বিদেশে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে। কিন্তু নির্বাচনী হলফনামায় তা উল্লেখ করেননি ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। মঙ্গলবার প্রথম এই তথ্য প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশাল বাংলাদেশ টিআইবি। তবে সংস্থাটি মন্ত্রীর নাম প্রকাশ করেনি। টিআইবি’র তথ্যের সূত্র ধরেই নাম এসেছে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর। বিদেশে থাকা এই বিনিয়োগের তথ্য নির্বাচনী হলফনামায় না দেয়ার কারণে একজন প্রার্থী হিসেবে শাস্তি পেতে পারেন।
এমনকি নির্বাচিত হওয়ার পরও এমন তথ্যের ভিত্তিতে সংসদ সদস্য পদ বাতিল হতে পারে। যদিও নির্বাচন কমিশন বা দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। নির্বাচন কমিশনের আইন অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মো. মাহবুবার রহমান সরকার এ বিষয়ে বলেন, কোনো প্রার্থী তথ্য গোপন করলে এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের কিছু করার থাকে না। আপিল-শুনানির সময় কেউ অভিযোগ করলে তখন ইসি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতো।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) এর কোথাও মানা নেই যে, হলফনামায় তথ্য গোপন করলে এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশন কিছু করতে পারবেন না।
নির্বাচন কমিশন চাইলে এখনো ব্যবস্থা নিতে পারেন। তিনি বলেন, ইসি এই মুহূর্তে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর কাছে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর তথ্য চাইতে পারে। সেই তথ্য তারা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠাতে পারেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের খাতিরে নির্বাচন কমিশন অনেক কিছুই করতে পারেন। তারা নিজেরাই বলেছেন, তাদের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা রয়েছে। এই ক্ষমতা ব্যবহার করে তারা যেকোনো মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তাদের হাত অনেক লম্বা। এখনো হলফনামায় তথ্য গোপনকারীদের প্রার্থিতা বাতিলসহ যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারে। শাহজাহান ওমরও তথ্য গোপন করেছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
এমপি-মন্ত্রীদের পাচার করা অর্থের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া দেশের বাইরে কোনো অর্থ নেয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক যাচাই-বাছাই করে যতটুকু অনুমোদন করবে ততটুকুই যে কেউ নিতে পারবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির দুর্নীতি বা টাকা পাচারের প্রমাণের জন্য টিআইবি নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র নয়। তবে কেউ যদি টাকা পাচার করে সেটা প্রমাণ করবে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বিএফআইইউ যদি কারও টাকা পাচারের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে দেয় তখন ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মঙ্গলবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের হলফনামায় দেয়া তথ্য প্রকাশ করতে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে একজন মন্ত্রীর বিদেশে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকার ব্যবসা আছে বলে তথ্য প্রকাশ করে টিআইবি। তবে মন্ত্রীর নাম প্রকাশ করা হয়নি। টিআইবি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল- যদি সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ ওই তথ্যসূত্র জানতে চায় তাহলে প্রকাশ করা হবে।
প্রকাশিত তথ্যমতে, মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর মালিকানাধীন ছয়টি কোম্পানি এখনো বিদেশে সক্রিয়ভাবে আবাসন নির্মাণ (রিয়েল এস্টেট) ব্যবসা পরিচালনা করছে। সেগুলোর মূল্য ১৬.৬৪ কোটি পাউন্ড বা ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা।
টিআইবি’র সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মন্ত্রী ২০১০ সালে প্রথমে একটি কোম্পানি খোলেন, যার বর্তমান সম্পদ মূল্য ১.৭৩ কোটি পাউন্ড। এরপর ২০১৬ সালে আরেকটি কোম্পানি খোলেন, যার বর্তমান সম্পদ মূল্য ৭.৩১ কোটি পাউন্ড।
২০১৯ সালে তৃতীয় কোম্পানি খোলেন, যার বর্তমান সম্পদ মূল্য ০.৭৯ কোটি পাউন্ড। তিনি ২০২০ সালে চতুর্থ কোম্পানি চালু করেন, যার সম্পদ মূল্য ২.১৫ কোটি পাউন্ড এবং ২০২১ সালে পঞ্চম ও ষষ্ঠ কোম্পানি খোলেন, যেগুলোর বর্তমান সম্পদ মূল্য ৩.২২ কোটি পাউন্ড।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী চতুর্থ বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করছেন। তার বাবা আখতারুজ্জামান চৌধুরীর মৃত্যুর পর নবম সংসদে উপ-নির্বাচনে প্রথম এমপি হন তিনি। পরে দশম সংসদে এমপি হওয়ার পর তিনি ভূমি প্রতিমন্ত্রী হন। পরের নির্বাচনে তৃতীয় বারের মতো এমপি হয়ে তিনি একই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ দায়িত্ব পান।
আপনার মতামত জানানঃ