ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে একদল সন্ত্রাসী। এতে ২৬ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পাহালগামে এ হামলা হয়েছে। পর্যটকদের জন্য এই স্থানটি বেশ আকর্ষণীয়। হিমালয়ের পাদদেশের এই এলাকাটিকে ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এদিকে এই ঘটনায় সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে ভারতে ফিরেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সাম্প্রতিক বছরে ভারতের মাটিতে বেসামরিকদের ওপর এত বড় হামলা দেখা যায়নি। কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর অব্দুল্লাহ বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আমরা যত হামলা দেখেছি তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিল এটি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে আহতের সংখ্যাও অনেক বেশি। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ভারতীয় মিডিয়া বলছে, এ হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হয়েছেন। দ্য হিন্দুর এক খবরে বলা হয়েছে, সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন বিদেশি পর্যটক রয়েছে। একজন সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং আরেকজন নেপালের। নিহতদের মধ্যে নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা রয়েছেন।
হামলায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আমাদের সংকল্প অটুট রয়েছে এবং এটা আরও শক্তিশালী হবে। এই হামলার পর নরেন্দ্র মোদি সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে মঙ্গলবার রাতেই দেশে ফিরছেন বলে পিটিআই জানিয়েছে। হামলার পর কাশ্মীরে গেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কাশ্মীরের শ্রীনগরে গিয়ে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি।
আন্তর্জাতিক মহলেও এ হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রধান উরসুলা ভন ডের লেইন। ট্রুথ সোশ্যালের এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, কাশ্মিরের খবরে বেশ কষ্ট পেয়েছি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে আমেরিকা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়, এই হামলার দায় স্বীকার করেছে কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা এই ঘোষণা দিয়েছে। তবে বিষয়টি রয়টার্সের পক্ষ থেকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
এমন এক সময়ে কাশ্মীরে এই হামলার ঘটনা ঘটলো যখন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স সপরিবারে ভারত সফরে রয়েছেন। হামলার পর জেডি ভ্যান্স এক্সের এক পোস্টে লিখেছেন, ভারতের পাহালগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ভুক্তভোগীদের প্রতি উষা (ভান্সের স্ত্রী) ও আমি সমবেদনা জানাচ্ছি। গত কয়েক দিন আমরা এই দেশের সৌন্দর্য ও এর জনগণের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। এই হামলায় শোকার্ত মানুষের প্রতি আমাদের প্রার্থনা রইল।
১৯৯০ সাল থেকে অঞ্চলটিতে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে আসছে একটি বিচ্ছন্নতাবাদী সংগঠন। যাদের সঙ্গে ভারতীয় বাহিনীর সংঘর্ষে প্রাণ গেছে কয়েক হাজার মানুষের। যার মধ্যে বেসামরিক নাগরিক এবং নিরাপত্তা বাহিনীও রয়েছে।
এই সমস্যা আজ কালের নয়। ১৯৪৭ সালে যখন ভারত-পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্রে ভাগ হয়, তখন থেকেই জম্মু-কাশ্মীরের একটি গোষ্ঠী স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য সংগ্রাম শুরু করে। তবে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই রাষ্ট্রই কাশ্মীরকে নিজেদের বলে দাবি করে। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষেও লিপ্ত হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। এই অঞ্চলের সীমান্ত রক্ষায় বিশেষ জোর দিয়েছে উভয় দেশ। ভারতনিয়ন্ত্রিত অংশে প্রায় ৫ লাখ সৈন্য স্থায়ীভাবে মোতায়েন করা আছে।
২০১৯ সালে মোদি সরকার কাশ্মীরের আংশিক স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার পর লড়াই কমলেও মাঝে মাঝেই সহিংসতার খবর পাওয়া যায়। বেসামরিকদের ওপর সর্বশেষ বড় ধরনের হামলা ঘটে ২০২৪ সালের জুনে। হিন্দুদের তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি বাসে গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা। এতে ৯ জন নিহত এবং ৩৩ আহত হয়েছিলেন। এর আগে একই বছর ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলায় কমপক্ষে ৪৬ জন সেনা নিহত হন। এই হামলার জেরে পাকিস্তানের লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে ভারতীয় সেনারা।
পাহালগাম ভারত এবং এর বাইরে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বেশ জনপ্রিয় একটি স্থান। সাম্প্রতিক সময়ে এই অঞ্চলকে আরও পর্যটক বান্ধব করার উদ্যেগ নিয়েছে ভারত সরকার। দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৪ সালে কাশ্মীর ভ্রমণ করেছেন প্রায় ৩৫ লাখ পর্যটক ।
আপনার মতামত জানানঃ