ইসরায়েল আর হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি না হওয়ায় মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাসে জেরুজালেমে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। রমজানে আল আকসা মসজিদে যাতায়াত ও পরিদর্শনের সুযোগ বাড়ানোর আহবান জানিয়েছে হামাস।
তবে ইসরায়েল দাবি করছে, হামাস রমজান মাসে এই অঞ্চলটি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। যা কয়েকদিনের মধ্যেই শুরু হতে পারে। আল আকসা হলো ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান। এই জায়গাটিকে ইহুদীরাও তাদের পবিত্রতম স্থান বলে মনে করে, যা তাদের কাছে টেম্পল মাউন্ট নামে পরিচিত। কখনো কখনো এই জায়গাটি ইসরায়েল ফিলিস্তিনি সংঘর্ষের ফ্লাশ পয়েন্ট হয়েও দাঁড়ায়।
রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেলে আগামী ১১ বা ১২ মার্চ জেরুজালেমে পবিত্র রমজান মাস শুরু হবে। এই সপ্তাহে আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণ পরিদর্শনের সময় সেখানকার পরিবেশ শান্ত দেখা গেছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের মনে চিন্তা ছিল যুদ্ধ নিয়ে।
“লোকেরা নিয়মিত রমজানের ঐতিহ্য উদযাপন এবং উপভোগ করতে পছন্দ করে। কিন্তু এ বছর তার আর কিছুই হবে না”, অনেকটা কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন আয়াত নামে একজন নারী।
রোজার শুরুতে ৪০ দিনের একটা যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা ভেস্তে গেছে। যদিও মিশরের একটি সূত্র বলছে, ইসরায়েলের সাথে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে তারা হামাসের প্রতিনিধি দলের সাথে রবিবার দেখা করবে।
শনিবার ইসরায়েল বলেছে যে, তাদের গোয়েন্দা প্রধান মার্কিন প্রতিপক্ষের সাথে দেখা করেছেন। কারণ তারা কয়েক ডজন জিম্মিকে মুক্ত করে আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
এরপর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়, “হামাস তার অবস্থানে অটল রয়েছে। তারা আসলে কোন চুক্তিতে আগ্রহী নয়’।
এদিকে আল আকসা মসজিদ ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি রেখেছে ইসরায়েলি পুলিশ। মসজিদ কমপ্লেক্সের প্রতিটি গেটে কন্ট্রোল অ্যাক্সেস চালু করা হয়েছে।
১৯৬৭ সালে যুদ্ধের মাধ্যমে ইসরায়েল এই অংশসহ পূর্ব জেরুজালেম দখল করে। তাই এই স্থানটি ফিলিস্তিনিদের কাছে সংগ্রামের একটি প্রতীক হয়ে উঠেছে।
এখানে প্রায়ই ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার বেশিরভাগই হয় রমজান মাসেই।
এই জায়গাটিকে ইহুদিরা তাদের পবিত্রতম স্থান মনে করলেও, এখানে তাদের ধর্মীয় প্রার্থনা করার অনুমতি নেই। তাই তার শুধু এই জায়গাটিতে প্রবেশ করতে পারে।
২০২১ সালের মে মাসে আল আকসায় সহিংসতায় জেরুজালেমে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। ঐ ঘটনার জেরে হামাস তখন জেরুজালেমে রকেট নিক্ষেপ করে। তখন গাজায় ছোটখাটো একটা যুদ্ধও হয়। এ নিয়ে তখন আরব বিশ্ব ও ইসরায়েলিদের মধ্যে ব্যাপক অস্থিরতাও দেখা দেয়।
এ বছর রোজার মাস কিভাবে কাটবে তা নির্ভর করছে ইসরায়েলের ওপর। কারণ তারা কি ধরণের উদ্যোগ বা কৌশল নেবে সেটি এখনো স্পষ্ট নয়।
চরম ডানপন্থী ইসরায়েলি জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গেভির আল আকসা মসজিদে প্রবেশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারির আহবান জানিয়ে বলেছেন, এটি করা হবে হামাসের বিজয় উদযাপন বন্ধ ও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির জন্য।
তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেছেন, রমজানের প্রথম সপ্তাহে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মসজিদে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে। তবে তারা প্রতি সপ্তাহে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পুর্নমূল্যায়ন করবে।
তবে এই আল আকসায় কত সংখ্যক মুসলমানদের প্রবেশের অনুমতি মিলবে তা এখনো স্পষ্ট করেনি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
গাজা যুদ্ধের সময় পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনিদের জেরুজালেমে প্রবেশে অনেকাংশেই বাধা দেয়া হয়েছে। তবে পবিত্র এই রমজান মাসে জুম্মার নামাজ পড়তে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে আল আকসায় যেতে হবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর চেকপোস্টের মধ্যে দিয়ে।
ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র আইলন লেভি জোর দিয়ে বলেছেন, ধর্মীয় প্রার্থনার স্বাধীনতার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি বিবিসি বলেন, “রমজানে প্রায়ই এমন একটি উপলক্ষ তৈরি হয় যখন উগ্রপন্থীদের কারণে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এবার আমরা তা প্রতিরোধের জন্য কাজ করছি”।
“আমরা আগের বছরের মতো ধর্মীয় প্রার্থনার জন্য টেম্পল মাউন্টে প্রবেশের সুবিধা অব্যাহত রাখবো। তবে কেউ যদি এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরিবেশ বিঘ্নিত করার চেষ্টা করে আমরা তা প্রতিরোধ করবো”।
ইসলামী ওয়াকফ কাউন্সিলের সদস্য ও আল আকসা বা হারাম আল শরীফের পরিচালক ড. ইমাম মুস্তফা আবু সোয়ে’র বলেন, “কয়েক বছর থেকেই পশ্চিম তীর থেকে যারা আল আকসায় আসছে তাদের অনুমতি দিচ্ছে ইসরায়েল। কিন্তু এতে কোন সংঘর্ষ বা সহিংসতা হয় নি”।
“এখানে মানুষ প্রার্থনা করতে আসে। শান্তি বিঘ্নিত করতে আসে না। যদি ইসরায়েলি পুলিশ কিংবা নিরাপত্তা বাহিনী তাদেরকে কোন বাঁধা না দেয় তাহলে আশা করি কোন সংকট তৈরি হবে না”।
এবার রমজানে সারা বিশ্ব আরও গভীরভাবে খেয়াল করবে জেরুজালেমে আল আকসা মসজিদ ঘিরে কিছু ঘটছে কী না।
আপনার মতামত জানানঃ