সংবাদ প্রকাশের বিনিময়ে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোকে অর্থ দেওয়ার বিধান রেখে গুগল-ফেসবুকের জন্য বিশ্বে প্রথম দেশ হিসেবে আইন পাস করেছিল অস্ট্রেলিয়া। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট আইনটি পাস হয়। নতুন এই আইনের কারণে গুগল-ফেসবুক তাদের প্ল্যাটফর্মে অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় নিউজ কন্টেন্ট প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট সংবাদ মাধ্যমকে অর্থ দিতে বাধ্য থাকবে। এই আইনের অধীনেই নিউজ কনটেন্টের জন্য প্রথম দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমকে অর্থ দিচ্ছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। গতকাল মঙ্গলবার(১৬ মার্চ) মিডিয়া মোগল খ্যাত বৈশ্বিক গণমাধ্যম নেটওয়ার্কের মালিক রুপার্ট মার্ডকের প্রতিষ্ঠান নিউজ করপোরেশনের সঙ্গে এ-সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছে ফেসবুকের। খবর বিবিসি
এদিকে গুগলের বিরুদ্ধে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ উঠছিল দীর্ঘদিন থেকেই। এবার প্রমাণ মিলতেই বড় জরিমানা গুণতে হলো গুগলকে। ইতিমধ্যেই ৫০০ কোটি ডলার জরিমানার মুখে পড়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সংস্থা গুগল।
বিবিসির খবরে জানা যায়, অস্ট্রেলিয়ায় নিউজ করপোরেশনের অধীন সংবাদপত্র, নিউজ পোর্টাল ও টেলিভিশনের সব খবরের জন্য অর্থ দেওয়ার বিষয়ে তিন বছরের একটি চুক্তি হয়েছে। ফেসবুকের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তির ক্ষেত্রে প্রথম প্রতিষ্ঠান এই নিউজ করপোরেশন।
ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমগুলি ভালো কনটেন্ট তৈরি করেও বিজ্ঞাপন পায় না। বেশ কিছুদিন ধরেই এই বিষয়টি নিয়ে বিশ্বে আলোচনা হচ্ছে। যে মডেলে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলি চলে তা নিয়েও বহু কথা হচ্ছে। দেখা যায়, ডিজিটাল মিডিয়ার ভালো কনটেন্ট থেকে গুগল, ফেসবুক রোজগার করছে। কারণ, তারা বিজ্ঞাপন পাচ্ছে। অথচ সেই কনটেন্টের জন্য সংবাদমাধ্যমের পেজটিতে কেউ বিজ্ঞাপন দিচ্ছে না।
অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রক সংস্থার দাবি, নিজেদের পাতায় স্থানীয় সংবাদ পরিবেশন করে তারা অনলাইনে বিজ্ঞাপন বাবদ লাখ লাখ অর্থ আয় করলেও সেই লভ্যাংশ পায় না দেশের প্রকাশকেরা। অথচ, বিজ্ঞাপন থেকে অস্ট্রেলীয় সংবাদ প্রকাশকদের আয় কমছে। অর্থাৎ, যারা ওই সংবাদ আসলে প্রকাশ করছে, তারা সেই সংবাদ থেকে অর্থ পাচ্ছে না। অথচ সেই সংবাদ নেটমাধ্যমে ফেসবুক বা গুগল তুলে দিয়ে মুনাফা করছে।
এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখতেই নয়া আইন করা হয়েছে বলে দাবি অস্ট্রেলীয় সরকারের।
অস্ট্রেলিয়ার নতুন আইনে ফেসবুকে শেয়ার হওয়া সব কনটেন্টের জন্য কমবেশি অর্থ পাবে সংবাদমাধ্যমগুলো। বিষয়টি নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। বিভিন্ন দেশে আইন করে ফেসবুক থেকে লভ্যাংশের ভাগ নেওয়ার বিষয়েও কথা ওঠে। এর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মার্ডকের নিউজ করপোরেশনের সঙ্গে ফেসবুকের চুক্তির ঘোষণা এলো।
চুক্তির ঘোষণা দেওয়া হলেও আগামী তিন বছর ফেসবুকের কাছ থেকে নিউজ করপোরেশন কী পরিমাণ অর্থ পাবে, তা প্রকাশ করেনি তারা। গত বছর গুগল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও এমন একটি চুক্তি করে মার্ডকের প্রতিষ্ঠান।
গুগলের জরিমানা
এদিকে অনেক আগে থেকেই ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ উঠছিল গুগলের ওপর। প্রমাণ মিলতেই বড়সড় ধাক্কা খেলো গুগল। ইতিমধ্যেই ৫০০ কোটি ডলার জরিমানার মুখে পড়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সার্চ জায়ান্ট গুগল।
ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহার করে ওয়েবসাইট দেখার সময় ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করতে পারে টেক জায়ান্ট গুগল। ফলে কোনো ব্যবহারকারী যদি নিজের তথ্য প্রকাশ করতে না চান, তবে তাকে ‘ইনকগনিটো মোড’ ব্যবহার করতে বলা হয়।
কিন্তু ইনকগনিটো মোডেও ব্যবহারকারীর ওপর নজর রাখছে মার্কিন প্রতিষ্ঠান গুগল- এমন অভিযোগে গত বছরের জুনে তিন ব্যবহারকারী গুগলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তাদের অভিযোগ ছিল, ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করে বিশাল ব্যবসা পরিচালনা করে গুগল।
এমনকি ব্যবহারকারী ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার জন্য ইনকগনিটো মোড চালু করলেও নজরদারি বন্ধ করছে না প্রতিষ্ঠানটি। মামলায় ৫০০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে।
মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন করেছে গুগল। তবে মার্কিন বিচারক যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লুসি কোহ গত শুক্রবার বলেছেন, ইনকগনিটো মোডে থাকার সময় ব্যবহারকারীকে না জানিয়ে তথ্য সংগ্রহের পথ খোলা রাখছে গুগল। এ জন্য গুগলকে ‘ক্লাস অ্যাকশন’ মামলার মুখোমুখি হতে হবে।
তবে গুগলের দাবি, ইনকগনিটো মানে অদৃশ্য নয়। এছাড়া ইনকগনিটো মোডে থাকলেও ব্যবহারকারীর কর্মকাণ্ডে নজর রাখতে পারে ওই ওয়েবসাইট অথবা তৃতীয় পক্ষের কোনো সেবা।
যদিও চলতি বছরের শুরুতে গুগল বলেছিল, তৃতীয় কোনো পক্ষের ট্র্যাকিং কুকি বন্ধ করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া কুকিজের বদলে একই ধরনের কোনো কিছু তারা চালু করবে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৩৫
আপনার মতামত জানানঃ