পৃথিবীতে কি আবার ফিরে আসবে ডাইনোসর? এমন গুঞ্জন বৈজ্ঞানিক মহলে আগেই ছিল। ক্লোনিং কিংবা জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে বিলুপ্ত প্রাণীদের ফিরি আনা সম্ভব—একথা অনেকেই বলছিলেন। সম্প্রতি সেই ধারণা বাস্তবের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বিলুপ্ত কিছু জনপ্রিয় প্রাণী, যেমন—রোমশ ম্যামথ, ডোডো পাখিদের ফিরিয়ে আনার জন্য গবেষণা চালাচ্ছেন। সফলতার খুব কাকাছি পৌঁছে গিয়েছেন তারা। তবে এর পরিণাম ভালো হবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে জল্পনা!
রোমশ ম্যামথদের ফিরিয়ে আনার জন্য এক ধরনের পদ্ধতির কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা। ম্যামথেরা দেখতে অনেকটা হাতির মতো। কিন্তু এদের গায়ে লম্বা লম্বা রোম ছিল। আর দাঁত ছিল বাঁকানো।
প্রতিটা প্রাণীর তার দৈহিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের তথ্য থাকে তার জিনোমে। বিজ্ঞানীরা বলছেন হাতির জিনোমে ঘন লোম আর বাঁকানো দাঁতের বৈশিষ্ট্য যোগ করে, সেটার ক্লোন ভ্রুণকে একটা মা হাতির জরায়ুতে স্থাপন করলেই হয়তো জন্ম নেবে হাতি ও ম্যাথথের সংকর প্রজাতি।
এটা যে সম্ভব, তার প্রমাণ মিলেছে অনেক আগেই। ২০০৩ সালে প্রায় সাত মিনিটের জন্য বিলুপ্তি প্রক্রিয়া ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।
২০০০ সালে ‘পাইরেনিয়ান আইবেক্স’ নামেরে এক ধরনের বুনো ছাগলের শেষ সদস্যটিও মারা যায়। সেটার কান থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে রেখেছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেই ডিএনএ দিয়ে গৃহপালিত ছাগলের ডিম্বাণুতে ক্লোন করে নতুন একটি ‘পাইরেনিয়ান আইবেক্সের’ জন্ম দেওয়া হয় মারা যাওয়ার তিন বছর পর। কিন্তু সেই ‘পাইরেনিয়ান আইবেক্স’ ছানাটি ফুসফুসের সমস্যা নিয়ে জন্মায়। এবং জন্মের পর সাত মিনিটের মধ্যেই মারা যায়।
এর পর পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় দুই দশক। এখন জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তি অনেক উন্নত হয়েছে। তাই বিজ্ঞানীরা আবার নতুন করে ‘ডি-এক্সটিংশন’বা বিলুপ্ত প্রজাতি ফিরিয়ে আনা চেষ্টা শুরু করেছেন। কিন্তু ফিরিয়ে আনা সম্ভব কিনা সেটা নিয়ে নয়, প্রশ্ন উঠছে আদৌ বিলুপ্ত প্রাণী ফিরিয়ে আনা ঠিক হবে কিনা, তা নিয়ে?
যেমন মার্কিন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি কলোসল বায়োসায়েন্সেস তিন বিলুপ্ত প্রজাতিকে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রাণী তিনটি হলো রোমশ ম্যামথ, ডোডো পাখি ও তাসমানিয়ান বাঘ।
কলোসলের লক্ষ্য হলো, পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ করা, পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা প্রাণীদের পুনরুদ্ধার করা এবং বাস্তুতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করা। এটা অবশ্য কোম্পানিটির দাবি। তবে উল্টো বিপর্যয়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংখ্যা ও কমিউনিটি ইকোলজির অধ্যাপক অসওয়াল্ড শ্মিটজ বলেছেন, ‘আমরা অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে মনে করছি আমরা সব ধরনের প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। তবে আমি পুরোপুরি আশ্বস্ত নই।’
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন বলছেন, বিলুপ্ত প্রজাতি ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিপর্যয়কর ফলও ঘটতে পারে। পরিবেশ সংরক্ষণবিদরা বলছেন, শত বছরের বা হাজার বছরের পুরনো বিলুপ্ত প্রাণী ফিরিয়ে আনার চেয়ে বর্তমান বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিগুলোকেই বাঁচিয়ে রাখার ওপর বেশি জোর দেওয়া উচিত।
কলোসল বায়োসায়েন্সেসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও বেন ল্যাম অবশ্য আশার কথা শুনিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাম্প্রতিক অগ্রগতি বহু বছর আগে বিলুপ্ত প্রজাতি ফিরিয়ে আনার খুব কাছে পৌঁছে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের, কল্পনারে চেয়ে কাছে।
তাঁদের কোম্পানি ২০২৮ সালের মধ্যে প্রথম ম্যামথের বাছুর তৈরি করতে চায় এবং এর আগেই হয়তো আরেকটি প্রজাতির দেখা মিলতে পারে, বলছেন ল্যাম।
রোমশ ম্যামথরা আজ থেকে প্রায় ৩ লাখ থেকে ১০ হাজার বছর আগে আর্কটিক অঞ্চলে বাস করত। কলোসলের বিজ্ঞানীরা প্রথমে রোমশ ম্যামথের দৈহিক বৈশিষ্ট্য, যেমন লোমশ শরীর, বাঁকানো দাঁত, চর্বির স্তর ও গম্বুজ আকৃতির মাথার জন্য দায়ী জিন শনাক্ত করবেন।
তারপর এগুলো এশীয় হাতির জিনোমে যুক্ত করবেন। তারপরই হয়তো ১০ হাজার পর আবার পৃথিবী দেখবে প্রথম লোমশ ম্যামথটিকে।
আপনার মতামত জানানঃ