একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা, খ্যাতিমান আইনজীবী ও সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরুকে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনারা সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন, সেটি নিশ্চিত। কিন্তু বিরোধী দল কারা হচ্ছে?’
এবারের পরিস্থিতিও সেরকম। সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে এবারের ভোটকে ‘বিরোধী দল খোঁজার নির্বাচন’ বলে অভিহিত করেছেন। তার ভাষায়, ‘২৬ দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, তাদের ১৩টি দলের নামও কেউ বলতে পারবে না। আসন ভাগাভাগির পর সরকারি দলের ২৪০ আসন নিশ্চিত।’ (প্রথম আলো, ২০ ডিসেম্বর ২০২৩)।
বাংলাদেশের সংবিধান এবং জাতীয় সংসদের কার্যক্রম পরিচালিত হয় যে কার্যপ্রণালিবিধি দ্বারা, তার কোথাও বিরোধী দল সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট বিধান নেই। অর্থাৎ তিনশ আসনের মধ্যে ন্যূনতম কতগুলো আসন পেলে তাকে বিরোধী দল বলা যাবে কিংবা বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন, তার যোগ্যতা কী হবে—সে বিষয়েও স্পষ্ট কিছু বলা নেই। যে কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ গঠনের সময়ও ‘বিরোধী দল’ ইস্যুতে জটিলতা তৈরি হয়েছিল।
কেননা মাঠের রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি হলেও গত নির্বাচনে তারা আসন পেয়েছিল মাত্র ৭টি। আর জাতীয় পার্টি ২২টি। মাত্র ২২টি আসন পেলেও ভোটপ্রাপ্তির দিক দিয়ে তারা ছিল আওয়ামী লীগের পরেই, অর্থাৎ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। কিন্তু সংবিধান বা কার্যপ্রণালি বিধিতে সুস্পষ্ট বিধান না থাকলেও দীর্ঘদিনের রেওয়াজ এটি যে, অন্তত এক দশমাংশ অর্থাৎ ৩০টি আসন না পেলে তাকে বিরোধী দল বল যায় না। সে হিসেবে ২২টি আসন পাওয়া জাতীয় পার্টিও ওই অর্থে বিরোধী দল হয় না।
তারপরও জাতীয় পার্টিই সংসদের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে ঘোষিত হয় এবং বিরোধী দলীয় নেতা হন জাতীয় পার্টির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা রওশন এরশাদ। বিএনপির সংসদ সদস্যরাও বিরোধী দলের ভূমিকায় ছিলেন। যদিও পরে তারা সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদেও বিরোধী দল এবং বিরোধী দলের নেতা ছিলেন না। আবুল মনসুর আহমদ তার ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ বইতে লিখেছেন, ‘পার্লামেন্টারি পদ্ধতির ভিত্তি স্থাপন মানে বিরোধী দলের যথেষ্ট সংখ্যক ভালো মানুষ নির্বাচিত হবেন, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা।
কাজেই নির্বাচনে (১৯৭৩) সরকারি দল আওয়ামী লীগের বিরোধী দলের প্রতি উদার হওয়া উচিত ছিল। উদার হইতে তারা রাজিও ছিলেন। রেডিও টেলিভিশনে বিরোধী দলসমূহের নেতাদের বক্তৃতার ব্যবস্থা করিতেও তাদের আপত্তি ছিল না। আমি আওয়ামী নেতৃত্বকে পরামর্শ দিয়াছিলাম বিরোধী পক্ষের অন্তত জনপঞ্চাশেক নেতৃস্থানীয় প্রার্থীকে নির্বাচনে জয়লাভ করিতে দেওয়া উচিত। তাতে পার্লামেন্টে একটি সুবিবেচক গণতন্ত্রমনা গঠনমুখী অপজিশন দল গড়িয়া উঠিবে। আমার পরামর্শে কেউ কান দিলেন না।’
