ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সিজারিয়ার বাসভবন লক্ষ করে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে এই হামলায় হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী।
শনিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র বলেছেন, উত্তর ইসরায়েলের সিজারিয়া শহরের বাসভবন লক্ষ করে ড্রোন হামলা হয়েছে। তবে যখন এই হামলা চালানো হয়েছে তখন ওই ভবনে মি. নেতানিয়াহু ছিলেন না।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, শনিবার উত্তর ইসরায়েলি শহর সিজারিয়াতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বাড়ির দিকে একটি ড্রোন চালানো হয়েছিল।
যখন এই হামলাটি চালানো হয় তখন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ওই ভবন কিংবা এর আশপাশেও ছিলেন না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্টে দাবি করা হয়েছে, হামলায় যে ভবনটি আঘাত হেনেছে সেটি নেতানিয়াহুর বাড়ির অংশ।
টাইমস অব ইসরায়েলে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলায় কোনো আহতের খবর পাওয়া যায়নি এবং প্রধানমন্ত্রী ওই সময় বাড়িতে ছিলেন কি না তা স্পষ্ট নয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, লেবানন থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল ড্রোনটি। তবে এটি অন্য একটি ভবনে আঘাত হানে। সেই ভবনটিতে কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা স্পষ্ট হয়নি।
একই সময় মোট তিনটি ড্রোন ছোড়া হয়েছিল ইসরায়েলের দিকে। তবে ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অন্য দুটি ড্রোন ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশের আগেই ঠেকিয়ে দেয়। ওই হামলার কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বা আইডিএফ।
ইসরায়েলি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস এবং পুলিশ বলছে, যে উপকূলীয় শহর সিজারিয়ায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। সেই সিজারিয়ায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী মি. নেতানিয়াহুর ‘হলিডে হোম’ বা অবকাশকালীন বাড়িয়ে রয়েছে।
তবে এই হামলার পর তাৎক্ষনিকভাবে এর দায় স্বীকার করেনি ইরান সমর্থিত গোষ্ঠী হেজবুল্লাহ। গত অক্টোবর থেকে হেজবুল্লাহসহ আরো কয়েকটি জঙ্গি গোষ্ঠী ইসরায়েলের সাথে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে।
ইসরায়েলে হেজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হেজবুল্লাহ অন্তত ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর দাবি, শুক্রবার রাতে লেবানন থেকে চালানো এই ক্ষেপণাস্ত্রের অধিকাংশ প্রতিহত করেছে ইসরায়েল। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের কিছু খোলা জায়গায়ও আঘাত হেনেছে বলে দাবি আইডিএফ’র।
আইডিএফ আরও জানিয়েছে, পশ্চিমের গ্যালিলি অঞ্চলে শত্রুপক্ষের একটি বিমান শনাক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে তদন্ত করছে ইসরায়েল বাহিনী।
এছাড়া বিমান শনাক্তের কয়েক ঘণ্টা পরই ইসরায়েল সেনাবাহিনী জানিয়েছে, লেবানন থেকে দুটি ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। পরবর্তীতে আরও একটি ড্রোন হামলা চালানো হয়। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে টেলিগ্রামে হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উত্তর ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে রাতভর রকেট হামলা চালানো হয়েছে।
গত বুধবার হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যার পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পাল্টা প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাসও।
ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৩৩ জন
গাজায় একটি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ২১ জন নারীসহ অন্তত ৩৩ জন নিহত হয়েছে।
শুক্রবার উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলার ঘটনাটি ঘটে। গাজার হামাস পরিচালিত সরকারি মিডিয়া অফিসের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুক্রবারের বিমান হামলায় ৮৫ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছেন। অনেকের অবস্থা গুরুতর।
ওই শরণার্থী শিবিরের তিনটি পরিবারের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে যাওয়ায় মৃতের সংখ্যা ৫০-এ পৌঁছাতে পারে। ইসরায়েলি বাহিনী গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঘনবসতিপূর্ণ শিবিরটি ঘেরাও করে রেখেছিল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বলছে যে তাদের হামলার উদ্দেশ্য হামাস যোদ্ধাদের নতুন করে হামলা প্রতিরোধ করা। প্রায় ৪০ হাজার মানুষ দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সামান্য খাবার বা পানি খেয়ে শিবিরের ভিতরে আটকা পড়েছে।
গত বছরের ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে রকেট হামলা চালায় ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এতে ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয় বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী। এরপর থেকে গাজায় ইসরায়েল অভিযান শুরু করে। গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ইসরায়েলি অভিযান শুরুর পর গাজায় এখন পর্যন্ত ৪২,৩৪০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
আপনার মতামত জানানঃ