গাজা সীমান্তের কাছে ব্যাপক সেনা, ট্যাংক ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র জড়ো করেছে ইসরায়েল। যে কোনো সময় উপত্যকাটিতে তারা হামলা চালাতে পারে। ইহুদিবাদী ইসরায়েল বলছে, হামলার প্রতিশোধ নিতে হামাসকে পৃথিবী থেকেই নিশ্চিহ্ন করে দেবে তারা।
তবে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ সাররাম আকবরজাদেহ বলেছেন, ইসরায়েল গাজায় সেনা পাঠালে তাদেরকে চরম মূল্য দিতে হবে। স্থল হামলার মাধ্যমে হামাস-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের কার্যত কোনো সমাধান আসবে না।
মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক এ বিশেষজ্ঞ অস্ট্রেলিয়ার ডেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক-প্রফেসর হিসেবে কাজ করেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল গাজায় স্থল অভিযান চায় না। গাজা থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর ইসরায়েল গাজা থেকে দূরত্ব রাখার চেষ্টা করছিল।
তারা সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণ করেছে এবং এটি অবরুদ্ধ করেছে। তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের জন্য গাজাকে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই ব্যয়সাধ্য। গাজায় সেনা পাঠানোর অর্থ হলো বাড়ি-বাড়ি যুদ্ধ। আর এ বিষয়টির জন্য সবাইকেই— ইসরায়েলি সেনা ও সাধারণ ফিলিস্তিনিদের চরম মূল্য দিতে হবে।
বিষয়টি এমন নয় যা ইসরায়েল চায়। যদি তারা হামাসকে ধ্বংস করার লক্ষ্য ঠিক করে— তাহলে তাদের সেখানে সেনা পাঠানো ছাড়া কোনো উপায় নেই
মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক এ বিশেষজ্ঞ আরও বলেছেন, হামাস হলো ফিলিস্তিনিদের একটি প্রতিক্রিয়া, সেসব মানুষের প্রতিক্রিয়া যারা যুগ যুগ ধরে দখলদারিত্বের মধ্যে আছেন। হামাস তাদের এবং স্বাধীন ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্ব করে। সংগঠন হিসেবে হয়ত হামাসকে ধ্বংস করা যাবে। কিন্তু তাদের জায়গায় চলে আসবে আরেক গোষ্ঠী।
গাজার পরিস্থিতি
রাস্তায় শত শত প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল আর ট্রাকের ভিড়। নারী–শিশুসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পালাচ্ছেন মানুষ। অনেকে হেঁটেই পাড়ি দিচ্ছেন মাইলের পর মাইল। সঙ্গে নিয়েছেন পোষা গরু, উট, ভেড়া আর গাধা। যতটুকু সম্ভব, তা নিয়েই অনিশ্চয়তার যাত্রা শুরু করেছেন তারা।
এ চিত্র ফিলিস্তিনিদের, গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে। টানা সাত দিন ধরে নারকীয় বোমাবর্ষণের মধ্যে শুক্রবার গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের ‘নিজেদের নিরাপত্তার জন্য’ দক্ষিণে সরে যেতে বলেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে মাত্র ২৪ ঘণ্টা। এর পর থেকেই প্রাণভয়ে উত্তরাঞ্চল ছাড়তে শুরু করেছেন গাজাবাসী।
গাজার ফিলিস্তিনিদের এমন সময় এ নির্দেশনা দেওয়া হলো, যখন উপত্যকাটি ঘিরে ট্যাংকসহ ব্যাপক সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে ইসরায়েল। প্রস্তুতি চলছে স্থল অভিযানের। ইসরায়েলি বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, সামনের দিনগুলোতে গাজায় উল্লেখযোগ্য অভিযান চালাবে তারা। পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া হলে গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দারা আবার নিজ এলাকায় ফিরতে পারবেন।
তবে ইসরায়েলের এ নির্দেশনাকে ‘মিথ্যা প্রচার–প্রচারণা’ বলেছে গাজার শাসক গোষ্ঠী হামাস। গাজাবাসীকে এসব কথায় কান না দিতেও অনুরোধ করেছে তারা। হামাস নেতা বাসেম নাইম বলেছেন, ‘আমরা মাতৃভূমি ছেড়ে যাব না। সামনে দুটি পথ খোলা—দখলদারত্বকে পরাজিত করা, না হয় নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করা।’
এরই মধ্যে শুক্রবারও পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ও হামাস। ইসরায়েল বাহিনী জানিয়েছে, গত বুধবার রাতেই গাজায় ৭৫০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে তারা। এ ছাড়া প্রথম ছয় দিনে উপত্যকাটিতে ৬ হাজার বোমা ফেলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, গাজাবাসীর ওপর চালানো হামলায় সাদা ফসফরাস ব্যবহার করছে ইসরায়েল। এর ব্যবহার গাজার বেসামরিক মানুষকে গুরুতর ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে ফেলছে।
ইসরায়েলের হামলায় পানি, খাবার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসবিচ্ছিন্ন গাজায় নিহতের তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। গত শনিবার হামলা শুরুর পর থেকে উপত্যকাটিতে ১ হাজার ৫৩৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত সাড়ে ছয় হাজারের বেশি। অপরদিকে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে বিদেশি নাগরিকসহ ১ হাজার ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ৩ হাজারের বেশি। শুক্রবারও গাজা থেকে রকেট ছোড়া হয়েছে ইসরায়েলে।
আপনার মতামত জানানঃ