গাজা উপত্যকায় হামাসের পতনের পর বাসিন্দাদের মিশরের সিনাইয়ে পাঠিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল। গত ১৩ অক্টোবর প্রকাশিত ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার এক নথি থেকে এ তথ্য ফাঁস হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটরের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত নথি অনুসারে, ইসরায়েল গাজার বেসামরিক নাগরিকদের প্রথমে উত্তর সিনাইয়ের অস্থায়ী আশ্রয়ে সরিয়ে নেবে। পরে স্থায়ী শহরে পাঠিয়ে দেবে।
নথিতে উল্লেখ করা প্রস্তাব অনুসারে, মিশরের ভেতরে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে বাফার জোন স্থাপন করা হবে, যেন বাসিন্দারা ইসরায়েলি সীমান্তের কাছে ঘেঁষতে না পারে।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা নথিগুলো সঠিক বলে কথা স্বীকার করেছেন। তবে, এ নথি তৈরির সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ প্রস্তাব গ্রহণ নিয়ে সরকার কোনো আলোচনা করবে না।’
নথিতে এ পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক মহল থেকে চাপ আসার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, শরণার্থীদের যুদ্ধ থেকে পালাতে সাহায্য করার উপায় হিসেবে এ প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মিশর বারবারই ফিলিস্তিনিদের নিজেদের ভূখণ্ডে আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আসছে। গতকাল রোববার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপের সময় আবারও নিজের অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল–সিসি।
এর আগে চলতি মাসে ইসরায়েলের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড্যানি আয়ালন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, গাজায় অবস্থিত ফিলিস্তিনিদের আবাস ছেড়ে মিশরের সিনাই মরুভূমিতে চলে যাওয়া উচিত। সেখানে তাঁদের জন্য অস্থায়ী শরণার্থীশিবির তৈরি করা হবে।
এদিকে, গাজা সিটির দক্ষিণ প্রান্তে আজ সোমবার ইসরায়েলি ট্যাংক ঢুকে পড়েছে। গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার জন্য যে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি আছে, সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা এএফপিকে এসব কথা বলেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গাজা সিটির দক্ষিণ প্রান্তের শহর জায়তুনে ট্যাংক দেখা গেছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, তারা সালাহেদিন সড়কপথটি বন্ধ করে দিয়েছে। ওই পথ দিয়ে যে গাড়িই যাওয়ার চেষ্টা করছে, সেটিকেই গুলি করা হচ্ছে। তবে ওই বাসিন্দা তাঁর নাম প্রকাশ করেননি।
গত শুক্রবার থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান জোরদার করেছে। ইসরায়েলের এক সেনা মুখপাত্র এএফপিকে বলেন, ‘আমরা গত ২৪ ঘণ্টায় ৬০০-এর বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছি।’
আগের দিন ৪৫০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলার কথা বলেছিল ইসরায়েল। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস। এর জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় অনবরত হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এতে গতকাল পর্যন্ত ৮ হাজার ৫ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ২০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে।
হামলা শুরুর পর বিভিন্ন সময়ে ইসরায়েল গাজা সিটিসহ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের দক্ষিণে সরে যেতে বলেছে ইসরায়েল। গত কয়েক সপ্তাহে অনেক মানুষ ওই অঞ্চলটি ছেড়ে চলে গেলেও এখনো সেখানে হাজার হাজার মানুষ অবস্থান করছেন।
আপনার মতামত জানানঃ