কাছাকাছি সময়ের মধ্যে পরপর দুবার যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসীম মুনির। বিশেষ করে ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন পাকিস্তানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও হাইড্রোকার্বন খাতে সহযোগিতায় আগ্রহী। রুবিও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নতুন অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও তেল-গ্যাস খাতে ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে আগ্রহী এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম ও বাণিজ্যে অংশগ্রহণকে গভীরভাবে মূল্যায়ন করছে।
গত মাসে ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদ একটি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা পাকিস্তানের দাবির ভিত্তিতে শুল্ক কমানো ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে মূলত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে খনন প্রকল্পে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হবে। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে এই প্রকল্প পরিচালনা করা হবে এবং লিজ সুবিধাসহ বিভিন্ন ছাড়ও দেওয়া হবে। বেলুচিস্তান প্রদেশের রেকো ডিক খনি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ স্বর্ণ ও তামার খনি হিসেবে পরিচিত, যা কানাডাভিত্তিক ব্যারিক গোল্ড দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের আগে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কিছুটা শীতল ছিল। যুক্তরাষ্ট্র চীনের উত্থান মোকাবিলায় ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল এবং আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সময় তালেবানদের ক্ষমতা দখলের ঘটনায় ইসলামাবাদের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নত হয়েছে। বিশেষ করে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে হামলার পর এবং পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনার সময়, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে ভূমিকা রাখার কৃতিত্ব পাকিস্তান দাবি করেছে।
বাণিজ্যিক দিক থেকে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে পণ্য ও সেবা–বাণিজ্যের মোট পরিমাণ প্রায় ১০ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার ছিল, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৬ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। পণ্যবাণিজ্যের মধ্যে পাকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ছিল ৫ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাকিস্তানে আমদানি ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। সেবা–বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পাকিস্তানে মার্কিন সেবা রপ্তানি ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার এবং পাকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার, ফলে উদ্বৃত্ত ৬১০ মিলিয়ন ডলার।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ—বিশেষ করে কপার, গোল্ড ও লিথিয়াম—এখন কেবল অর্থনৈতিক নয়, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা পাকিস্তানকে চীনের প্রভাব থেকে কিছুটা স্বায়ত্তশাসিত করতে সাহায্য করছে এবং ভারতকেন্দ্রিক আঞ্চলিক ভারসাম্যেও প্রভাব ফেলছে। পাকিস্তান এখন কৌশলগতভাবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অবস্থান তৈরি করছে, যা ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা নীতি এবং অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
আপনার মতামত জানানঃ