বর্তমানে পোস্টাল আইনের আওতায় ডাক বিভাগের সঙ্গে থার্ড ওয়েভ টেকনোলজি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের চুক্তির ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে নগদ। যেখানে ৫১ শতাংশ মালিকানা রয়েছে ডাক বিভাগের। আর ৪৯ শতাংশ থার্ড ওয়েভের। বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তর্বর্তীকালীন অনাপত্তি নিয়ে এখন কার্যক্রম চলছে। এখন চূড়ান্ত লাইসেন্স পাওয়ার কাজ চলছে। বর্তমানে নগদ পরিচালনা করছে থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেড কোম্পানি। গ্রাহকদের কাছে থেকে অর্থ গ্রহণ, ই-মানি সৃষ্টি থেকে শুরু করে প্রতিটি কার্যক্রমই পরিচালিত হচ্ছে বেসরকারি এ কোম্পানির মাধ্যমে। সংগৃহীত অর্থের ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণও করছে থার্ড ওয়েভ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছিল, নগদের কার্যক্রম চালাতে হলে ডাক বিভাগের একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করতে হবে। এ কোম্পানির ৫১ শতাংশ শেয়ার থাকতে হবে ডাক বিভাগের হাতে। যদিও দুই বছরেও সাবসিডিয়ারি কোম্পানি তৈরি করতে পারেনি ডাক বিভাগ।
দৈনিক বণিক বার্তার এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেডই নাম পরিবর্তন করে এখন ‘নগদ লিমিটেড’ হয়ে গিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত সরকারি সব পক্ষের মধ্যেই এখন এ নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে।
দেশে কোনো কোম্পানি গঠন করতে হলে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসে (আরজেএসসি) নিবন্ধনের প্রয়োজন হয়। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর ‘থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেড’ নামের কোম্পানিটি গঠিত হয়। এ কোম্পানির নিবন্ধন নং সি-১৩৪০২৭। তবে সম্প্রতি থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেডের নাম পরিবর্তন করে ‘নগদ লিমিটেড’ করা হয়েছে। কোম্পানিটির নিবন্ধনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন নথিতে নগদ লিমিটেডের শেয়ারধারীদের বিস্তারিত বিবরণ থাকলেও তাতে ডাক বিভাগের নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি।
থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করছেন তানভীর আহমেদ মিশুক। কোম্পানিটির নাম পরিবর্তন হয়ে নগদ লিমিটেড হওয়ার পরও এ পদেই নিয়োজিত রয়েছেন তিনি। নগদের সামগ্রিক পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তানভীর আহমেদ মিশুক ওই দৈনিককে বলেন, এতদিন আমরা ডাক বিভাগের সঙ্গে মুনাফা ভাগাভাগি করতাম। এক্ষেত্রে ডাক বিভাগ ৫১ শতাংশ ও থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস ৪৯ শতাংশ মুনাফার অংশীদার ছিল। কিন্তু গতকাল থেকে ডাক বিভাগ নগদ লিমিটেডের ৫১ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার হয়ে গেছে। আমরা কোম্পানির শেয়ার বিভক্তির বিষয়টি জানিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে জানিয়েছি। ফাইলটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের অপেক্ষায় আছে।
তানভীর আহমেদ মিশুকের দাবি, শুরু থেকেই নগদের সব লেনদেন ডাক বিভাগের নিয়ন্ত্রণে চলছে। তিনি বলেন, থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস শুধু প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করছে। অর্থের সব লেনদেনই ডাক বিভাগ দেখছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সব শর্ত পূরণ করে চলতি মাসেই নগদ লাইসেন্স পাবে।
নগদের কোম্পানিতে রূপান্তরের বিষয়টি সম্পর্কে জানা নেই ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সিরাজ উদ্দিনের। তিনি বলেন, ডাক বিভাগের সেবা হিসেবে নগদের কার্যক্রম চলছে। নগদ নামে কোনো কোম্পানি গঠন হয়েছে বলে আমি শুনিনি। আমাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া কোম্পানি গঠন হলো কীভাবে?
থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিসের ‘নগদ লিমিটেডে’ রূপান্তরের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের অগোচরেই হয়েছে বলে জানালেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেনও।
থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস নামের কোম্পানিটির নাম পরিবর্তনের পর চুক্তিটি কীভাবে হবে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব বলেন, আমাদের না জানিয়েই থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিসের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান করে দ্রুতই ‘নগদ’ বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স নেবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও জানেন না ‘নগদ লিমিটেড’ নামে কোম্পানি গঠনের কথা। গতকাল ওই দৈনিককে তিনি বলেন, নগদ নামে কোনো কোম্পানি গঠনের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমরা কোম্পানিটিকে থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস নামেই জানি। কোম্পানি গঠন করা হলে সেটি থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিসের সঙ্গেই হবে।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী নগদের লাইসেন্স নেয়ার কার্যক্রম চলছে। এজন্য একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন দেয়ার পরই এ বিষয়ে সীমাবদ্ধতা ও ঘাটতি সম্পর্কে জানা যাবে।
ডাক অধিদপ্তর, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো বলছে, আইনি প্রক্রিয়া মেনে নগদের সূচনা হয়নি। এর মধ্যেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বড় হয়ে উঠেছে ডিজিটাল সেবাটি। প্রতি মাসে এর মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ অবস্থায় সেবাটিকে আইনি কাঠামোয় আনতে গিয়ে সব পক্ষকেই জটিলতায় পড়তে হচ্ছে।
নগদ বাংলাদেশ ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মোবাইল ফোন ভিত্তিক ডিজিটাল আর্থিক সেবা। যা একটি অর্থ আদান-প্রদানের পরিষেবা। কোম্পানিটি সরকারি হলেও এটি থার্ড ওয়েভ টেকনোলজি লিমিটেড কর্তৃক পরিচালিত। এটি বাংলাদেশ ডাক বিভাগের পূর্বে চালুকৃত পোস্টাল ক্যাশ কার্ড এবং ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সিস্টেম (ইএমটিএস)-এর নতুন সংস্করণ। ২০১৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাইলট বা পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে নগদের যাত্রা শুরু হয়। ‘নগদ’ যাত্রা শুরু করার পর থেকেই বিভিন্ন আইনি জটিলতা নিয়ে এগোচ্ছে।
এসডব্লিউ/বিবি/কেএইচ/১৮১৭
আপনার মতামত জানানঃ