অ্যান্টার্কটিকায় প্রায় ৬৮ মিলিয়ন বছর পুরনো একটি পাখির সম্পূর্ণ মাথার খুলির (স্কাল) জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। একে পৃথিবীর প্রাচীনতম আধুনিক পাখির (মডার্ন বার্ড) নিদর্শন বলে দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা। এটি একটি হাঁসের মতো জলচর পাখি, যা আজকের জলাশয় ও সমুদ্রের ধারে বসবাসকারী জলচর পাখিদের আত্মীয় বলে মনে করা হচ্ছে।
জীবাশ্মটি ভেগাভিস আইএএআই নামে পরিচিত একটি বিলুপ্ত প্রজাতির পাখির। এটি ক্রিটেসিয়াস যুগের শেষের দিকে বাস করত। সে সময় টাইরানোসরাস রেক্স প্রজাতির ডাইনোসর পৃথিবীতে রাজত্ব করত। এরপর বিশাল এক গ্রহাণুর আঘাতে ডাইনোসররা পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
আদিম পাখিরা এখনকার পাখিদের মতো ছিল না। সেই সময়ের দাঁতযুক্ত ঠোঁট ও লম্বা, হাড়যুক্ত লেজ ছিল। কিন্তু ভেগাভিস দেখতে হাঁসের মতো ছিল। আর এরা পানির নিচে সাঁতার কাটতে পারত।
ক্যালিফোর্নিয়ার প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার টরেস জানান, এ পাখিটি ডুব দিয়ে মাছ ধরত। এর চোয়ালের শক্তিশালী পেশি এদের মুখ বন্ধ রাখতে সাহায্য করত।
ওহাইও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্যাট্রিক ও’কনর বলেন, এটি আধুনিক পাখিদের পূর্বপুরুষদের অন্তর্ভুক্ত। এদের দাঁতবিহীন ঠোঁট ও বিশেষ চোয়ালের গঠন প্রমাণ করে যে এটি জলপাখিদের বেশ আদিম সদস্য।
২০১১ সালে অ্যান্টার্কটিক পেনিনসুলা প্যালিয়ন্টোলজি প্রকল্পের এক অভিযানে জীবাশ্মটি সংগ্রহ করা হয়। তখন এটি ৬৮.৪ থেকে ৬৯.২ মিলিয়ন বছর আগের শিলার মধ্যে সংরক্ষিত ছিল।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জুয়ান বেনিতো মোরেনো বলেন, এই পাখিটির ঠোঁট সরু ও তীক্ষ্ণ, যা সাধারণ হাঁসদের থেকে অনেকটাই আলাদা। এটি ডাইভিং ও মাছ ধরার জন্য বিশেষভাবে অভিযোজিত ছিল।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ৬৯ মিলিয়ন বছর আগে অ্যান্টার্কটিকা বরফে ঢাকা ছিল না। এটি ছিল বনভূমি ও নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার এলাকা। ভেগাভিস সম্ভবত সমুদ্রের ধারে বাস করত ও শিকার করত।
ওহাইও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ক্রিস্টোফার টরেস বলেন, ভেগাভিসের জীবাশ্ম থেকে বোঝা যায়, কিছু পাখি ডাইনোসরের গণবিলুপ্তির মধ্যেও টিকে গিয়েছিল। এটি পৃথিবীর ইতিহাসের এক বিরল ও গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার।
আপনার মতামত জানানঃ