মিয়ানমারে অং সান সু চি’র নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশটিতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছে। সেনাশাসনবিরোধী এক বিক্ষোভকারী মারা গেছেন। তিনি এর আগে পুলিশের গুলিতে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন। মিয়া থোয়ে থোয়ে খাইন নামের ২০-বছর বয়সী ওই নারী জলকামান, রাবার বুলেট এবং গুলি করে প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার সময় গত মঙ্গলবার আহত হন। শুক্রবার মিয়া থোয়ে থোয়ে খাইন মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের এক সদস্য।
গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হবার পর গত ৯ই ফেব্রুয়ারি থেকে হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিলো তাকে। তিনি আহত হবার পর মেডিকেল সূত্রগুলোকে উদ্ধৃত করে বিবিসি বার্মিজ বিভাগ জানিয়েছিলো যে ওই নারীর মাথার আঘাত অত্যন্ত গুরুতর। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের ব্যবহৃত জলকামান থেকে পালানোর সময় আচমকা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এক নারী। অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) মুখপাত্র কি টো ফেসবুকের এক পোস্টে জানিয়েছিলেন, মাথায় থাকা হেলমেট ছিদ্র হয়ে গুলিবিদ্ধ হন মিয়া থোয়ে থোয়ে খাইন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, আমরা ন্যায়বিচার চাই। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ওই নারীকে নেওয়ার পর থেকেই হাসপাতাল কর্মীদের ওপর ব্যাপক চাপ এসেছে। সেনাবাহিনীর চাপের কারণে অনেক চিকিৎসক হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছেন। সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ও তথ্যমন্ত্রী জ মিন টুন চলতি সপ্তাহে ওই নারীর গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এই ঘটনায় তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। এবার তার মৃত্যুর ঘটনায় এখন আরও চাপের মুখে পড়তে যাচ্ছে জান্তা সরকার।
এদিকে সামরিক অভ্যুত্থানের জেরে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আসছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর উপর। যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার মিয়ানমারের বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য ও কানাডা। বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী তিন জেনারেলের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও ভ্রমণ নিষিদ্ধ করছে ব্রিটেন। অন্যদিকে, কানাডা ৯ জেনারেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেন, যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি তাদের মিত্র দেশগুলোরও উচিৎ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এবং দেশটির নাগরিকদের সুবিচার নিশ্চিত করা।
এর আগে ১৯৮৮ এবং ২০০৭ সালে দেশটির কয়েক দশকব্যাপী সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। ১৯৮৮ সালের বিক্ষোভে কমপক্ষে ৩,০০০ বিক্ষোভকারী মারা যায়, আর ২০০৭ সালে মারা গিয়েছিলেন ৩০ জন। দুই ঘটনাতেই হাজার হাজার মানুষকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
গত নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন দল এনএলডি পার্টি বিপুল ব্যবধানে জয় পাওয়ার পর পার্লামেন্টে নতুন অধিবেশন শুরুর আগে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। ১ ফেব্রুয়ারি) সকালে মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা জারি করে দেশটির সেনাবাহিনী। এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দেশের ক্ষমতা কমান্ডার-ইন-চিফ মিন অং হ্লেইংয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অর্থাৎ মিয়ানমারের ক্ষমতা এখন সেনাবাহিনীর দখলে। এছাড়া আগামী এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। সেনা সমর্থিত বিরোধী একটি দলও নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। সু চি গৃহবন্দী রয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে ওয়াকি-টকি ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। মিয়ানমার প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ এনএলডির আরও অনেক নেতাও আটক রয়েছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৯১০
আপনার মতামত জানানঃ