প্রায় ৪০ বছর আগে চট্টগ্রামে মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর হত্যা মামলায় প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল লতিফকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। মামলার জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আসামিরা মারা যাওয়ায় তাদের অব্যাহতির আদেশ দেন। আজ সোমবার (২৫ জানুয়ারি) ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত (অস্থায়ী) প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক দিলারা আলো চন্দনা সম্পূরক অভিযোগপত্র (চার্জশিট) গ্রহণ করে তাদের এ অব্যাহতি দেন।
২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) আসাদুজ্জামান খান রচি মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করেন। আবেদনের শুনানিতে তিনি বলেন, এ মামলায় সঠিকভাবে তদন্ত হয়নি। ফলে আরও অনেককে সাক্ষী করা যায়নি। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য মামলাটি অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন। আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করে মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন।
দীর্ঘ ছয় বছর ধরে মেজর জেনারেল মঞ্জুর হত্যা মামলার অধিকতর তদন্ত শেষে সম্প্রতি ঢাকার আদালতে এই মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। তাতে মামলার প্রধান আসামি জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুল লতিফকে অব্যাহতি দিতে আদালতে আবেদন জানানো হয়েছিল। এইচএম এরশাদ ও লতিফকে সম্পূরক অভিযোগপত্রে ‘মৃত্যুজনিত কারণে দায় থেকে তাদের অব্যাহতির’আবেদন জানানো হয়েছিল। অভিযোগপত্রটির ওপর শুনানির জন্য ২৫ জানুয়ারি দিন ধার্য রেখেছিলেন বিচারক।
এর আগে, এ মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার কুতুবুর রহমান। যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে তারা হলেন- মেজর (অব.) কাজী এমদাদুল হক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোস্তফা কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শামসুর রহমান শামস। ফলে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ৬ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন আদালত।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক সেনা অভ্যুত্থানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন। তখন চট্টগ্রামে অবস্থিত সেনাবাহিনীর ২৪ তম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার স্টাফ (জিওসি) ছিলেন আবুল মঞ্জুর।
জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর আত্মগোপনে যাওয়ার সময় মেজর জেনারেল মঞ্জুরকে আটক করে পুলিশ। এরপর ওই বছরের ২ জুন তাকে পুলিশ হেফাজত থেকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এবং মৃত্যুর সনদপত্র পেতে দেরি হওয়ায় ঘটনার ১৪ বছর পর ১৯৯৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মঞ্জুরের ভাই আইনজীবী আবুল মনসুর আহমেদ চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা করেন। ১৯৯৫ সালের ২৭ জুন এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
দীর্ঘ ১৯ বছর মামলাটি বিভিন্ন কারণে ঝুলেছিল। বিচার চলাকালে পর্যায়ক্রমে ২২ বিচারক বিচারিক কার্যক্রমে নিয়োজিত ছিলেন। বিভিন্ন কারণে তারা সবাই বদলি হন।
২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি মামলার ২৩ তম বিচারক ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হোসনে আরা আক্তার ওই বছর ১০ ফেব্রুয়ারি আলোচিত মামলাটির রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে এ মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। ওই সময় মামলার প্রধান আসামি জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বাকি দুই আসামি মেজর (অব.) কাজী এমদাদুল হক ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোস্তফা কামাল উদ্দিন ভূইঞা উপস্থিত ছিলেন। মামলার চার্জশিটভুক্ত অপর দুই আসামি মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল লতিফ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শামসুর রহমান শমসেরের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত থাকে।
মামলায় মোট ৪৯ সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার পর ২০১২ সালের ২ অক্টোবর আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন প্রধান আসামি সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এর সমর্থনে আদালতে লিখিত বক্তব্যও দাখিল করেন তিনি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫০
আপনার মতামত জানানঃ