বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) উদ্যোগে কোভ্যাক্স কর্মসূচির টিকা বিতরণ শুরু হয়েছে। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে এই কর্মসূচির টিকা পেয়েছে আফ্রিকার দেশ ঘানা। বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ঘানার রাজধানী আক্রায় পৌঁছেছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত করোনার টিকার ৬ লাখ ডোজ বলে খবর প্রকাশ করেছে বিবিসি। বিশ্বের সব দেশের মধ্যে করোনাভাইরাসের টিকার সমবন্টন নিশ্চিত করতে গঠন করা হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স কর্মসূচি।
বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি নিয়ে গড়া জোট কোভ্যাক্সের সঙ্গে করা চুক্তিকে অগ্রাধিকার দিতে করোনা ভাইরাসের টিকা প্রস্তুতকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ডব্লিউএইচওর প্রধান ডা. টেড্রোস অ্যাডহানম গেব্রিয়েসুস। তিনি বলেন, এ উদ্যোগটি কোনো দাতব্য বিষয় নয়, এর সঙ্গে মহামারী জড়িত। গত ২২ ফেব্রুয়ারি ডব্লিউএইচওর নিয়মিত পাক্ষিক ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় ডা. গেব্রিয়েসুস এ আহ্বান জানান।
ব্রিফিংয়ে মহামারী মোকাবিলার সর্বশেষ প্রচেষ্টা সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করেন ডব্লিউএইচওর প্রধান। এ ছাড়া টিকা সহযোগিতা জোরদার করতে এবং অ্যাক্ট এক্সিলারেটর প্রোগ্রামের আওতায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে জি ৭-এর নেতাদের দেওয়া ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন তিনি। এ ছাড়া গত সপ্তাহে ইইউভুক্ত দেশগুলোর কোভ্যাক্সে অতিরিক্ত চার কোটির বেশি ডলার দেওয়া প্রতিশ্রুতির জন্য ধন্যবাদ।
তবে এর আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে গুতেরেস বলেন, দুনিয়া জুড়ে করোনাভাইরাসের যে পরিমাণ টিকা পাওয়া যাচ্ছে তার ৭৫ শতাংশ মাত্র দশটি দেশ ব্যবহার করছে । এখন পর্যন্ত ১৩০টি দেশ এক ডোজ টিকাও পায়নি। এই অবস্থাকে মারাত্মক অন্যায্য ও অন্যায় বলে অভিহিত করেন।
এই পরিস্থিতিতে বুধবার ঘানায় পৌঁছেছে কোভ্যাক্স কর্মসূচির টিকার প্রথম চালান। এই উপলক্ষে ডব্লিউএইচও এবং জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ-এর এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ঘানায় কোভিড-১৯ টিকা পৌঁছানো মহামারি অবসানের শুরু।’
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ ঘানায় করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৮০ হাজার সাতশ’ জনের আর মৃত্যু হয়েছে ৫৮০ জনের। তবে কম সংখ্যক পরীক্ষার কারণে প্রকৃত আক্রান্ত ও মৃতের পরিমাণ অনেক বেশি বলে মনে করা হয়।
করোনাকে প্রায় এক বছর আগে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও। করোনা মোকাবিলায় বৈশ্বিক কোভ্যাক্স উদ্যোগ ঘোষণার প্রায় আট মাস পর প্রথম চালান কোনো দেশে সরবরাহ করা হলো।
ডব্লিউএইচও ও জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) এক যৌথ বিবৃতিতে এ ঘটনাকে ‘স্মরণীয়’ বলে মন্তব্য করে। তারা জানায়, ঘানাতে মহামারির সঙ্কটময় পরিস্থিতির অবসান ঘটাবে এ টিকা। দুই সংস্থা আরও জানায়, বেশি কিছু মধ্যম ও নিম্ন আয়ের দেশ কোভ্যাক্সের টিকার প্রথম চালানগুলো পাচ্ছে, যার অংশ হিসেবে প্রথম এ টিকা পেল ঘানা।
ধনী দেশগুলো যেখানে নিজেদের নাগরিকদের জন্য টিকা কিনে ফেলে, সেখানে সবার জন্য টিকার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসে কোভ্যাক্স। এ কর্মসূচিতে ধনী দেশগুলোও অর্থ সহায়তা দিচ্ছে।
এ বছরের মধ্যে ১৯০টি দেশে অন্তত ২০০ কোটি টিকার ডোজ সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে প্ল্যাটফর্মটি। ৯২টি গরিব দেশে সরবরাহে নিশ্চিত করতে চায় কোভ্যাক্স। মূলত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার সরবরাহ করবে তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৯৩৮
আপনার মতামত জানানঃ