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম যে সংসদ নির্বাচন হয়, সেখানে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৯২টিতে জয়লাভ করে। সাতটি আসন পায় বিরোধী পক্ষ। একজন প্রার্থী দুর্ঘটনায় নিহত হলে ওই আসনে পরে নির্বাচন হয়। সেখানেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করেন। ফলে প্রথম সংসদে ওই অর্থে কোনো বিরোধী দল ছিল না।
১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে খসড়া সংবিধান অনুমোদন উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দেন তার একপর্যায়ে বিরোধী দলের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিরোধী দলের নাম শুনতে পাই। দেশে এ রকম কোনো পার্টি আছে কি না জানি না। নির্বাচনের আগে এরকম কোনো পার্টি ছিল না। অনেকেই ভোট না পেয়ে পশ্চাদপসরণ করেছিল।
ভবিষ্যৎ নির্বাচনে যদি তারা ভোট না পায় সে দোষ আমাদের হবে না। ভোট পেয়ে পরিষদে এসে বলুন, আমরা বিরোধী দল। যারা নির্বাচনে দাঁড়িয়ে ভোট পায়নি তারা বলে আমরা বিরোধী দল। ভবিষ্যতে ভোট নিয়ে এসে তারপর বলুক আমরা বিরোধী দল। তা হলে বলুক, এই এই আমাদের দাবি।’ (গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ও প্রাসঙ্গিক তথ্য, সংঘ প্রকাশন/ ২০০১, পৃষ্ঠা ১৬৬)।
বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদেই বিরোধী দলের সংসদ সদস্য ছিলেন তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। এর মধ্যে এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে দেশে আবারও সংসদীয় ব্যবস্থা চালু করে। ওই মেয়াদে বিরোধী ছিল আওয়ামী লীগ। এরপর ১৯৯৬ এর নির্বাচনে জয় লাভ করে আওয়ামী লীগ। বিরোধী দলে থাকে বিএনপি।
অষ্টম সংসদে আবার বিএনপি ক্ষমতায় আসে এবং আওয়ামী লীগ চলে যায় বিরোধী দলে। কিন্তু ২০০৭ সালে দেশে এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর যে নবম সংসদ নির্বাচন হয়, সেখানে আওয়ামী লীগ দুই তৃতীয়াংশ আসনে জয়লাভ করে এবং পূর্ববর্তী সরকারি দল বিএনপি পায় মাত্র ৩০টি আসন। আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় বিএনপিকে ছাড়াই এবং জাতীয় পার্টি ৩৪টি আসন নিয়ে তথাকথিত বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। কেননা তারা একই সঙ্গে সরকারেরও অংশ ছিল।
প্রশ্ন হলো, এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে সংসদ গঠনের সময়েও কি বিরোধী দল ও বিরোধী দলীয় নেতা গঠন নিয়ে সংকট তৈরি হবে? আর সেটি চিন্তা করেই কি এম সাখাওয়াত হোসেন এবারের নির্বাচনকে ‘বিরোধী দল খোঁজার নির্বাচন’বলছেন? গত নির্বাচনের সময় যে প্রশ্নটি করেছিলেন অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদও।
এবার কী হবে? জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সেখানে নৌকা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। কিন্তু অনেক আসনেই এবার চোখ রাঙাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এমনকি জাতীয় পার্টির মশিউর রহমান রাঙ্গাও স্বতন্ত্র। তিনিও চোখ রাঙাচ্ছেন তার দল জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে। কেননা তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রাঙ্গার জিতে যাওয়া অসম্ভব নয়। একইভাবে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা যদি আরও একাধিক আসনে হেরে যান এবং তাদের প্রাপ্ত আসনের সংখ্যা যদি বিশের নিচে নেমে যায়; যদি বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা অর্ধশত হয়ে যায়—তখন বিরোধী দল গঠন কি জটিলতায় পড়বে?
