির অধিকার পায় না। তবে পৌরসভাগুলো পার্টনারশিপ সার্টিফিকেট দেয়। তাতে সমলিঙ্গে বিয়ে হওয়া জুটির বাড়ি ভাড়া করা বা চিকিৎসার সুবিধা পেতে কোনও অসুবিধা হয় না। কিন্তু তারা এখনও অন্যদের মতো পুরো আইনি অধিকার পান না। অনেক অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত।
জাপানে ১৮৮০ সাল থেকেই সমকামে আইনত কোনো বাধা নেই। দেশটি সমকামী, উভকামী এবং হিজড়া সম্প্রদায়ের (এলজিবিটি) ব্যাপারে এশিয়ার অন্যান্য দেশের চেয়ে তুলনামূলক বেশি সহনশীল। তবে খোলামেলাভাবে সমকামী দাবি করার ব্যাপারে এখনও সমাজে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে।
এসবের অবসান চেয়ে এবং সমলিঙ্গের বিয়েকে বৈধতা দিতে সরকারকে বাধ্য করার জন্য ২০১৯ সালে ভালোবাসা দিবসে ১৩ সমকামী জুটি বিভিন্ন আদালতে মামলা করেন।
আজ বুধবার (১৭ মার্চ) প্রথম মামলার রায় দিয়েছে সাপ্পোরোর আদালত। ছয়জন সমকামী এ মামলাটি করেছিলেন। এই রায়ে তারা উল্লসিত বলে জানিয়েছেন। আবেদনকারীরা আদালতে ক্ষতিপূরণও দাবি করেছিলেন। তাদের যুক্তি ছিল, আইনসঙ্গতভাবে বিয়ে করতে না পেরে তারা যে মানসিক বেদনার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন, তার জন্য সরকারকে প্রত্যেককে দশ লাখ ইয়েন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আদালত অবশ্য এই দাবি মানেনি।
তবে মামলাকারীরা জানিয়েছেন, তাদের বিয়ে করতে না দেওয়ার বিষয়টিকে আদালত অসাংবিধানিক বলেছে, এটাই তাদের বড় জয়।
কয়েকটি বাণিজ্যিক সংস্থা জানিয়েছে, জাপানে সমলিঙ্গের বিয়ে স্বীকৃত নয় বলে তারা অসুবিধায় পড়েন। অনেক সময় দক্ষ মানুষেরা অন্য দেশে চলে যান। গত বছর অ্যামেরিকান চেম্বারস অফ কমার্স বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, এই পরিস্থিতির জন্য আন্তর্জাতিকক্ষেত্রে জাপানের অসুবিধা হচ্ছে। কয়েকটি কোম্পানি এই সমস্যা মেটাতে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে, তবে তার সীমাবদ্ধতা আছে।
জাপানের সব জেলা আদালত সমকামীদের বিয়েকে সাংবিধানিক হিসেবে ঘোষণা করলেও সেটি বৈধ হবে কি না, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে অনেকে এ রায়কে বিয়ে-সংক্রান্ত সমতার ক্ষেত্রে একধরনের জয় হিসেবে দেখছেন।
জাপানের এক নাগরিক টুইট বার্তায় বলেন, ‘সমকামীদের বিয়ে বৈধ করার বিষয়ে আমরা খুব বেশি দূরে নেই।’
তবে জাপান সরকারের দাবি, সংবিধানে সমলিঙ্গ বিয়েকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
কিন্তু আইনজ্ঞদের মতে, দুইজনের সম্মতিতে বিয়ের কথা সংবিধানে বলা হয়েছে। তাই সমলিঙ্গের দুই জন যদি বিয়ে করতে সম্মত হন, তা হলে তাদেরও বাধা দেওয়া উচিত নয়।
জাপানের অন্যান্য জায়গায় এই ধরনের চারটি মামলা চলছে। বুধবার সাপ্পোরোর আদালতে দেওয়া এই রায় সেগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
জাপানে জন্মহার নিম্নমুখী হওয়ায় জাপান সরকার অনেকটাই উদ্বিগ্ন। তারা বিয়ে ও সন্তানের জন্য নাগরিকদের উদ্বদ্ধু করতে নানা রকম পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে এ মুহুর্তে নতুন এ সমকামী বিয়ের পদক্ষেপ কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মনে সংশয়ও থাকছে।
এসডব্লিউ/কেএইচ/১৯৩০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