অক্টোবর মাসেও ডেঙ্গুর দাপট চলছে। চলতি মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ১৮০ জনে দাঁড়িয়েছে। ডেঙ্গুতে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশে এই নিয়ে ডেঙ্গুতে এবছরে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৬৯ জনে। একদিনে আরও ২ হাজার ৩৬৩ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন।
দেশে ইতিমধ্যে ডেঙ্গু রোগী মৃত্যু ও শনাক্তে পুরনো সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর চেয়ে দ্বিগুণের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে গ্রামে। মৃত্যুও বেশি গ্রামে। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬১৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীতে ৯২ হাজার ৫ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬০৯ জন।
মৃত ১ হাজার ১৬৯ জনের মধ্যে নারী ৬৬১ জন এবং পুরুষ ৫০৮ জন। মোট মৃত্যুর মধ্যে ঢাকার বাইরে মারা গেছেন ৪৩৯ জন এবং রাজধানীতে ৭৩০ জন।
ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২ হাজার ৩৬৩ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৫৩৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ৮২৬ জন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন ২ হাজার ৩৬৩ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ১৭৪ জনে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২ হাজার ৪১০ জন এবং ঢাকার বাইরে ৫ হাজার ৭৬৪ জন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬১৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ভর্তি রোগীর মধ্যে পুরুষ আক্রান্ত ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪ জন এবং নারী ৯৪ হাজার ৯৭০ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ লাখ ৩০ হাজার ২৭১ জন।
অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ১৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন, মার্চে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১১ জন এবং এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন এবং মারা গেছেন ৩৪ জন।
জুলাইতে শনাক্ত ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন এবং মারা গেছেন ২০৪ জন। আগস্টে ৭১ হাজার ৯৭৬ জন শনাক্ত এবং প্রাণহানি ৩৪২ জন। সেপ্টেম্বরে শনাক্ত রোগী ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন এবং মারা গেছেন ৩৯৬ জন।
অক্টোবরের ১৫ দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩৬ হাজার ২০৮ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে ১৮০ জন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হবে। বর্তমান রোগীর চেয়ে আরও ১০ গুণ বেশি হবে। কারণ অনেক ডেঙ্গু রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন, তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খাতায় নেই।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ
সাধারণভাবে ডেঙ্গুর লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেয়ার পর আবারও জ্বর আসতে পারে।
ডেঙ্গুর অন্যতম লক্ষণ শরীরে ব্যথা। সঙ্গে মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা হতে পারে। সঙ্গে চামড়ায় লালচে দাগ বা র্যাশ থাকতে পারে।
শরীর ঠান্ডা হচ্ছে মনে হতে পারে। ক্ষুধা কমে যাওয়া, শরীর ম্যাজম্যাজ করার লক্ষণও দেখা দিতে পারে।
সিভিয়ার ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে তীব্র পেট ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া, রক্তবমি, মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ, ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ, শ্বাসকার্য কঠিন বা দ্রুত হওয়া, শরীর ঠান্ডা অনুভব বা ঘাম হওয়া, দ্রুত নাড়ি স্পন্দন এবং ঘুম ঘুম ভাব, চেতনা হারানো।
ডেঙ্গুর শক সিনড্রোম থেকে মানবদেহে পানিশূন্যতা তৈরি হয়। সঙ্গে সঙ্গে পাল্স রেট অনেকটা বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ খুব কমে যায়। শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। শ্বাসপ্রশ্বাস খুব দ্রুত চলে। রোগী অস্থির হয়ে ওঠেন। তখন সময় নষ্ট না করে হাসপাতালে ভর্তি করানো উচিত।
ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা
ডেঙ্গু হলে ওষুধ হিসেবে শুধু প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। অনেকে না জেনে শরীরের বিভিন্ন অংশের তীব্র ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে বিপদ ঘটতে পারে বলে সতর্ক করছেন চিকিৎসকরা। কারণ, ব্যথানাশক ওষুধ শরীরে রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে, যা ডেকে আনতে পারে মৃত্যু।
ডেঙ্গু হলে চিকিৎসকরা বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। যেমন- ভাতের মাড়, স্যালাইন, ডাবের পানি, স্যুপ, ফলের রস, লেবুর পানি ইত্যাদি। তরল খাবার ৯০ শতাংশ কমায় ডেঙ্গুর তীব্রতা। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার ডাল, ডিম, মুরগির মাংস, ছোট মাছের ঝোল বেশি করে রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়।
ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেট কমে যায়। তাই প্লাটিলেট বাড়ে এমন খাবার খেতে হবে। যেমন- সাইট্রাস ফল, কাঠবাদাম, দই, সূর্যমুখী বীজ, গ্রিন টি, ক্যাপসিকাম, ব্রোকলি, পালংশাক, আদা, রসুন ও হলুদ।
পেয়ারার শরবত পান করা যেতে পারে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই পানীয়টি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে ডেঙ্গু সংক্রমণ উপশম করবে।
রক্তের প্লাটিলেট বাড়াতে নিম পাতার রস ভালো কাজ করে। এটি শ্বেত রক্তকনিকার সংখ্যাও বৃদ্ধি করে। নিম পাতার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর গুণও আছে।
আপনার মতামত জানানঃ