মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে একটি অ্যাম্বুলেন্স এবং আশ্রয়কেন্দ্রে হামলার ব্যাখ্যা দিতে বলেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানি এড়াতে ইসরায়েলকে হামাসের বিরুদ্ধে ‘নির্ভুল অভিযান’ চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন। খবর এনডিটিভির।
ইসরায়েলের স্থল বাহিনী গাজার বৃহত্তম শহর ঘেরাও করেছে। ৭ অক্টোবরের অভিযানের প্রতিশোধ নিতে হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্যে তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এই যুদ্ধে সম্প্রতি শরণার্থীদের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে ফিলিস্তিন সরকারের তথ্যানুযায়ী ১৯৫ জন নিহত হন।
ইসরায়েলের দাবি, গাজার সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির জাবালিয়ায় ওই হামলায় হামাসের দুই সেনা নেতা নিহত হয়। শরণার্থী শিবিরের নিচে ও আশপাশে হামাসের কমান্ড সেন্টার এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী অবকাঠামো ছিল। হামাস শরণার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে ইচ্ছাকৃতভাবে সেখানে এসব অবকাঠামো বানিয়েছিল।
পলিটিকোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন সরকার ইসরায়েলকে শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলার কারণ ব্যাখ্যা করতে বলেছে।
বাইডেন প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা পলিটিকোকে বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাবালিয়াতে প্রথম হামলার ব্যাখ্যা চেয়েছে, বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের ঘটনা এড়াতে ইসরায়েলকে আরও থাকার সময় ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়।’
ইসরায়েল এখন পর্যন্ত গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটি গাজায় হামাসের সেনা, অস্ত্রভান্ডার, টানেল কমপ্লেক্স, ড্রোন লঞ্চিং পোস্ট এবং কমান্ড সেন্টার হামলা করছে বলে দাবি করছে।
ইসরায়েলের মানবিক যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যানের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন আজ শনিবার জর্ডানে আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ‘মানবিক যুদ্ধবিরতিতে’ রাজি করার জন্য ব্লিঙ্কেন গতকাল ইসরায়েল সফর করেন। এতে হামাসের হাতে জিম্মি থাকা প্রায় ২৪০ জন জিম্মিকে মুক্তি এবং গাজার ত্রাণ প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন ব্লিঙ্কেন।
তবে নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত তিনি ‘অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে’ রাজি হবেন না।
এদিকে, দুদিন আগে হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তির শর্তে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত এখন বিরতি দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে এক সমাবেশে বক্তৃতায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সমাবেশ চলাকালে আইনের শিক্ষক জেসিকা রোজেনবার্গ বাইডেনের বক্তব্যের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বলেন, প্রেসিডেন্ট, আপনি ইহুদি লোকজনের দিকে খেয়াল রাখেন। একজন ইহুদি হিসেবে আমি চাই, আপনি এখনই যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।
এ সময় বাইডেন তার দাবির জবাবে বলেন, আমার মনে হয়, এখন একটি বিরতি দরকার। রোজেনবার্গ আবার বাইডেনের কথায় বাধা দিয়ে বলেন, কীসের বিরতি? জবাবে বাইডেন বলেন, এই বিরতির মানে, হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তির জন্য সময় দেওয়া দরকার। তিনি বলেন, আমি জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে এরই মধ্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। গুরুতর আহত ও বিদেশিরা যাতে রাফাহ সীমান্ত দিয়ে গাজা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে সে বিষয়ে আমি মিশরের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও আলাপ করেছি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এখনই যুদ্ধবিরতি চাই’ বলে স্লোগান দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সভাস্থল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে জেসিকা। উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর দখলদার ইসরায়েলের ওপর হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এর জবাবে ইসরায়েলের পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েলে।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা নয় হাজার ছাড়িয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে, গত ২৬ দিনে উপত্যকায় ৯ হাজার ৬১ জনকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। আহত হয়েছে আরো ৩২ হাজার মানুষ।
নিহতদের মধ্যে ২ হাজার ৩২৬ জন নারী এবং ৩ হাজার ৭৬০ শিশুও রয়েছে। আল-জাজিরার খবর।
গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে পরপর দুই দিন ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৯৫ জন নিহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন কমপক্ষে ১২০ জন।
গত মঙ্গল ও বুধবার সেখানে চালানো হামলায় অন্তত ৭৭৭ জন আহত হয়েছেন। শরণার্থী শিবিরে চালানো এ হামলাকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস। এমন ‘নির্বিচার হামলা যুদ্ধাপরাধের শামিল’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার।
এদিকে বিদেশী পাসপোর্টধারীদের গাজা থেকে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বডার্সের (এমএসএফ) জানিয়েছে, মারাত্মক আহতদের সীমান্তের ওপারে মিসরে নেয়া হচ্ছে। রাফাহ ক্রসিং পেরিয়ে গাজা ছেড়েছেন ৪০০ বিদেশী।
আপনার মতামত জানানঃ