কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনা স্বাধীন, স্বচ্ছ ও দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেত। মুশতাকের মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ স্থগিত এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে আইনটি পর্যালোচনা করতেও তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার ( ১ মার্চ ) জেনেভায় এক বিবৃতিতে তিনি এই আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের প্রধান। তিনিই মানবাধিকার ইস্যুতে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা।
বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাগারে ছিলেন মুশতাক আহমেদ। সেখানেই তার মৃত্যু হয়েছে। এ আইনের প্রয়োগ স্থগিত করা প্রয়োজন। যারা এ আইনের কারণে কারাগারে তাদের ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। অবশ্যই সবাইকে নিজের স্বাধীন মতামত তুলে ধরার সুযোগ দিতে হবে।
মুশতাকের মৃত্যুর বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের হামলায় ৩৫ জন আহত এবং সাত জন আটকের খবরেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেট। মুশতাকের মৃত্যুতে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেয়ায় রুহুল আমিন নামে একজনকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা করা হয় জাতিসংঘের ওই বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় সরকারকে সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে কারাগারে বন্দিদের নানা ভোগান্তির অভিযোগ পরিষ্কার হওয়া জরুরি। সরকারের সমালোচনার শাস্তি দিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুর্বলভাবে সংজ্ঞায়িত বিধানগুলোর বিষয়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন। জরুরি ভিত্তিতে আইনটির প্রয়োগ স্থগিত করা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে এর বিধানগুলো পর্যালোচনা করা দরকার। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করতে জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস প্রস্তুত রয়েছে।
এর আগে মুশতাকের মৃত্যু ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে ঢাকায় পাশ্চাত্যের ১৩টি দেশের মিশনপ্রধানরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, কার্টুনিস্ট কিশোরের মুক্তি, সাত ছাত্রনেতাসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হওয়া শ্রমিক নেতা রুহুল আমিনের মুক্তির দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ, সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। কিছু বলতে গেলেই সরকার ও পুলিশের নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। সরকারের সমালোচনা করায় ওই আইনে লেখক মুশতাক আহমেদ ও কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত কারাগারেই মারা গেছেন মুশতাক আহমেদ। কিশোরের অবস্থাও ভালো নয়। আবার এটা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নতুন করে একই আইনে মামলার শিকার হয়েছেন রুহুল আমিন। আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও রুহুল আমিননহ সকল বন্দীদের মুক্তি দাবি করছি।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪৫০
আপনার মতামত জানানঃ