ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, লেখক মুস্তাক আহমেদ ও রাষ্ট্রচিন্তার কর্মী দিদারুল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নানসহ আটজনকে। গত বৃহস্পতিবার পুলিশ আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহসীন সর্দার গণমাধ্যমকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মিনহাজ মান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা তারা পাননি।
এই মামলার অপর সাত আসামির ‘নেত্র নিউজ’এর তাসনীম খলিল, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিক সাহেদ আলম, জার্মানিতে থাকা ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, জুলকারনাইন সায়ের খান, আশিক ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ ও ফিলিপ শুমাখারকেও অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিতে আবেদন জানিয়েছে পুলিশ।
গত বছর ৬ মে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর এবং ব্যবসায়ী-লেখক মুশতাক আহমেদকে গ্রেপ্তার করে র্যাব৷ পরে আরো ১১ জনকে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা দায়ের করেন র্যাব ৩-এর ডিএডি আবু বকর সিদ্দিক ৷ পরেরদিন গ্রেপ্তার করা হয় মিনহাজ মান্নান ও দিদারুলকেও৷
ফেসবুক ব্যবহার করে জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধ, করোনাভাইরাস মহামারি সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্র/সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অভিপ্রায়ে অপপ্রচার বা বিভ্রান্তি ছড়ানো, অস্থিরতা-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে৷ র্যাবের দাবি ‘I am Bangladeshi’ পেইজ থেকে রাষ্ট্রের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে বিভিন্ন পোস্ট দেওয়ায় পেইজে সম্পৃক্ত কিশোর, মুশতাক, দিদারুলকে গ্রেপ্তার করা হয়৷
হোয়াটস অ্যাপ ও ফেসবুক মেসেঞ্জারে কিশোর ও মুশতাকের সঙ্গে তাসনিম খলিল, জুলকারনাইন সায়ের খান, শাহেদ আলম, আসিফ মহিউদ্দিনের ‘ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ’ পাওয়ার দাবিও করে র্যাব৷ দিদারুল ও মিনহাজ ফেসবুকে মুশতাকের ‘ফ্রেন্ড’ উল্লেখ করে মামলায় বলা হয়, ‘‘তাদের সাথে হোয়াটস অ্যাপ ও ফেসবুক মেসেঞ্জারে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে৷’’ সে সময় গ্রেপ্তার হয়ে মিনহাজ মান্নান ও দিদার সেপ্টেম্বরে জামিনে ছাড়া পেলেও এখনো কারাগারে বন্দি আছেন কার্টুনিস্ট কিশোর ও লেখক মুশতাক৷
বাংলাদেশের কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর এবং লেখক মুশতাক আহমেদকে অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। একই সঙ্গে অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ বাতিল কিংবা এর নিবর্তনমূলক ধারা পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া বেশির ভাগ মামলায় করা অভিযোগগুলোর মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের সমালোচনা, গুজব রটানো, বিক্ষোভে সমর্থন, মানহানিকর মন্তব্য, ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা, ভুয়া সংবাদ পরিবেশন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব কারণের সব কটিরই সংজ্ঞা অস্পষ্ট। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পুলিশকে কোনো প্রকার পরোয়ানা ছাড়াই স্রেফ সন্দেহের বশবর্তী হয়ে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দিয়েছে। এর ২০টি ধারার ১৪টিই অজামিনযোগ্য এবং যখনই মামলা হয়, পুলিশ দ্রুত গ্রেপ্তার করে। আসামিকে বিচারকের সামনে হাজির করার পর স্বাভাবিকভাবেই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটা গোষ্ঠীর হাতিয়ার হয়ে উঠেছে, যারা গণমাধ্যমবিরোধী ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিরোধী, তারা এই আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার করছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো সাংবাদিকদের হয়রানি করা ও ভয়ভীতি দেখানো। এই আইনটি বাতিল করার পাশাপাশি কিভাবে গ্রহণযোগ্য কাঠামোতে ইন্টারনেট শিক্ষা বাড়ানো যায় সেটা সাধারণ আইনের মধ্যে থেকেই খুঁজে বের করতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/১৯১৫
আপনার মতামত জানানঃ