আইনের বিধান হচ্ছে, বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সংসদের প্রতিনিধিত্বকারী যেকোনো দলের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন অথবা স্বতন্ত্র হিসেবেই থাকতে পারেন। যেমন নবম সংসদের পুরো সময়ে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে ফজলুল আজিম আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া এবং বক্তৃতা দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারি দলের এমপিদের চেয়েও বেশি সুবিধা পেয়েছেন। অর্থাৎ স্বতন্ত্র এমপি হিসেবে থাকলেও অসুবিধা নেই। তবে এবার যেহেতু মনোনয়নবঞ্চিত আওয়ামী লীগ নেতাদেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী
হিসেবে অনেক আসনে জয়ের সম্ভাবনা আছে, ফলে তারা হয়তো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হলেও আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলেই যোগ দেবেন। কেননা তারা সরকারি দলের এমপি হিসেবেই থাকতে চাইবেন। আবার এমনও হতে পারে যে, যদি সংখ্যায় বেশি হয় তাহলে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা একটা মোর্চা তৈরি করে নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে নেতা বানিয়ে তাকে বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে ঘোষণার জন্য স্পিকারের কাছে আবেদন জানাতে পারেন।
স্মরণ করা যেতে পারে, এরশাদের আমলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (রব) উদ্যোগে ‘কম্বাইন্ড অপোজিশন পার্টিস (কপ)’ নামে সম্মিলিত বিরোধী দল গঠিত হয় এবং তারা নির্বাচনে অংশ নেয়। কিন্তু তারাও মাত্র ১৯টি আসন লাভ করে। যে কারণে এই জোট প্রথমে সংসদীয় গ্রুপের মর্যাদা লাভ করলেও বিরোধী দলের মর্যাদা পায়নি। পরে অন্যান্য দলের আরো ১৪ জন সংসদ সদস্য আ স ম আবদুর রবকে নেতা মেনে নিয়ে স্পিকারের কাছে আবেদন করেন। স্পিকার তাকে বিরোধী দলের নেতার স্বীকৃতি দেন। তবে এবার কী হবে সেটি এখনই বলা মুশকিল।
সবকিছু বিবেচনায় নিলে এবারও আগের দুটি আমলের মতো জাতীয় পার্টিরই বিরোধী দলের আসনে বসার সম্ভাবনা প্রবল এবং তা হলে জি এম কাদের হবেন বিরোধী দলীয় নেতা। কিন্তু এবারও বিরোধী দলের চেয়ারে খুব বেশি সংসদ সদস্য থাকবেন বলে মনে হয় না।
সংসদীয় গণতন্ত্রে একটি কার্যকর ও শক্তিশালী বিরোধী দল হওয়ার জন্য মোট আসনের এক তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ বাংলাদেশের বাস্তবতায় অন্তত একশ আসন থাকা উচিত বলে মনে করা হয়। কেননা তাতে সংসদ প্রাণবন্ত হয়। আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় অনেক বেশি সদস্যের কথা বলার সুযোগ তৈরি হয়। সংসদের বিরোধী দল শক্তিশালী না হলে তিন-চার মিনিটেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস হয়ে যেতে পারে—যার অনেক উদাহরণ গত তিনটি সংসদে আছে।
সরকারি দল যে বিল আনে, সাধারণত সেগুলো সংসদে উপস্থিত সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠের কণ্ঠভোটেই পাস হয়ে যায়। শুধুমাত্র সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে দুই তৃতীয়াংশের ভোট লাগে। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠের কণ্ঠভোটে পাস হয়ে গেলেও দেশের মানুষ সংশ্লিষ্ট বিলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বা ইনটেনশন এবং এর দূরবর্তী নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে নির্মোহ ও যুক্তিপূর্ণ আলোচনা শুনতে চায়। সংসদে যদি শক্তিশালী বিরোধী দলই না থাকে; বিরোধী দল যদি গৃহপালিত কিংবা সরকারি বিরোধী দলে রূপান্তরিত হয়—তাহলে সেই সংসদে আইন প্রণয়ন কিংবা অন্য যেকোনো জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আলোচনা ও কর্মকাণ্ড একতরফা হতে বাধ্য—যেটি সংসদীয় গণতন্ত্রে কাম্য নয়।
