বৃষ্টির আকালে ভয়াবহ খরার মুখে পরেছে দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ নামিবিয়া। পড়েছে খাদ্য সংকটে। দেশের ক্ষুধার্ত মানুষের মাংসের জোগান দিতে তাই হাতি, জলহস্তি, জেব্রাসহ ৭০০-র বেশি প্রাণী মারবে দেশটি।
শতবর্ষের মধ্যে মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার মুখে পড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এর মধ্যেই এ ঘোষণা দিল অঞ্চলটির দেশ নামিবিয়ার সরকার।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের একজন মুখপাত্র শুক্রবার (৩০ আগস্ট) এই পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, নামিবিয়া ‘মানবিক সংকটে’ পড়েছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, খরার প্রকোপে নামিবিয়ার খাদ্যের মজুতের ৮৪ শতাংশ ফুরিয়ে গেছে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৫ লাখ জনসংখ্যার দেশটির প্রায় অর্ধেক মানুষই উচ্চ খাদ্য অনিরাপত্তায় পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
সোমবার নামিবিয়ার পরিবেশ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, নাগরিকদের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের এই ব্যবহার ‘প্রয়োজনীয়’।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার মুখে পড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে এ অঞ্চলজুড়ে বৃষ্টির আকাল দেখা দিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে বর্ষা মৌসুমে প্রয়োজনের মাত্র ২০ শতাংশ বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এ অবস্থায় নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, মালাউই ও জাম্বিয়া খরার জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করেছে। নামিবিয়া মূলত কৃষি ও গবাদিপশুর ওপর নির্ভরশীল। এ দুই খাত ভালো করার জন্য প্রয়োজন বৃষ্টি। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বেশ কয়েকবার খরার মুখে পড়েছে দেশটি। এতে ব্যাহত হয়েছে খাদ্য উৎপাদন।
২০২৪ সালের গোড়ার দিকে শুরু হওয়া খরা কৃষি খাতের পাশাপাশি প্রভাব ফেলেছে গবাদিপশুর উৎপাদনেও। এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে চরম খাদ্য ঘাটতি।
২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনবার খরার জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করা হয়েছে দেশটিতে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, নামিবিয়ার চলমান খরায় পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুরা চরম অপুষ্টির শিকার হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে শিশুদের মৃত্যুও হচ্ছে।
খরার কারণে দূর-দূরান্ত থেকে পানি আনতে গিয়ে নারী ও মেয়েদের আক্রমণ ও নিপীড়নের ঝুঁকিও বেড়েছে। এছাড়া ছড়িয়ে পড়ছে কলেরার মতো রোগও।
নামিবিয়ার পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্বাভাবিকের চেয়ে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে পানির দখল নিয়ে মানুষ ও বন্য পশুর মধ্যে সংঘাত বাড়ছে।
নামিবিয়ায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বন্যপ্রাণী রয়েছে। ২৪ হাজার হাতি রয়েছে দেশটিতে। খাওয়ার জন্য যেখানে, যেসব প্রাণী মারা হবে
মোট ৭২৩টি প্রাণী মারার জন্য চুক্তি করা হচ্ছে পেশাদার শিকারি ও সাফারি অপারেটরদের সঙ্গে।
মাংসের জন্য ৩০টি জলহস্তি, ৬০টি মহিষ, ৫০টি ইমপালা, ১০০টি ব্লু ওয়াইল্ডবিস্ট, ৩০০টি জেব্রা, ৮৩টি হাতি ও ১০০টি ইল্যান্ড মারার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সরকারের বিবৃতিতে জানানো হয়, ইতিমধ্যে সরকারি ত্রাণ কর্মসূচির জন্য বিভিন্ন প্রজাতির ১৫৭টি প্রাণী শিকার করা হয়েছে। এই প্রাণীগুলো থেকে মোট ৫৬ হাজা ৮৭৫ কেজি মাংস সরবরাহ করা হয়েছে।
যেসব জাতীয় উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রাণী রয়েছে, সেখান থেকে এসব প্রাণী সংগ্রহ করা হয়েছে।
মানুষ ও বন্যপ্রাণীর সংঘাতপ্রবণ এলাকাগুলোতে হাতি মারা হচ্ছে। যেসব জাতীয় উদ্যান থেকে প্রাণী সংগ্রহ করা হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে নামিব-নওক্লাফত পার্ক, মাঙ্গেত্তি ন্যাশনাল পার্ক, বোয়াবোয়াতা ন্যাশনাল পার্ক, মুদুমু ন্যাশনাল পার্ক ও কাসা রুপারা ন্যাশনাল পার্ক।
আপনার মতামত জানানঃ