দায়িত্ব গ্রহণের এক মাসের মাথায় প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে এনেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ক্ষমতায় এসে এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের প্রথম দিনই যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস চুক্তিতে ফেরানোর একটি আদেশে সই করেন। এর ঠিক ৩০ দিন পর শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিতে ফিরল দেশটি।
এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তনি ব্লিঙ্কেন বলেন, এরপর থেকে জলবায়ু পরিবর্তন ও বিজ্ঞান কূটনীতি আমাদের পররাষ্ট্রনীতির আলোচনায় কখনো আসবে না। বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকৃত হুমকি চিহ্নিত করা ও আমাদের বিজ্ঞানীদের কথা মেনে চলা হবে আমাদের দেশীয় ও পররাষ্ট্রনীতির প্রথম অগ্রাধিকার। জাতীয় নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসেবার প্রচেষ্টার উদ্যোগ বিনিময় এবং আমাদের অর্থনৈতিক কূটনীতি ও বাণিজ্যিক আলোচনায় এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসন্ন জলবায়ু কূটনীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার এবং আগামী তিন দশকের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে বাইডেন প্রশাসনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ওয়াশিংটন প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরেছে।
জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন বা ইউএনএফসিসিসি ১৯৯২ সালে প্রণীত হয়। ২৩ বছর ধরে অনেক সাধনার পর ২০১৫ সালে প্যারিসে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সারা বিশ্ব চুক্তিবদ্ধ হয়। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধের লক্ষ্যে ২০১৫ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে জাতিসংঘের নেতৃত্বে ওই জলবায়ু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্যারিস চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর পক্ষে ট্রাম্পের যুক্তি, এটি মার্কিন স্বার্থবিরোধী। যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষাকারী একটি পরিবেশ চুক্তি করতে তিনি আগ্রহী। তবে সেটা যদি সম্ভব না হয়, তা নিয়ে প্রশাসনের কোনো উদ্বেগ নেই।
বিশ্বের ১৮০টি দেশের সমর্থনে করা প্যারিস জলবায়ু চুক্তির মূল লক্ষ্য বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোকে অর্থসহায়তা দেওয়া। ঐতিহাসিক এই চুক্তিতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির গড় হার দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে বা সম্ভব হলে দেড় ডিগ্রির মধ্যে রাখতে বিশ্বের দেশগুলো একমত হয়।
নেদারল্যান্ডসের জলবায়ু বিজ্ঞানী নিকলাস হন বলেছেন, বাইডেনের জলবায়ু পরিকল্পনাটিই বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমাতে পারে। ২০৫০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে কার্বন নিরপেক্ষ দেশে পরিণত করার পথ প্রস্তুতে প্রতিশ্রুতি আছে বাইডেনের। এছাড়াও ২০৩৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যুৎ খাতকে দূষণমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
বাইডেনের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন বিজ্ঞানী, বিদেশি কূটনীতিক ও বিশ্বনেতারা। জলবায়ু পরিবর্তন বৈশ্বিক সমস্যা। কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যাওয়া, হিমবাহ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের ঊচ্চতা বৃদ্ধিসহ নানা কারণে ব্যাপক পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর বাড়ছে প্রাণহানি। পরিবেশ বাঁচাতে বিশ্বনেতাদের এক হয়ে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই বলে অনেকদিন ধরেই বলে আসছেন পরিবেশবাদীরা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪৫০
আপনার মতামত জানানঃ