সরকারি সিদ্ধান্তের পর রূপপুরে আরও দুটি ইউনিট বসাতে শিগগিরই শুরু হচ্ছে প্রাথমিক সমীক্ষা। আর এ সমীক্ষা চালাতে সময় লাগবে অন্তত তিন বছর। সূত্র: সময় সংবাদ।
কিন্তু রূপপুরে নতুন ইউনিট বাড়ানো কতটা যৌক্তিক হবে কিংবা সেগুলো নির্মাণে কত সময় লাগবে, রাশিয়ার বেলাইয়ারস্ক নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট সরেজমিন ঘুরে এসে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে এ প্রতিবেদনে।
রাশিয়ার সভারডলভস্ক অঞ্চলের ৬ দশকের পুরোনো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বেলাইয়ারস্ক নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট। যার অবস্থান আঞ্চলিক কেন্দ্র ইয়েকাতেরিনবুর্গ থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে আর রাজধানী মস্কোর ১৮০০ কিলোমিটার পূর্বদিকে। বর্তমানে সভারডলভস্কের অন্তত ১৫ শতাংশ জ্বালানি চাহিদা পূরণ করে ১ হাজার ৪৮৫ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দিয়ে।
১৯৬৪ সালে চালু হওয়া এই কেন্দ্রটির বড় বিশেষত্ব হলো, এখানকার বিভিন্ন ইউনিটে চুল্লী বা রিয়্যাক্টর ব্যবহারের ভিন্নতা রয়েছে।
চার ইউনিটের এ প্ল্যান্টটিতে দুটি রিঅ্যাক্টর ছিলো প্রথম প্রজন্মের। যেগুলো উৎপাদন চক্র শেষে এখন ডি-কমিশনিং বা নিস্ক্রিয়করণ পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে উৎপাদনে থাকা ইউনিট দুটির ধরনেও রয়েছে ফারাক।
১৯৮০ সালে চালু হওয়া তৃতীয় ইউনিটে বিএন ৬০০ এবং ২০১৫ সাল থেকে উৎপাদনে থাকা চতুর্থ ইউনিটে বসেছে থ্রি প্লাস জেনারেশনের রিঅ্যাক্টর বিএন ৮০০। যা ফাস্ট নিউট্রন রিঅ্যাক্টর হিসেবে পরিচিত। আর ২০২৬ সালে শুরু হবে কেন্দ্রটির পঞ্চম ইউনিট নির্মাণকাজ, যেখানে বসবে চতুর্থ প্রজন্মের রিঅ্যাক্টর বিএন ১২০০। আর সেই নির্মাণযজ্ঞে সময় লাগবে অন্তত ৬ বছর।
রাশিয়ার প্রথম প্রজন্মের বিদ্যুৎকেন্দ্র বুলেয়াস্ক নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের নজর এখন চতুর্থ প্রজন্মের প্রযুক্তিতে। আর ৬ দশকের পুরোনো এ কেন্দ্রটির প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশকে প্রযুক্তির নানামুখী বিকল্প নিয়ে ভাবতে উৎসাহিত করবে। এমনটাই মনে করছেন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনায় জড়িতরা।
বুলেয়াস্ক নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের হেড অব টেকনিক্যাল গ্রুপের আন্দ্রে স্মেলভ সময় সংবাদকে বলেন, আমাদের ২৬টি মানদণ্ড আছে, নতুন রিঅ্যাক্টর মূল্যায়নে জন্য। আমরা বলতে পারি না বিএন ৮০০ এর মতো থ্রি প্লাস প্রজন্মের রিঅ্যাক্টর কিংবা ভিভিআর ১০০০ খারাপ কিছু। অবশ্যই না। আমরা নজর দিয়েছি, ভবিষ্যত অগ্রগতির দিকে। আর সেজন্যই চতুর্থ প্রজন্মের নতুন রিঅ্যাক্টর বসানোর উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য আমাদের।
রাশিয়ার বুলেয়াস্ক নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টে যেমন একের পর এক ইউনিট বাড়ানো হয়েছে, ঠিক একইভাবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রেও বসবে আরো দুটি ইউনিট। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রূপপুরের রুশ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি রিখাচেভের বৈঠকে জানানো হয়, প্রথম দুটি ইউনিটের কাজ শেষ হবে ২০২৬ সালে। এরপর শুরু হবে পরের দুই ইউনিটের কাজ।
প্রশ্ন আসতে পারে, সব মিলিয়ে তাহলে সময় লাগবে কেমন? রাশিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রূপপুরের অভিজ্ঞতা আমলে নিলে যে আভাস মিলছে, প্রাথমিক সমীক্ষা ও মূল অবকাঠামো নির্মাণে তৃতীয় ইউনিটের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে এখন থেকে আরো অন্তত ১০ বছর।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মো. শৌকত আকবর বলেন, দুটি ইউনিটের কাজ শুরু করতে গেলে পুরো প্রস্তুতিতে সাইড সার্ভে ও ডিজাইন ঠিক করা সেটা একটা সময়ের ব্যাপার। সেটা করতে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগে। আশা করছি, দ্রুতই সার্ভে কাজ শুরু করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, কংক্রিট ঢালাই করা থেকে বড় রিঅ্যাক্টরের কাজ করতে, আমাদের দেশের মতো দেশে কমপক্ষে ৮ বছরের মতো সময় লাগবেই।
যদিও রূপপুরের বিদ্যমান অবকাঠামো নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে দেবে নানামুখী সুবিধা। ড. মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়টি নিয়ে আরও বলেন, ফুয়েল ট্রান্সপটেশন, লোডিং আনলোডিং, ফুয়েল ম্যানেজমেন্ট এবং ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সবগুলোর জন্য একটা সেন্ট্রাল ফ্যাসেলিটি, সেই জন্য সবদিক দিয়ে সুবিধা আছে।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনেরে চেয়ারম্যান ড. মো. শৌকত আকবর বলেন, অনেকগুলো ইনফ্রাস্ট্রাক্চার আগে থেকে তৈরি থাকে। যাতে নতুন ইউনিটের কন্ট্রাকশনের সময় কম লাগে, আবার তুলনামূলক খরচও কম হয়।
তবে ইউনিট বাড়ালে কারিগরি সক্ষমতার পাশাপাশি পানির প্রাপ্যতার দিকেও দিতে হবে বিশেষ নজর।
আপনার মতামত জানানঃ