আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত চিকিৎসক ঋতেশ কালরার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রেসক্রিপশন জালিয়াতি এবং চিকিৎসার বিনিময়ে যৌন সুবিধা দাবি করার মতো ভয়াবহ অপরাধ। নিউ জার্সির ফেয়ার লন এলাকায় কর্মরত এই চিকিৎসক গত কয়েক বছর ধরে রোগীদের দুর্বলতা ও আসক্তির সুযোগ নিয়ে অবৈধভাবে ওষুধ প্রেসক্রাইব করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটরদের দাবি, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কালরা ৩১ হাজারের বেশি ভুয়া প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন, যেগুলোর বেশিরভাগই নির্দিষ্ট আসক্তির ওষুধ। এই জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি শুধু অর্থ নয়, যৌন সুবিধাও দাবি করেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। এতে বোঝা যায়, তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমন রোগীদের নিশানা করতেন যারা মানসিক বা শারীরিকভাবে দুর্বল অবস্থায় ছিলেন।
চিকিৎসক কালরা পোল্যান্ডের সাইলেসিয়ার মেডিকেল ইউনিভার্সিটি থেকে মেডিসিনে পড়াশোনা শেষ করেন এবং এরপর দুই দশকেরও বেশি সময় যুক্তরাষ্ট্রে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে এসেছেন। অথচ অভিজ্ঞতা ও দায়িত্বের জায়গা থেকে তিনি যে ধরনের অনৈতিক কাজ করেছেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা পেশার জন্যই হুমকিস্বরূপ।
জোকডক ও ডক্সিমিটির মতো পরিচিত চিকিৎসা তথ্যভাণ্ডারেও কালরার নাম রয়েছে, যার ফলে অনেক রোগী তাঁর ওপর আস্থা রেখেছিলেন। কিন্তু নিউ জার্সি পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে মেডিকেড প্রকল্পে জালিয়াতি, ভূয়া অ্যাপয়েন্টমেন্টের মাধ্যমে টাকা আদায়, এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত একাধিক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ‘ঘোস্ট অ্যাপয়েন্টমেন্ট’-এর মতো প্রতারণামূলক কাজের মাধ্যমে কালরা এমনকি এমন রোগীদের জন্য বিল করেছেন, যারা কখনো তাঁর চেম্বারে আসেননি।
এইসব অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি আমেরিকার আদালতে তাঁকে হাজির করা হলে ম্যাজিস্ট্রেট জাজ আন্দ্রে এম এস্পিনোসা তাঁকে ১ লক্ষ ডলার বন্ডে জামিন দিলেও কঠোর শর্ত আরোপ করেছেন। বর্তমানে তিনি গৃহবন্দী অবস্থায় রয়েছেন এবং তাঁর চিকিৎসা ও প্রেসক্রিপশন দেওয়ার অধিকার সাময়িকভাবে বাতিল করা হয়েছে।
যদি আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে কালরাকে সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১ মিলিয়ন ডলারের জরিমানার মুখোমুখি হতে হতে পারে। এই ঘটনায় মার্কিন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভেতরে যে অপব্যবহার সম্ভব, তা আবারও সামনে এসেছে। একইসঙ্গে এটি প্রশ্ন তোলে— কীভাবে এতদিন ধরে এমন জালিয়াতি চলতে পারল এবং কেন কর্তৃপক্ষ তা আগে ধরতে পারেনি।
এই ঘটনা শুধু একজন চিকিৎসকের ব্যক্তিগত অপরাধ নয়, বরং গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি রোগীদের আস্থায় চিড় ধরায়। যেসব মানুষ অসুস্থতার সময় ভরসা করে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন, তাদের সেই বিশ্বাসের অপব্যবহার যে কত ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনতে পারে, ঋতেশ কালরার ঘটনাই তার দৃষ্টান্ত।
আপনার মতামত জানানঃ