বস্তুত সরকারে এবং সংসদে ভারসাম্য রক্ষা বা চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের জন্য শক্তিশালী বিরোধী দল থাকতে হয়। একটি দেশের গণতন্ত্র কতটা শক্তিশালী হবে তা নির্ভর করে সে দেশের বিরোধী দল কতটা শক্তিশালী তার ওপর। শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকলে সরকার স্বৈরাচারী আচরণ করতে পারে, জনবিরোধী আইন করতে পারে, নাগরিকদের অসুবিধা বিবেচনায় না নিয়ে অতিরিক্ত কর আরোপের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ কারণে বিরোধী দলকে বলা হয় ‘ছায়া সরকার’ আর বিরোধী দলীয় নেতাকে বলা হয় ‘ছায়া প্রধানমন্ত্রী’। বিরোধী দলীয় নেতাকে পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়।
যদিও আমাদের দেশে রাজনীতি ও সংসদে বিরোধিতার চর্চা রাজপথকেন্দ্রিক। সংসদে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা, বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরা, জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিতর্ক করা, এসবের চেয়ে বিরোধী দলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথ গরম রাখতেই বেশি ব্যস্ত থাকে। দশম সংসদ নির্বাচনের পর বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বারবারই বলা হয়েছিল যে, তারা ‘প্রকৃত বিরোধী দল’ হিসেবে ভূমিকা রাখতে চায়। সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে চায় এবং জনগণের ভোগান্তি হয় এমন কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি তারা দেবে না।
তাত্ত্বিকভাবে জাতীয় পার্টির এই অবস্থান প্রশংসনীয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, জাতীয় পার্টি একইসঙ্গে মন্ত্রিসভায় থাকায় তাদের নৈতিক জোরও ছিল কম। যে কারণে তারা চাইলেই সরকারের বিরোধিতা করতে পারেনি।
বিরোধী দলের কাজ হলো সরকারের বিরোধিতা করা। তাদের লক্ষ্য থাকে সরকারের দুর্বলতা জনসমক্ষে তুলে ধরা। ভোটারদের মনে সরকার বিরোধী মনোভাব চাঙ্গা করা এবং শেষ পর্যন্ত সরকারি দলকে নির্বাচনে পরাজিত করে সরকার গঠন করা। বিরোধী দল সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি জাতি বা দেশের জন্য সর্বোত্তম বিকল্প নীতি কী হতে পারে তা-ও তুলে ধরে।
সরকার গঠনের পর এগুলো বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতিও বিরোধী দল প্রদান করে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলো আমাদের জাতীয় সংসদে যারা বিরোধী দল ছিল বা এখনও আছে, তাদের ভূমিকা কী? তারা বস্তুত সরকারের অংশ হিসেবেই কাজ করেছে এবং এখনও করছে। সরকারের দুর্বলতাগুলো জনসমক্ষে তুলে ধরা এবং এ বিষয়ে জনমত গঠনে তাদের দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা নেই।
বিরোধী দলের একটি প্রধান দায়িত্ব হলো সরকারকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা। অর্থাৎ সরকার রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে এবং তা করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। কিন্তু সরকারের কোনো কাজই জনগণ ও পার্লামেন্টের কাছে অস্পষ্ট ও গোপন থাকবে না। সরকারকে স্পষ্ট, জবাবদিহিমূলক আচরণ করতে বাধ্য করার জন্য বিরোধী দল সংসদে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করা তথা জনগণের কাছে সবকিছু উন্মুক্ত করার বিষয়ে সংসদের বিরোধী দল কতটুকু দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়েছে—সে প্রশ্নের উত্তর সকলের জানা।
সুতরাং টানা চতুর্থ মেয়াদে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যে দ্বাদশ সংসদ গঠিত হচ্ছে, সে বিষয়ে আপাতত সংশয়ের কোনো অবকাশ না থাকলেও একটি কার্যকর ও শক্তিশালী বিরোধী দল গঠনের স্বপ্ন যে এবারও অধরাই থেকে যাবে—তাতেও সন্দেহ কম। লিখেছেন, আমীন আল রশীদ।
আপনার মতামত জানানঃ