প্রাচীন মিশরীয়রা ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় অস্ত্রোপচার করতেন —এমনই ইঙ্গিত মিলেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
বিভিন্ন লেখা থেকে বিজ্ঞানীরা এরইমধ্যে ধারণা পেয়েছেন, বিভিন্ন ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতা ছিল প্রাচীন মিশরীয়দের, যার মাধ্যমে তারা বিভিন্ন রোগ ও মানসিক আঘাতের চিকিৎসা, কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি এমনকি কারও দাঁতের ক্ষয় হয়ে যাওয়া অংশও তারা পূরণ করতে পারতেন।
তবে, গবেষকদের একটি আন্তর্জাতিক দল দুটি মানব খুলি পরীক্ষা করে দেখেন, প্রতিটি খুলিই কয়েক হাজার বছর পুরোনো, যেগুলোতে ক্যান্সার চিকিৎসা নিয়ে প্রচেষ্টা চালানোর ‘বিস্ময়কর’ নজির মিলেছে।
গবেষণার প্রধান লেখক ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ সান্তিয়াগো ডি কম্পোসটেলা’-এর প্যালিওপ্যাথোলজিস্ট ও অধ্যাপক এডগার্ড ক্যামারোস বলেছেন, “চার হাজার বছরের বেশি সময় আগে প্রাচীন মিশরীয় ওষুধ ব্যবহারে ক্যান্সার ঠেকাতে বা এর চিকিৎসার চেষ্টা করেছিল, তারই এক অনন্য প্রমাণ এ আবিষ্কার।”
“ওষুধের ইতিহাস নিয়ে আমাদের বোঝাপড়ার নতুন এক বিস্ময়কর দৃষ্টিকোণও বলা যায় একে।”
‘ইউনিভার্সিটি অফ টিউবিনজেন’-এর গবেষক ও এই গবেষণার প্রধান লেখক তাতিয়ানা টন্ডিনি যোগ করেন, “আমরা দেখেছি, প্রাচীন মিশরীয়রা জটিল ‘ক্র্যানিয়াল ফ্র্যাকচার’ (মাথার খুলি ভেঙে যাওয়া) মোকাবেলা করতে পারলেও, ক্যান্সারও তাদের চিকিৎসা জ্ঞানের সম্মুখসারীতে ছিল।” গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন মেডিসিন’ জার্নালে।
“এ গবেষণায় আমরা অতীতে ক্যান্সারের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম, বিশেষ করে প্রাচীনকালে এ রোগ কতটা প্রচলিত ছিল ও কীভাবে বিভিন্ন প্রাচীন সমাজ এর মোকাবেলা করেছে।”
এজন্য গবেষকরা ‘ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজ’-এর ‘ডাকওয়ার্থ কালেকশন’-এ রাখা দুটি খুলি পরীক্ষা করেন। এর একটি খ্রিস্টপূর্ব ২৬৮৭ থেকে ২৩৪৫ অব্দের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী একজন পুরুষের খুলি ও অন্যটি ৬৬৩ থেকে ৩৪৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে ৫০ বছরের বেশি বয়সী এক নারীর।
এর মধ্যে পুরুষের খুলিতে মাইক্রোস্কোপিক পর্যবেক্ষণে অনেক টিস্যু ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বড় আকারের একটি ক্ষত এবং প্রায় ৩০টি ক্যান্সারের ক্ষত দেখা গেছে।
‘সামনে যা ছিল তা বিশ্বাস করতে পারিনি’
টন্ডিনি বলেন, গবেষকরা সেইসব ক্ষতের আশপাশের কাটা চিহ্ন দেখে বেশ অবাক হয়েছিলেন, যেগুলো সম্ভবত তৈরি হয়েছিল ধাতব যন্ত্রের মতো কোনো ধারালো বস্তু দিয়ে।
“অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে বিভিন্ন কাটা চিহ্ন প্রথমবার পরীক্ষা করার পর, আমাদের সামনে যা ছিল, তা আমরা বিশ্বাস করতে পারিনি।”
এ গবেষণার সহ-লেখক ও ‘ইউনিভার্সিটি হসপিটাল সাগরত কোর’র সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট ও ইজিপ্টোলজিতে বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আলবার্ট ইসিড্রো বলেছেন, “মনে হচ্ছে প্রাচীন মিশরীয়রা ক্যান্সারের কোষের সঙ্গে মিল রয়েছে এমন কিছু অস্ত্রোপচার করেছিলেন। এর থেকে প্রমাণ মেলে, প্রাচীন মিশরীয় সময়ের ওষুধ দিয়েও ক্যান্সারের পরীক্ষামূলক চিকিৎসার গবেষণা হয়েছিল।
এমনকি নারীর মাথার খুলিতেও এমন এক বড় ক্ষত দেখা গেছে, যার সম্পৃক্ততা আছে ক্যান্সারযুক্ত টিউমারের সঙ্গে। এটি পরবর্তীতে গিয়ে তার ওই হাড় ক্ষয়ের কারণ হতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ।
এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, আধুনিক জীবনযাপনে মানুষ দীর্ঘদিন বেঁচে থাকলেও পরিবেশের ক্যান্সার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উপাদানে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে, যেখানে হাজার হাজার বছর আগেও ক্যান্সার সাধারণ বিষয়ই ছিল।
প্রাচীন চিকিৎসায় সাফল্য
নারীর মাথার খুলিতে সারিয়ে তোলা দুটি ক্ষতের মধ্যে একটি ক্ষত ছিল ধারাল অস্ত্রের আঘাত। ধারণা করা হচ্ছে, খুব কাছাকাছি থেকে কোনো আক্রমণে এমনটা হয়েছে। এর মানে, ওই নারী সম্ভবত প্রাথমিক চিকিৎসা পেয়েছিলেন ও এর ফলে তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন।
তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, কঙ্কালের ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা করা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হওয়ায় কোনো কিছু নিশ্চিত করে বলা জটিল বিষয়। বিশেষ করে যখন, প্রাপ্ত ধ্বংসাবশেষ প্রায়শই অসম্পূর্ণ থাকে ও এদের কোনও ক্লিনিকাল ইতিহাস নেই।
আপনার মতামত জানানঃ